ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওয়াসায় উত্তেজনা ॥ তাকসিমকে ফের এমডি নিয়োগের প্রস্তাবে ক্ষোভ

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

ওয়াসায় উত্তেজনা ॥ তাকসিমকে ফের এমডি নিয়োগের প্রস্তাবে ক্ষোভ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে তাকসিম খানকে ষষ্ঠবারের মতো নিয়োগ প্রস্তাবের পর ওয়াসায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোন সময় এমডির নিয়ন্ত্রিত গ্রুপের সঙ্গে এমডি বিরোধী গ্রুপের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। গত ১১ বছরে এমডি অন্তত ৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখান্ত করেছেন। রবিবার তাদের লোকজনসহ সিবিএ’র লোকজন ওয়াসা ভবনে মহড়াও দিয়েছে। রবিবার রাজধানীর কাওরানবাজারে অবস্থিত ওয়াসা ভবনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে খবর মিলেছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার কারণে ওয়াসার এমডি রবিবার অফিসে আসেননি। এমডির পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নেয়া দুই গ্রুপই পৃথক মিটিং করেছে। উভয়পক্ষই মারমুখী অবস্থানে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জনকণ্ঠকে বলেন, ওয়াসা বোর্ডের কোন প্রস্তাব এখনও মন্ত্রণালয়ে আসেনি। প্রস্তাব এলে আমরা সেটা পরীক্ষা- নিরীক্ষা করে মন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করব। মন্ত্রী পরে প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠাবেন। সিদ্ধান্তের মালিক একমাত্র প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে আমাদের অনেক কাজ করার রয়েছে। বোর্ডের প্রস্তাবটি হাতে পাওয়ার পর আরও ১০ থেকে ১২ দিন সময় লেগে যাবে। এটা এখনই কিছু হচ্ছে না। চূড়ান্ত কিছু জানতে হলে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তাছাড়া ওয়াসা বোর্ড একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। যদিও বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সদস্যদের আমরাই নিয়োগ দেই। নিয়োগ পাওয়ার পরে তারা স্বতন্ত্রভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে চূড়ান্ত কাজটি মন্ত্রণালয়ের করতে হয়। সিবিএ সভাপতি আনিসুজ্জামন শাহীন খান ও সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খান জনকণ্ঠকে জানিয়েছে, ওয়াসার বর্তমান এমডিকে আবার নিয়োগ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তারা ওয়াসা ভবনে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। রবিবার সারাদিন ওয়াসা ভবনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করেছে। এমডি পন্থী সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা রবিবার গোপন মিটিং করেছে। ওই মিটিং থেকে যে কোন প্রতিবাদ প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। পাল্টা ঘোষণায় বলা হয়েছে, সিবিএ’র পক্ষ থেকে কোন ধরনের ষড়যন্ত্র করা হলে ওয়াসাকে অচল করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান গত শনিবার সন্ধ্যায় অনলাইনে ওয়াসার বোর্ডসভায় এটি করিয়ে নিয়েছে। বোর্ডের ৬ সদস্য এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরও তিন বছরের জন্য ওয়াসার এমডিকে নিয়োগ দেয়ার জন্য। বাকি তিন সদস্য এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও তা হালে পানি পায়নি। তড়িঘড়ি করে নিয়োগ প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কাজ চলছে এমডির তত্ত্বাবধানে। যদি কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার জন্য দায়ী হবেন এমডি নিজেই। এদিকে যাদের বরখাস্ত করা হয়েছে, তারা সংগঠিত হয়ে এমডির বিরুদ্ধে সিবিএ’র সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। রবিবার সারাদিন ওয়াসা ভবন ছিল থমথমে। দুই গ্রুপই পৃথক বৈঠক করেছে। ওয়াসা ভবনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওয়াসার সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য বার বার ফোন করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনিসহ ওয়াসা বোর্ডের আরও ৫ সদস্য তাকসিম এ খানের পক্ষে প্রস্তাব পাস করেন। বাকি তিন সদস্যের বিরোধিতার বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়। সভায় তাকসিম এ খানসহ ১১ জন অংশ নিয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থী বোর্ড সভায় থাকতে পারেন না। এরপরও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহুল আলোচিত-সমালোচিত তাকসিম এ খান বোর্ড সভায় ছিলেন। বোর্ডের এক সদস্য বলেন, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে তাকসিম এ খানের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেখান থেকে প্রস্তাবের সারাংশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর চার দফায় তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ১৪ অক্টোবর তার পঞ্চমবারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগে গত বৃহস্পতিবারের এক নোটিসে শনিবার জুমে বিশেষ বোর্ড সভার আয়োজন করা হয়। সভার একমাত্র আলোচ্য বিষয় ছিল তাকসিম এ খানকে আরও তিন বছরের জন্য নিয়োগ দিতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো।
×