স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জ মসজিদে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় রিমান্ডে থাকা তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জামিনের আশ্বাস দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। রবিবার বিকেলে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা আন্দোলনে নামছে এমন খবরে তিতাসে ছুটে যান জ্বালানি সচিব এবং পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান। একই দিন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছে তিতাসের শ্রমিক সংগঠন (সিবিএ) নেতারা। অন্যদিকে গ্রেফতার ব্যক্তিদের ছাড়াতে আন্দোলনে নামতে তিতাসের প্রকৌশলীদের আহ্বান জানিয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)।
সূত্রগুলো বলছে, তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির চারজন প্রকৌশলীসহ আট কর্মকর্তা কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের এই ঘটনায় তাদের দু’দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রবিবার বিকেলে এ ঘটনার প্রতিবাদে তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মানববন্ধন করার ঘোষণা দেন। এ খবর জানার পর তিতাসে ছুটে যান জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান এবং পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান এবিএম আব্দুল ফাত্তাহ। দুপুরে তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে জ্বালানি সচিব গ্রেফতার তিতাস কর্মীদের জামিনের আশ্বাস দেন।
তিতাসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জ্বালনি সচিব বৈঠকে জানিয়েছেন গ্রেফতার প্রত্যেকের জামিনের চেষ্টা করা হচ্ছে। সোমবার নাগাদ গ্রেফতার সকলের জামিন হয়ে যাবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আইনগত জটিলতার কারণে এ বিষয়টি নিষ্পত্তিতে সময় প্রয়োজন হবে।
তিতাস সূত্র বলছে, বিকেল ৫টায় পূর্ব নির্ধারিত মানববন্ধনের জন্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভবনের সামনে নামলেও শেষ পর্যন্ত আর মানববন্ধনটি হয়নি।
এদিকে তিতাস সিবিএ এর পক্ষ থেকে রবিবার জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে রিমান্ডে থাকা কর্মীদের জামিন করানোর জন্য তিন দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। সিবিএ’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তাদের কর্মীরা সম্পূর্ণ নির্দোষ।
জানতে চাইলে তিতাস সিবিএ সভাপতি কাজিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রতিমন্ত্রীকে বলেছি আমাদের কর্মীরা সম্পূর্ণ নির্দোষ তাদের কাছে কেউ কোন সময়ই পাইপলাইন লিকেজের বিষয়ে জানায়নি। প্রতিমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, তারা নির্দোষ হলে তাদের অবশ্যই জামিন হবে। আমরা প্রতিমন্ত্রীকে জামিন করানোর জন্য তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছি।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় তিতাস কর্মকর্তা কর্মচারীদের গ্রেফতারের বিষয়টি বিধিসম্মত হয়নি। সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। রবিবার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং আইন মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব।
গত শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি মাইনুল হাসান নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আট জনকে গ্রেফতারের কথা জানান। কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এরা হলেন, তিতাসের ফতুল্লা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ সিরাজুল ইসলাম, উপব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান রাব্বি, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মোঃ মুনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মোঃ আইউব আলী, হেলপার মোঃ হানিফ মিয়া, কর্মচারী মোঃ ইসমাইল প্রধান। এরা সকলে রিমান্ডে রয়েছেন।
এদিকে তিতাস গ্যাস টিএ্যান্ডডি কোং লিমিটেডের চার প্রকৌশলীকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রকৌশলীদের একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)। একই সঙ্গে এসব প্রকৌশলীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও করা হয়েছে।
আইইবি সভাপতি নূরুল হুদা জনকণ্ঠকে বলেন, কেউ দায়ী হলে তার শাস্তি হতে পারে কিন্তু কেউ দোষ করেছে কি না তা না জেনেই শাস্তির আয়োজন করা যাবে না। বিষয়টি সারাদেশের প্রকৌশলীদের জন্য অসম্মানের। তিনি বলেন, আমরা তিতাসের প্রকৌশলীদের আন্দোলন করার অনুমতি দিয়েছি। বলেছি তোমরা এ বিষয়ে আন্দোলন কর। আইইবি’র কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহাদাৎ (শীবলু) স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় করোনা মহামারীকালের দুর্যোগ মোকাবেলায় সারাদেশে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রকৌশলীরাও সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে সুনামের সঙ্গে কার্য সম্পাদন করছেন। আর এই মহামারী করোনাভাইরাসের লকডাউনকালীন সময় থেকে বিদ্যুত, জ্বালানি সেক্টরসহ প্রতিটি সেক্টরে দেশের প্রকৌশলীরা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে দুর্যোগ মোকাবেলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। এই দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে আমাদের অনেক প্রকৌশলী মৃত্যুবরণও করেছেন। আবার অনেক প্রকৌশলী অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীনও রয়েছেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বর্তমান সরকারের ঘোষিত ভিশন-২০২১, ভিশন-২০৪১ এবং ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে প্রকৌশলীরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ভবিষ্যতেও সে ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে দেশে সুনামের সঙ্গে কর্মরত প্রকৌশলীরা বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক অত্যাচার, গ্রেফতার, রিমান্ড এমনকি হত্যাকান্ডের শিকারও হচ্ছেন। তিতাস গ্যাস টিএন্ডডি কোম্পানি লিমিটেডের চার জন প্রকৌশলীকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ব্যতীত, ফৌজদারি আসামি না হওয়া সত্ত্বেও এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করে এবং দুই দিনের রিমান্ডও মঞ্জুর করা হয়। যা সারাদেশের প্রকৌশলী সমাজে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জাননো হয় বিবৃতিতে। একই সঙ্গে এইসব প্রকৌশলীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
