ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধীরগতির সব যান ও চালকদের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক

রাজধানী হবে যানজটমুক্ত সচল

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

রাজধানী হবে যানজটমুক্ত সচল

মশিউর রহমান খান ॥ ধীরগতির যানবাহন ও তাদের চালকদের নিয়ন্ত্রণে আনতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এসেই কোন নাগরিক যেন রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, টালিগাড়ি বা ধীরগতির কোন যানবাহন চালাতে না পারেন তাই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া রাস্তায় যানজট কমাতে ও পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে রাজধানীকে সচল ঢাকা গড়ার মহাপরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ডিএসসিসি তার সীমানায় চলাচলকারী সকল প্রকার অযাান্ত্রিক বাহন যেমন রিক্সা, ভ্যানগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, ঘোড়ারগাড়ি, টালিগাড়িকে নিবন্ধনের আওতায় আনবে। সকল নিবন্ধন শেষ করার পর কারা কারা এ শহরে অযান্ত্রিক যান চালাবে তাদেরকেও লাইসেন্স প্রদান করা হবে। এজন্য সকল অযান্ত্রিক চালকদের প্রশিক্ষণ প্রদানেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে দীর্ঘ যুগ পর এমন বিশেষ কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নাগরিক সেবাদানকারী এ সংস্থাটি। জানা গেছে, ডিএসসিসির সীমানায় কত সংখ্যক পরিবহন চলাচলের উপযোগী রাস্তা রয়েছে বা কতজন চালক রয়েছে, মোট কতটি রিক্সা ঠেলাগাড়ি ভ্যানগাড়ি, রিক্সায় স্টিল দিয়ে তৈরি ভ্যান রয়েছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছেই নেই। এর বাইরে বর্তমানে রাজধানীতে রিক্সায় বা ভ্যানে মোটরচালিত ইঞ্জিন লাগিয়ে অবাধে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত যানবাহন। এসব যানবাহনের ফলে প্রতিদিন নানা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন নাগরিকরা। একইসঙ্গে অবৈধ তথা কোন প্রকার নিবন্ধন না থাকায় সিটি কর্পোরেশনও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নতুন পরিকল্পনায় পরিবহন পরিচালনাকারী চালক বা তাদের সহযোগীদেরও নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে। এর ফলে যে কোন ব্যক্তি কোন প্রকার অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছে করলেই ঢাকায় এসে প্রথম দিন থেকেই রিক্সা ভ্যান চালাতে দেয়া হবে না। থাকতে হবে তার কাজের লাইসেন্স। এসব লাইসেন্স হস্তান্তরযোগ্য হবে না। এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ব্যক্তিই কেবল লাইসেন্সধারী ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরাই রাজধানীর রাস্তায় এসব যানবাহন চালাতে পারবেন। ডিএসসিসি সুত্র জানায়, একইসঙ্গে কোন্ কোন্ রাস্তায় এসব গাড়ি চলবে ও কখন এসব গাড়ি সকল রাস্তায় চলবে তাও নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এলাকাভিত্তিক কোন্ কোন্ রুটে রিক্সা বা অযান্ত্রিক বাহন চলতে পারবে তা ঠিক করা থাকবে। অপরদিকে কোন প্রকার দুর্ঘটনা হলে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ব্যক্তির ঠিকানা পাওয়া অতি সহজ হবে। পরিকল্পনায় শহরের আয়তন ও চাহিদা অনুসারে প্রয়োজন বুঝে কি পরিমাণ ধীরগতির যানবাহন রাখা প্রয়োজন তাও নিরূপণ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় কতগুলো পরিবহন ও কোন কোন প্রকারের পরিবহন চলাচল উপযোগী এবং প্রয়োজন তাও নির্ধারণ করতে রাস্তার কার্যকারিতা নিরূপণ করা হবে। এর কাজ শেষ হলে এলাকাভিত্তিক রিক্সা বা সকল প্রকার পরিবহন চলাচলের জন্য নির্ধারণ করা হবে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত যানবাহন রাখা হবে না এমন পরিকল্পনা নিয়েই সংস্থাটি এগুচ্ছে বলে জানা গেছে। জরিপ মতে, রাজধানীতে প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রিক্সা ভ্যান ও অযান্ত্রিক পরিবহন চলাচল করছে। তাই রাস্তার কার্যকারিতা নিরূপণ শেষে নির্দিষ্ট সংখ্যক অযান্ত্রিক পরিবহনকে রেজিস্ট্রেশন দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সকল বাহনকেই নিয়মের আওতায় এনে সচল ঢাকা গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেই এ উদ্যোগ কার্যকর করা হবে। সচল ঢাকা গড়তে ডিএসসিসির নেয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এর মধ্যেই ধীরগতির যানবাহনকে নিয়ন্ত্রণে এনে রাজধানীতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিএসসিসি এলাকার এলাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যানসহ অযান্ত্রিক যানবাহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সংস্থাটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। একইসঙ্গে এসব ইঞ্জিনচালিত রিক্সা বা যানবাহন সড়কে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে ও সেগুলো অপসারণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রবিবার সকালে নগর ভবন প্রাঙ্গণে রিক্সা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, টালিগাড়ি ও ঘোড়ারগাড়ি নিবন্ধন/ নবায়ন/মালিকানা পরিবর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র এ ঘোষণা দেন। তবে এ ঘোষণা এখনও কার্যকর করতে পারেনি সংস্থাটি। জানা গেছে, ডিএসসিসি’র আওতাধীন এলাকায় অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন/নবায়ন/মালিকানা পরিবর্তনের জন্য কর্পোরেশন ইতোমধ্যে এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ/প্রতিষ্ঠান আজ ১৩ সেপ্টেম্বর হতে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ খ্রিস্টাব্দ তারিখ পর্যন্ত নগর ভবনের ভা-ার ও ক্রয় বিভাগ এবং আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর দফতর হতে অফিস চলাকালীন নিবন্ধন/নবায়ন/মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ১০০ টাকার (অফেরতযোগ্য) বিনিময়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। গৃহীত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে যোগ্য বিবেচিত হওয়া আবেদনগুলোর অনুকূলে নির্ধারিত ফি জমাদান সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদান করা হবে। এরপরই নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করবে সংস্থাটি। সূত্র জানায়,আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই যন্ত্রচালিত সকল অবৈধ যানবাহন আটক করার কাজ শুরু করবে সংস্থাটি। এজন্য আপাতত কোন কোন এলাকায় এসব যানবাহন বেশি চলাচল করে তা জরিপ করা হচ্ছে। অপরদিকে যারা নির্দেশ না মেনেও রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল করবেন তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
×