স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। শনিবার রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ আবদুল আজিজ (৪০) ও ফরিদ মিয়া (৫৫) মারা যান। এদিকে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিতাস গ্যাস কোম্পানির সেই আট কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ। শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় সিআইডির নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির ডিআইজি মঈনুল হাসান। এদিকে বিকেলে গ্রেফতারকৃত তিতাস গ্যাস কোম্পানির আট কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে জিজ্ঞাবাসাবাদের জন্য আদালত দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জের কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মোঃ আসাদুজ্জামান।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মোঃ বাচ্চু মিয়া জানান, ফতুল্লার পশ্চিম তল্লার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ আবদুল আজিজ ও ফরিদ মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার মারা যান। আব্দুল আজিজের শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। আব্দুল আজিজ সকালে ও দুপুরে ফরিদ মিয়া শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চিকিৎসাধীন দগ্ধ আরও তিনজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে তিনি জানান।
এদিকে মসজিদের বিস্ফোরণের একদিন পর ৫ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানায় এসআই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছেন সিআইডি পুলিশ। শনিবার দুপুরে সিআইডির নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি মঈনুল হাসান তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গ্রেফতারের কথা জানান। গ্র্রেফতারকৃতরা হলেন নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লা জোনের তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এসএম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, ফতুল্লা জোনের সিনিয়র সুপারভাইজার মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মোঃ আইউব আলী, সাহায্যকারী হানিফ মিয়া ও কর্মী ইসমাইল প্রধান।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ডিআইজি মঈনুল হাসান গণমাধ্যকে বলেন, তিতাসের বরখাস্তকৃত আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্য কারও অবহেলার সম্পৃক্ততা পেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি আরও বলেন, মসজিদের বিস্ফোরণের ঘটনায় তিতাস গ্যাস ও বিদ্যুতের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং মসজিদ কমিটি কোন অবহেলা রয়েছে কিনা এ বিষয়গুলোও তদন্ত করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক মোঃ আসাদুজ্জামান জানান, শনিবার বিকেলে পুলিশ গ্রেফতারকৃত তিতাস গ্যাসের আট কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার আলমের আদালতে পাঠায়। দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত প্রত্যেক আসামিকে দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাত পৌনে নয়টায় এশার নামাজের সময় ফতুল্লার বাইতুস সালাত মসজিদে বিস্ফোরণে ৩৮ জন দগ্ধ হয়। এদের মধ্যে ৩৭ জন ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়। এখনও শেখ হাসিনা বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দগ্ধ আরো তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একজন ঢাকায় চিকিৎসা নিয়ে বাসায় রয়েছেন।
