ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবে দুই দেশ

বাংলাদেশের গুরুত্ব ভারতের কাছে বেড়েছে

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

বাংলাদেশের গুরুত্ব ভারতের কাছে বেড়েছে

তপন বিশ্বাস ॥ বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন করে ভাবছে ভারত। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চীন-ভারতের বৈরী সম্পর্কের মধ্যে পাকিস্তানের হুঙ্কার এবং নেপালের ভারতবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হওয়ায় ভারতের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেকাংশে বেড়েছে। এতে দ্রুত তিস্তার পানি বণ্টন, দুই দেশের বাণিজ্য সহজীকরণ, সীমান্ত হত্যা ইত্যাদি বিষয়ে সমাধানের উদ্যোগ নেবে দুই দেশ। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী চলতি সেপ্টেম্বর শেষে যোগ দেবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সব সময় ভাল। ক্রমান্বয়ে এটি আরও উন্নত হচ্ছে এবং হবে। দুই দেশের সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিজিবি ও বিএসএফ বৈঠক করেছে। আশা করি অল্পদিনেই সীমান্ত হত্যা বন্ধ হবে। দক্ষিণ এশীয়ায় ভারত ও চীন দুই পরাশক্তি। দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা অনেক পুরনো। এরই মধ্যে দুই দেশে একাধিকবার যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়ে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে সার্বিক সহযোগিতা করেছিল। এই সময় চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। এর পর চীন-ভারত সম্পর্ক কিছুটা উন্নত হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলছিল দুই দেশের সম্পর্ক। করোনার পর চীনের আগ্রাসী ভূমিকায় দু’দেশের সম্পর্ক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দাঁড় করিয়েছে। এর আগে ভারতের কিছু অংশ নিজেদের অংশে দেখিয়ে নেপাল নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে। পাশাপাশি পাকিস্তান নানা অজুহাতে যুদ্ধের উস্কানি দিচ্ছে। এমনই এক পরিস্থিতিতে ভারতের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। এদিকে চীনও চাইছে বাংলাদেশকে কাছে টানতে। এ লক্ষ্যে চীনও বাংলাদেশকে নানাবিধ সুযোগ দিচ্ছে বা দেয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে নিয়ে ভারত নতুন করে ভাবছে। বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সব কিছু নিজেদের অনুকূলে রাখতে ভারত তাদের তুখোড় কূটনীতিক বিক্রম দোরাইস্বামীকে বাংলাদেশে আনছেন। সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এসে দ্রুততম সময়ে তিনি তিস্তা প্রকল্পের জটিলতা নিরসনের উদ্যোগ নেবেনে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে টানাপোড়েন দীর্ঘদিনের। এটি সমাধান হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। এছাড়া দু’দেশের বাণিজ্য সহজীকরণের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিক্রম দোরাইস্বামী যোগদানের পর সীমান্ত হত্যা বন্ধে দুই দেশ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন দাবি করে আসছে। দফয় দফায় বৈঠক করেও এটি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া নোম্যান্সল্যান্ডের বন্ধ বাজার দ্রুত চালু করা, করোনা ভ্যাক্সিনের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সহযোগিতা প্রদানের বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করবেন নতুন হাইকমিশনার। জানা গেছে, রীভা গাঙ্গুলী দাশের স্থলাভিষিক্ত হওয়া দোরাইস্বামী এই মাসের শেষের দিকে ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে তার নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রীভা গাঙ্গুলী দাশ গত বছরের ১ মার্চ বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। এক বছরের বেশি সময় ঢাকায় হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) হিসেবে নয়াদিল্লী ফিরে যাবেন। দোরাইস্বামী ১৯৯২ সালে ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত এবং ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমেরিকা বিভাগের যুগ্ম সচিব ছিলেন।
×