ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চরে বিদ্যুতের আলো

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

চরে বিদ্যুতের আলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজশাহীর পদ্মা রংপুরের তিস্তা নদীর বুকে জেগেছে চর। সংগ্রামী মানুষ সেখানে গড়ে তুলেছে বসতি। ঝড় ঝঞ্ঝা প্রকৃতিক দুর্যোগ যাদের নিত্যসঙ্গী। মাছ ধরে কিংবা ফল ফসলের আবাদ করে কোনমতে জীবন চলে। দুর্গম এই চরাঞ্চলের মানুষের জীবনে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানো দুষ্কর। ফলে আধুনিক জীবনের স্বপ্ন এদের কাছে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়। কিন্তু সরকার চরের জীবনের সেই স্বপ্নকেই সার্থক করে দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে সারাদেশ যেখানে আলোতে ভাসবে সেখানে চরের মানুষ এর ভাগ পাবে না তাই কি হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুত বিতরণ কোম্পানি নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ১২ হাজার ৬৯০ পারবারের ঘরে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে আলো জ্বেলে দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, সোমবার তারই উদ্বোধন হয়ে গেল। নেসকো ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের (সিএসআর) অর্থ ব্যয় করে প্রতিটি পরিবারকে সোলার হোস সিস্টেম স্থাপন করে দিচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের জন্য ২৩ হাজার ২২৫ টাকা করে খরচ করা হচ্ছে। সরকার দেশের সব মানুষকে বিদ্যুত সরবরাহের আওতায় আনতে চায় আমরা নেসকো এলাকায় যারা অফগ্রিড এলাকার মানুষকে এভাবে বিদ্যুত সরবরাহের আওতায় আনছি। রাজশাহীর চর-আসাড়িয়াদহ, চর আলাতুলী, চর মাজারদিয়া, চর খিদিরপুরের মানুষের মুখে এখন অন্য রকম এক প্রশান্তির হাসি। অনেকেই যা কল্পনাও করেনি তেমন সুযোগই যেন তাদের কাছে গিয়ে কেউ যেচে করে দিয়েছে। নেসকো বলছে এসব এলাকার কেউ বিদ্যুত সরবরাহের বাইরে থাকবে না। এতে চরাঞ্চলের জীবনে এক অন্যরকম পরিবর্তন আসবে। সরকার এসব চরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু রাত নামলেই এখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার সঙ্গী হয়ে আসে। কেরশিনের কুপি বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। কিন্তু বিদ্যুত থাকলে অন্য রকম এক আবহ সৃষ্টি হয়। ঘরে ঘরে টেলিভিশন চলে। মোবাইলে চার্জ হয়। রাতেও চালানো যায় শেলাই মেশিন। সবচেয়ে বড় উপকার হচ্ছে রাতে আরও একটি বেশি সময় বাচ্চারা পড়তে পারে। এসব চরে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি। আজকের এই উদ্যোগ শুধু বিদ্যুত বিভাগের অবদন নয়। এর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় বিদ্যুতকর্মী, সাধারণ মানুষ সবারই অবদান রয়েছে। বিদ্যুত যত দ্রুত যাবে তত দেশের উন্নতি হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রামে, দুর্গম চরাঞ্চলে বিদ্যুত দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। এসব এলাকার মানুষ এখন বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হবে। রাজশাহীর এই চার চরে মোট ৩৮ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এর মধ্যে ৬ হাজার ২৪০টি পরিবার রয়েছে। নেসকো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ইডকল) এর মাধ্যমে হোম সিস্টেমগুলো স্থাপন করছে। সোমবার ২৫টি বাড়িতে সৌর বিদ্যুত সরবরাহ শুরু করার মাধ্যমে প্রকল্পর উদ্বোধন করা হলো। আগামী ১৫ নবেম্বরের মধ্যে এই চার চরের সব পরিবার পাবেন বিদ্যুত সংযোগ। সংসদ সদস্য মোঃ আয়েন উদ্দিন বলেন, চর এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। চরে এই বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে দিলে তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির উন্নয়ন ঘটবে। যা মূলত দেশেরই উন্নয়ন। চরের মানুষের সঙ্গে সঙ্গে সবাই আজ খুব খুশি। এটি এই এলাকার জন্য অনেক বড় কাজ। এর মাধ্যমে চরাঞ্চলে আলোর বাতি জ্বলল। সরকার শতভাগ যে বিদ্যুত বিতরণ করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে তাতে অফগ্রিড এলাকার মানুষকে সম্পৃক্ত করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চরের প্রত্যেকটিতে সাবমেরিন ক্যাবেলের মাধ্যমে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া ব্যয় সাপেক্ষ বিষয়। কোন কোন বড় চরে সাবমেরিন ক্যাবলে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হলেও এগুলো সেই তুলনায় অনেক ছোট। সঙ্গত কারণে বিকল্প এই ব্যবস্থা। অনলাইনে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুত সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, রাজশাহীবাসীর জন্য আজ অনেক আনন্দের দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সেই লক্ষ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়ন কাজ করে যাচ্ছি। গ্রিডের বেশিরভাগ এলাকায় এখন বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু অফগ্রিড বা দুর্গম এমন কিছু এলাকা রয়েছে এটি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদেরও সেলার সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুতের আওতায় এনে আলোকিত করতে চাই প্রতিটি অঞ্চল। অনুষ্ঠানে নেসকোর চেয়ারম্যান এ কে এম হুমায়ূন কবীরের বলেন, এই ৬ হাজার সোলার হোম সিস্টেম আগামী নবেম্বরের মধ্যে হস্তান্তর করবে ইডকল। চরের মানুষের জন্য আমরা গ্রীন এনার্জির কথা চিন্তা করি। এরপর ইডকলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এভাবে ওই এলাকার সব চরের মানুষের ঘরেই আলো পৌঁছে দেয়া হবে।
×