ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আবারও রফতানি বন্ধ করল ভারত ২০ হাজার মেট্রিক টন আমদানি করবে এস আলম গ্রুপ ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার

অনলাইনে ৩৬ টাকা দরে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

অনলাইনে ৩৬ টাকা দরে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পেঁয়াজের দরের উর্ধগতির মধ্যে মধ্যবিত্ত মানুষের কথা চিন্তা করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান টিসিবির আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়েছে। রবিবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ‘ঘরে বসে স্বস্তির পেঁয়াজ’ নামে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির এ কর্মসূচী উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। প্রাথমিকভাবে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা আটটি অনলাইন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টিসিবির সাশ্রয়ী মূল্যের পেঁয়াজ কিনতে পারবেন। এদিকে শুরু হওয়ার একদিনের মাথায় বাংলাদেশে আবারও পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল ভারত। এছাড়া সঙ্কটকালে ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগ্রুপ এস আলম। তুরস্ক, মিসর ও নেদারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ থেকে এ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। অন্যদিকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পেঁয়াজের অনুৎপাদনকালীন সময় হিসেবে পরিচিত ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজের ওপর আরোপিত ওই আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করল সরকার। জানা গেছে, ভারত রফতানি বন্ধ করায় গত বছরের মতো এবারও লাগামহীন হয়ে উঠেছে দেশে পেঁয়াজের বাজার। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। গত শুক্রবার নাগাদ খুচরায় ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা আর দেশী ক্রস জাতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে টিসিবি গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খোলা বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। সেখানে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। টিসিবি পেঁয়াজ কিনতে ভিড় থাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষাও করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এমন প্রেক্ষাপটে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের অনলাইনে পেঁয়াজ পেতে এই কর্মসূচী নিয়েছে সরকার। তবে একজন ক্রেতা সপ্তাহে একবারই সর্বোচ্চ তিন কেজি পেঁয়াজের অর্ডার দিতে পারবেন, প্রতিটি অর্ডারের ডেলিভারি মূল্য ধরা হয়েছে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। সে হিসেবে তিন কেজি পেঁয়াজ বাসা পর্যন্ত আসতে ক্রেতার খরচ দাঁড়াবে ১৩৮ টাকা। এর মধ্যে রবিবার বিকেল থেকে চালডাল, স্বপ্ন, সিন্দাবাদ, সবজিবাজার ও যাচাই- নামে পাঁচটি ই-কমার্স সাইটের অনলাইনে অর্ডার শুরু করেছে। আজ সোমবার থেকে বিডিসোল ও একশপ ও আরও একটি ই-কমার্স সাইট যুক্ত হওয়ার কথা। অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রির কর্মসূচী উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, টিসিবি ৩০০ থেকে ৫০০ ট্রাক দিয়ে বিক্রি করতে পারে কিন্তু বড় পরিসরে সাশ্রয়ী মূল্যে পেঁয়াজ সরবরাহের জন্য অনলাইনে ই-ক্যাবের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রথমে হয়ত কিছু কিছু সমস্যা হতে পারে তবে সামনের দিনগুলোতে আরও সহজ হবে। ধীরে ধীরে আরও বড় পরিসরে করা হবে। ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন জানান, আপাতত ঢাকা ও চট্টগ্রামে অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি সীমাবদ্ধ থাকছে। বর্তমানে এক অর্ডারে সর্বোচ্চ তিন কেজি পেঁয়াজ দেয়া হলেও ভবিষ্যতে তা বাড়িয়ে ৫ কেজি করা হবে। তিনি বলেন, একজন ক্রেতা এক সপ্তাহে একবার অর্ডার দিতে পারবে, মোবাইল নম্বর ও ঠিকানা দিয়ে যাচাই করা হবে, যেন একই ক্রেতা একাধিকবার অর্ডার দিতে না পারে। গুদামঘর, ডেলিভারি ক্যাপাসিটি, ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ই-ক্যাবের সুপারিশ বিবেচনায় টিসিবির ডিলারশিপ দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি পরিবেশক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আপাতত দৈনিক আধা টন হিসেবে তিনদিন পর পর টিসিবি থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করতে পারবে। অনলাইনে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ বিক্রি প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা বাড়তে পারে। পুরো প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, টিসিবি ও ই-ক্যাব একটি অভিন্ন বিধিমালা বা এসওপি প্রণয়ন করেছে, যা মেনে চলতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বাধ্য থাকবে। বাণিজ্য সচিব মোঃ জাফর উদ্দীন, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আরিফুল হাসান, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমালসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা বক্তব্য অনুষ্ঠানে দেন। আবারও পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল ভারত ॥ শুরু হওয়ার একদিনের মাথায় বাংলাদেশে আবারও পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল ভারত। পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার ভারতে আটকেপড়া পেঁয়াজ রফতানি শুরু করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশে ঢোকার পথে পেঁয়াজ নিয়ে আটকে থাকা প্রায় আড়াই শ’ ট্রাকের মধ্যে শনিবার এই বন্দর দিয়ে মাত্র ১১টি ট্রাক প্রবেশ করে। কিন্তু রবিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারও পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। রবিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোন পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করেনি। নতুন করে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানির সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে শনিবার আমদানি হওয়ায় বর্তমানে কেজিতে ১০ টাকা কমে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা আবুল কাসেম ও রনজিত পাল বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার কারণে গত কয়েকদিন ধরেই পেঁয়াজের বাজার বেশ চড়া। মাঝেমাঝে পেঁয়াজ আমদানির খবরে কিছুটা কমলেও, আমদানি না হওয়ার কারণে আবারও দাম বেড়ে যায়। তবে গত শনিবার বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে, বন্দরের আড়তগুলোতে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। শনিবার প্রকারভেদে আড়তগুলোতে পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও রবিবার তা কমে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আরও কিছু খারাপ পেঁয়াজ রয়েছে, যেগুলো ১০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’ হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন-উর রশীদ বলেন, ‘ভারত সরকার গত সোমবার হঠাৎ করে কোন কিছু না জানিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। শুক্রবার এক নির্দেশনায় তারা জানায়, টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো তারা রফতানি করবে। সেই মোতাবেক অনুমতি দেয়ায় শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ১১টি ট্রাকে ২শ’ ৪৬ টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যে ১১ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে, তার অধিকাংশ ইতোমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে পানি ঝরছে। এ কারণে আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ নিয়ে এসেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘এখনও দুইশ’র বেশি পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এছাড়া যে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমাদের এলসি দেয়া রয়েছে, সে বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এগুলোর বিষয়ে তারা কী করবে, তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। কারণ শুধু গত রবিবারের টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজ রফতানির জন্য অনুমতি দিয়েছিল ভারত। কিন্তু নতুন করে কোন নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ভারতীয় কাস্টম বন্দর দিয়ে কোন পেঁয়াজ রফতানি করতে দেবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’ ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করছে এস আলম গ্রুপ ॥ সঙ্কটকালে ২০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগ্রুপ এস আলম। তুরস্ক, মিসর ও নেদারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ থেকে এ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নয়, সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার ও দেশের চাহিদা মেটাতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানটি। এস আলম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কাজী সালাহউদ্দিন আহম্মদ জানান, আমরা বিভিন্ন দেশ থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছি। সে প্রক্রিয়ায় প্রথম ধাপে আসবে ২০ হাজার টন পেঁয়াজ। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এ পেঁয়াজ আমদানি হবে। সঙ্কট সামাল দিতে দ্রুততার সঙ্গে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। তিনি জানান, প্রয়োজনে আকাশ পথে কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আনা হবে বলে জানিয়েছেন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। বিমান ভাড়া জাহাজের চেয়ে অন্তত ছয়গুণ বেশি হলেও প্রয়োজনের তাগিদে সে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্রুততার সঙ্গে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ এনে সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারকে সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু আমদানিই নয়, দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ পেঁয়াজ বিতরণেও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে চান তারা। এখানে উল্লেখ্য, পেঁয়াজ ছাড়াও চিনি, তেল, গমসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের সঙ্কট দেখা দিলেও এসআলম গ্রুপ একই উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার ॥ সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পেঁয়াজের অনুৎপাদনকালীন সময় হিসেবে পরিচিত ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজের ওপর আরোপিত ওই আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করল সরকার। দেশীয় পেঁয়াজ চাষীদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ প্রদান এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাসের লক্ষ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫% আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়। বর্তমানে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার পেঁয়াজের অনুৎপাদনকালীন সময় হিসেবে পরিচিত ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত পেঁয়াজের ওপর আরোপিত ৫% আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পেঁয়াজ আংশিক আমদানিনির্ভর একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। নিকট অতীতে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়েছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই সঙ্কট কঠিন আকার ধারণ করে। পেঁয়াজের মূল্য সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি নিষিদ্ধের কারণে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য উর্ধমুখী। এমন পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নিল সরকার। এর আগে, গত বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, পেঁয়াজ আমদানির ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
×