ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল বাংলাদেশে এ কোন্্ বিইআরসি

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

ডিজিটাল বাংলাদেশে এ কোন্্ বিইআরসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অপারেটরের কাছ থেকে চড়া লাইসেন্স ফি নিলেও ফ্রি জুমেই তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বিকেল সাড়ে তিনটায় এই বৈঠক শুরু হয়ে ৬টা ৬ মিনিটে শেষ হয়। বৈঠকের মধ্যে চারবার জুম বৈঠকের পুনঃ আইডি তৈরি করে অংশ গ্রহণকারীদের সংযুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিইআরসি। রাষ্ট্রীয় এই সংস্থার কৃপণতা দেখে এলপিজি ব্যবসায়ীদের সংগঠনের তরফ থেকে তাদের জুমের একটি লিঙ্ক পাঠিয়ে দিলেও গ্রহণ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে ১৫৬ মিনিটের এই আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনবার আলোচনা থামিয়ে বিইআরসি মিটিং এর নতুন আইডি সৃষ্টি করেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, বছরে একটি এলপিজির বিপণন কোম্পানির কাছ থেকে বিইআরসি ৫৬ লাখ টাকা লাইসেন্স ফি নিয়ে থাকে। কিন্তু ১৫ ডলার বা এক হাজার ৩৫০ টাকা হলেই জুম মিটিং এর লিঙ্ক কেনা যায়। এ ধরনের একটি জুম লিঙ্কে ১০০ জন যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ সংযুক্ত থাকা যায়। এর চেয়ে বেশি অর্থ হলে আরও বেশি লোক সংযুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু সামান্য এই অর্থ খরচ না করে বারবার বৈঠকের আইডি পরিবর্তন করে অংশগ্রহণকারীদের সংযুক্ত হতে অনুরোধ করেছে বিইআরসি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের ইজ্জত ডুবিয়েছে বিইআরসি! সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাইসেন্স ফি ছাড়াও নানা ধরনের ফি বাবদ অর্থ আদায় করলেও বিইআরসি কাউকে কোন ধরনের অর্থ দিতে রাজি নয় এটি প্রমাণ করতেই এ ধরনের উদ্যোগ কি না কে জানে! করোনার কারণে সারাবিশ^ই এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কাজ সারছে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। সরকারের সব মন্ত্রণালয়, সংস্থা ছাড়াও ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানও পয়সা দিয়ে জুম বা অন্য কোন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে লিঙ্ক কিনে বৈঠক করছে। কিন্তু একেবারে ফ্রি বা বিনা পয়সায় বৈঠক করতে গেলেই পড়তে হয় বিপত্তিতে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফ্রি সংযোগটি কেটে যায়। তখন পুনরায় নিবন্ধন করতে হয়। বিকেল সাড়ে তিনটায় বৈঠকটি শুরু হয়ে ৪টা ৭ মিনিটে অংশগ্রহণকারীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন হুট করে কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল তা নিয়ে কেউ কেউ ফোনে কথাও বলেন। এত বড় একটি প্রতিষ্ঠিত ফ্রি জুমে বৈঠক করছে বিষয়টি শুরুতেই সকলে বিশ^াস করতে চায়নি। কিন্তু মিটিংটি আবার শুরু হলেই এর জট নিজেই ভেঙ্গে দেয় বিইআরসি। তারা জানায়, সত্যিই তারা একটি ফ্রি জুম লিঙ্কে বৈঠকটির আয়োজন করেছে। এ পর্যায়ে আবার বৈঠক শুরু হলে এলপিজি ব্যবসায়ী নেতা ওমেরা এলপিজির কর্ণধার আজম জে চৌধুরী বলেন, বিইআরসি একটি ফ্রি জুমে বৈঠকের আয়োজন করেছে। এটি নির্দিষ্ট সময় পরপর কেটে যায়। