ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাজারো শিক্ষার আবাসস্থল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাজারো শিক্ষার আবাসস্থল বিশ্ববিদ্যালয়

অসংখ্য শিক্ষার মিশ্রণ হচ্ছে মানবজীবন। সে শিক্ষা হোক পুঁথিগত কিংবা বাস্তবিক। বলা হয়ে থাকে ‘মানুষ দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ করে।’ ফলে মানুষ যে কোন বয়সেই শিক্ষা অর্জন করতে পারে। তবে আমাদের সমাজে পুঁথিগত বিদ্যাকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বেশি। তাই সে কিছু বুঝতে পারুক আর নাই পারুক তাকে এই বিদ্যাকেই গলাধঃকরণ করতে হয়। তবে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা একটু ভিন্ন ধরনের। এখানে উন্মুক্তভাবে জ্ঞান লাভ এবং জ্ঞান চর্চা করা যায়। বিভিন্নভাবে জ্ঞান দান করে তাকে বিশ^মানের করে তোলা হয়। আর তাই অন্যান্য শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা একটু ভিন্ন প্রকৃতির, ভিন্ন ধাঁচের। তবে এ কথা সত্য যে, বিশ^বিদ্যালয়ে এসেই একজন নবীন কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। সেখানকার আলো-বাতাস গায়ে লাগাতে লাগাতে সে বছর পেরিয়ে ফেলে। তবুও যেন স্কুল-কলেজের ঘোর কাটাতে পারে না। তারা মনে করে স্কুল কিংবা কলেজে যেভাবে বিদ্যা অর্জন করে এসেছে তেমনি এখানেও তাই করে যাবে। কিন্তু এতে বিপত্তি যে তাদের নিজেরই বেশি; তারা ঢের বুঝতেও পারে না। এখানকার শিক্ষা যে শুধু পুঁথিগত কিংবা ক্লাসেই সীমাবদ্ধ নয় এ কথা তারা অনেক পরে বুঝতে পারে। আর এজন্যই সেখানে রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী যারা নবীন শিক্ষার্থীদের তাদের ছায়াতলে সাদরে আমন্ত্রণ জানায় এবং তাদের বিভিন্ন কাজে উদ্বুদ্ধ করে। আর সেটি হতে পারেÑ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী, ক্যারিয়ার কিংবা অন্য যে কোন বিষয়ের সংগঠনের শিক্ষার্থীরা। এতে ওই শিক্ষার্থী অন্যসব শিক্ষার্থী থেকে বেশি লাভবান হয়ে থাকে। তার উন্মুক্ত চিন্তা-ভাবনা, মেধা-শক্তি দিয়ে সে নিজেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ফলে বিশ^বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসে এক একজন রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব, গবেষক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিকসহ অজস্র ব্যক্তিবর্গ। তাই তারা দেশের সম্পদরূপে পরিগণিত হয়। একইসঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ের সুনাম সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়ে। আর তিনি যে সংগঠন থেকে হাতে-কলমে শিক্ষা নিয়েছেন সে সংগঠনও জগত বিখ্যাত হয়। বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার বদৌলতে আমার অনেক কিছু দেখা কিংবা শেখার সৌভাগ্য হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীকে দেখেছি যারা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ার কারণেই জীবনকে রঙিনভাবে সাজাতে পেরেছে। জীবনের গতিকে পরিবর্তন করেছে। এমনকি তারা যা চেয়েছিল তার থেকেও ঢের বেশি কিছু করতে কিংবা হতে পেরেছে। যা বিশ^বিদ্যালয়ে না পড়া শিক্ষার্থীরা সে কথা ভাবতেও পারে না। যা একমাত্র উন্মুক্ত ধ্যান-ধারণারই ফল। এখানে চিন্তা করা যায় আকাশছোঁয়া। জ্ঞান নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা যায়। আর সেটি একমাত্র বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সম্ভব। ফলে বিশ^বিদ্যালয়ই হচ্ছে তার এই সফলতার ভাগিদার। ক্যাম্পাসে এমন অসংখ্য শিক্ষার্থীকে দেখেছি যারা পুঁথিগতবিদ্যার পাশাপাশি অন্যান্য বিদ্যা অর্জন করায় আজ তারা সমাজের চোখে সম্মানের পাত্র, একজন আদর্শ মানুষ। এমনই একজন এম এ সাঈদ শুভ। যিনি রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি বিশ^বিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে কাজ করেছেন। সেখানে তিনি যোগ্যতাবলে শীর্ষ পদগুলো দখল নিয়েছিলেন। এমনকি নিজ বিভাগের আইনবিষয়ক ‘রুয়ালফ’ নামক একটি সংগঠনেরও শীর্ষ পদ অলঙ্কৃত করতে পেরেছিলেন। ফলস্বরূপ তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন অত্যন্ত শক্তভাবে। নিজের ক্যারিয়ারকে উন্নত করতে তাঁর একটুও বেগ পেতে হয়নি। তেমনি দেখেছি সুজন নাজির নামে এক বড় ভাইকে। যিনি বিশ^বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনিও একইসঙ্গে বেশ কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যার মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি ও ‘অনুশীলন নাট্যদল’ উল্লেখযোগ্য। তিনি নিজের পুঁথিগতবিদ্যাকে পাকাপোক্ত করার জন্য মঞ্চনাটক করতেন ঠিকই একই সঙ্গে সাংবাদিকতা করার দরুন তিনি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সকলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক তৈরি করতে পেরেছিলেন। যার ফলে তিনিও তাঁর লক্ষ্যকে পূরণ করতে ব্যর্থ হননি। এসব শিক্ষার্থী ছাড়াও বিশ^বিদ্যালয়ের আরও বিভিন্ন পরিচিতজনদের দেখেছি- যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকে- দুঃখী মানুষদের একটু সুখের অস্তিত্ব খুঁজে দেয়ার আশায়। যারা বিশ^বিদ্যালয়ের সারাটা জীবন নিঃস্বার্থভাবে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এসব গরিব মানুষদের জন্য তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেছে। কখনও খাদ্য দিয়ে, কখনও পোশাক দিয়ে, কখনও বা তাদের ছোট ছোট সন্তানদের বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দিয়ে। আবার কেউ দিন-রাত তটস্থ থাকে- কখন কোন অসুস্থ মানুষ রক্তের জন্য তাকে ফোন করবে এই ভেবে। সে যত ব্যস্তই থাকুক না কেন আগে রক্ত সংগ্রহ করে তারপর তার বাকি কাজ করতে যাবে। এমন কাজ শুধু সংগঠনপ্রেমী মানুষদেরই দেখিনি বরং অনেক বন্ধুদের দেখেছি যারা কোন ধরনের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয় কিন্তু তার কোন বন্ধু-বান্ধব অসুস্থ হলে কিংবা কোন ধরনের সাহায্যের প্রয়োজন হলেই ছুটে আসে। তাদের অসুস্থ বন্ধু বা বান্ধবীর পাশে সারারাত সেবা করতেও দেখেছি। যার মধ্যে আলিউল আযীম এক অন্যতম বন্ধুত্বের পরিচয় দিয়েছে। যেখানেই কোন বিপদ বা কোন সাহায্যের প্রয়োজন সেখানেই তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে। কখনও দেখেছি- কোন বন্ধু বা বন্ধুর কোন আত্মীয় মারাত্মক অসুস্থ কিংবা চিকিৎসার জন্য কয়েক লাখ টাকার প্রয়োজন। পরিবার অর্থ সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে; তাতেও দেখেছি কয়েকজন কাছের বন্ধুকে নিয়ে সে কয়েকদিন ধরে প্রতিটা শিক্ষার্থীর কাছে গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে। পরে ওই বন্ধু/বান্ধবীর পরিবারকে তা হস্তান্তর করে থাকে। যা সেই পরিবারের জন্য এক অসামান্য আশীর্বাদরূপে বিবেচিত হয়। শুধু এটিই নয়, যে কোন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হলেই তার ডাক পড়ে। ফলে সেখানেও তার অসামান্য অবদানের কথা সকালের কাছে প্রস্ফুটিত হয়। এছাড়াও বন্ধুদের সঙ্গে গভীর মেলবন্ধন তা কেবল বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই বেশি দেখা মেলে। সেখানে বন্ধু ছাড়া পরিবারের কোন সদস্য উপস্থিত থাকে না বলেই এমন মেলবন্ধনের সুযোগ ঘটে। দীর্ঘ পাঁচ কিংবা সাত বছর সেখানে থাকতে হয় বলে বন্ধু, বন্ধুর জন্য কি-না করে থাকে। অর্থ সাহায্য থেকে শুরু করে ভাল পরামর্শ কিংবা মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক স্থাপনের যে শিক্ষা তা কেবল একজন ভাল বন্ধুই দিতে পারে। ফলে একজন ভাল বন্ধু কিংবা ভাল সংগঠনের শিক্ষা কখনোই অবহেলার মতো নয়। এমন অসংখ্য শিক্ষার্থীকে স্বচক্ষে দেখেছি যারা শুধু পুঁথিগতবিদ্যাকে পুঁজি করেই ক্ষান্ত থাকেনি। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করে নিজের যোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। নিজেকে বলিষ্ঠরূপে, আদর্শ ও একজন যোগ্য মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। পরিবারের ও দেশের মানুষের জন্য সম্পদরূপে বিবেচিত হয়েছেন। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর উচিত বিশ^বিদ্যালয়ে প্রবেশের পর থেকে শুধু পুঁথিগতবিদ্যাকে আশ্রিত করে শিক্ষা জীবন সমাপ্ত না করা। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন কিংবা ক্যারিয়ার বিষয়ক ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিংবা ভাল বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে নিজেকে একজন বিশ^মানের করে তৈরি করা। তাহলেই প্রতিটা শিক্ষার্থীর মাধ্যমে একইসঙ্গে বিশ^বিদ্যালয় ও দেশ সারা বিশে^র মানুষের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হবে। দেশ যাবে উন্নতির শীর্ষ বিন্দুতে
×