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে আইডি তৈরি করে পাঠিয়েছি এটা কেটে গেলে ওটাতে আপনারা সকলে যুক্ত হতে পারেন। এভাবে বৈঠক চলার মধ্যে ৪টা ৫ মিনিটে এসে বিইআরসির উপপরিচালক কামরুজ্জামান সকলকে অনুরোধ করে বলেন, আমাদের লিঙ্কটি দুই মিনিটের মধ্যে কেটে যাবে। তাই আমরা আবার দুই মিনিট পর ফেরত আসছি। ধৈর্য ধরে সকলকে দুই মিনিট অপেক্ষা করে সংযুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। একইভাবে অনুষ্ঠানটি সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে শেষ হওয়ার আগে তিনি ৪টা ৫০মিনিট ৫টা ৩০ মিনিটে আরও দুই দফা এমন আহ্বান জানান। বাংলাদেশ পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট। জিডিপি কয়েক বছরের মধ্যেই আট ভাগের ওপরে সেই দেশে একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আলোচনা অনুষ্ঠানটি ফ্রি জুম লিঙ্কে কেন আয়োজন করতে হলো এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের মতামত জানার জন্য ফোন করেও পাওয়া যায়নি। বিইআরসির এই বৈঠকে অংশ নেয়া অধ্যাপক শামসুল আলমের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে বলেন, তারা যা আয় করে তার প্রায় সবটাই অব্যয়িত রয়ে যায়। তাদের কাছে অনেক টাকা জমে আছে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। কারও কোন বিবেচনাও বোধ না থাকায় এমনটি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বৈঠকে দেশে এলপিজির দাম নির্ধারণে একটি পদ্ধতির কথা তুলে ধরা হয়েছে বিইআরসির পক্ষ থেকে। তবে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা তাদের অংশগ্রহণ ছাড়াই বিইআরসির এ ধরনের প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে। এই বিরোধিতার মধ্য বিইআরসির সদস্য গ্যাস মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমাদের এই কমিটি মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে না। আমরা শুধু সুপারিশ করতে পারব। মূল প্রবন্ধে বিইআরসির উপপরিচারক কামরুজ্জামান বলেন, এলপিজির রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের টন প্রতি পরিবহন ব্যয় ভারতের চেয়ে দ্বিগুণ। বলা হয় মংলা বন্দরের হাড়বারিয়া এলাকায় ৩০ হাজার টন এলপিজির জাহাজ আনা সম্ভব। এটি করা সম্ভব হলেও দেশে এলপিজির পরিবহন ব্যয় টনপ্রতি ৮০ ডলারে নামিয়ে আনা সম্ভব। মূল প্রবন্ধে বিইআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের হলদিয়া বন্দরে টনপ্রতি এলপিজি আমদানি ব্যয় ৬০ ডলার অন্যদিকে বাংলাদেশে যা সর্বোচ্চ ১৩০ ডলার। ভারতের কলকাতায় এলপিজির দর কেজি প্রতি ৫০ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশে এই দাম স্থান ভেদে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা। তবে ভারত সরকারের এলপিজিকে ব্যাপক ভর্তুকির কথা এই প্রবন্ধে এড়িয়ে যান তিনি। আজম জে চৌধুরী বেসরকারী খাতে কেউ এলপিজির ব্যবসা করতে চাইলে পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিপিসিকে মার্কেটিং ফি দিতে হয়। পাঁচ লাখ টাকা করে বিপিসিতে বছরে দিতে হয়। আবার এখন বিইআরসি চিঠি দিয়ে বলছে তারা দাম ঠিক করতে চায়। যেহেতু দুই পক্ষই আমাদের কাছ থেকে অর্থ নিচ্ছে তাই আমরা ঠিক জানি না বিইআরসি না বিপিসি কে রেগুলেটর। তিনি বলেন, দাম নির্ধারণ করতে গিয়ে বিইআরসি যে কমিটি করেছে সেখানে কোন ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি রাখা হয়নি। তাহলে আমাদের আর প্রয়োজন কি তারাই দাম ঠিক করে দিয়ে দিক। বৈঠকে বিইআরসির কর্মকর্তারা ছাড়াও ভোক্তা প্রতিনিধি এবং শিক্ষক ও সাংবাদিকরা বক্তব্য রাখেন।
×