ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে ফের বিএসএফের প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ২৩:০১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে ফের বিএসএফের প্রতিশ্রুতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হতাহত করা বা মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। শনিবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫০তম সীমান্ত সম্মেলন শেষে যৌথ বিবৃতিতে এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, একইসঙ্গে বিজিবি ডিজি সম্প্রতি ভারতের মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের (পাগল) অনুপ্রবেশ বা জোরপূর্বক পুশ-ইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিবাদ জানান। পরে যৌথ ঘোষণাপত্রে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের জাতীয়তা যাচাই করতে এবং একে অপরের সহযোগিতায় তাদের হস্তান্তর ও গ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা বলা হয়। বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল মোঃ সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল সম্মেলনে অংশ নেন। বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের প্রতিনিধিসহ ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল ডিজি পর্যায়ের ৫০তম সীমান্ত সম্মেলন অংশ নেন। এ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে বিজিবির ডিজি উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও চমৎকার সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধির কথা বলেন। বিএসএফ ডিজি আন্তরিক আতিথেয়তার জন্য বিজিবির ডিজিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিজিবি ও বিএসএফ-এর যৌথ কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) কার্যকরভাবে বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেন। সীমান্ত সম্মেলনগুলোতে বরাবরই বিএসএফ প্রতিশ্রুতি দেয় যে, সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা বা গুলি করা হবে না। এর আগে ননলিথাল (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্রের ব্যবহারেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিএসএফ। কিন্তু বরাবরই তারা প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ করে সীমান্ত হত্যা অব্যাহত রেখেছে। এই অবস্থায় শনিবারের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, সীমান্তে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, আহত বা মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকায় যৌথ টহল বাড়ানো হবে। জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী আরও বেগবান এবং প্রয়োজন মাফিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচী নিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে উভয়পক্ষ সম্মত হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে যৌথ টহল পরিচালনাসহ সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের মাঝে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সীমান্তে আক্রমণ বা হামলার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে। সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্যে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সিবিএমপি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। এতে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তাৎক্ষণিক ও দরকারি তথ্য বিশেষ করে অধিকতর তদন্তের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র চোরাকারবারিদের ডিজিটাল ফটোগ্রাফ উভয় বাহিনীর মধ্যে বিনিময় করতে দুপক্ষ সম্মত হয়েছে। তারা সীমান্ত অপরাধ দমন এবং আন্তর্জাতিক সীমানার অলঙ্ঘনীয়তা বজায় রাখতে সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। যৌথ ঘোষণা পত্রে আরও বলা হয়, মানব পাচার ও অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে উভয়পক্ষ সম্মত হন। উভয় ডিজি যার যার দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী মানব পাচারে ক্ষতিগ্রস্তদের যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার ও পুনর্বাসনের সুবিধার্থে সহায়তা করতেও সম্মত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক সীমানার কাঁটাতারের বেড়া কেটে অপসারণ করা বা বেড়ার ক্ষতি রোধে যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে এবং নিয়মিত যৌথ টহল পরিচালনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন। উভয় পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম বা সীমানা লঙ্ঘন করা থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছে এবং একই সঙ্গে উভয় বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা বজায় রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। উভয় পক্ষই পূর্ব অনুমোদন ছাড়া ১৫০ গজের মধ্যে কোন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। উভয় পক্ষই বন্ধ থাকা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজগুলো যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। যৌথ নদী কমিশনের অনুমোদন অনুযায়ী সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণে সহায়তা দেয়া এবং অননুমোদিতভাবে অভিন্ন সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ না করতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছেন। উভয় পক্ষই বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ করে বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট ও রিট্রিট সেরিমনি উপলক্ষে দর্শক গ্যালারি নির্মাণে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন। সম্মেলনে বিএসএফ ডিজি সন্দেহভাজন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজিবি ও বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান ধ্বংস করতে বিজিবির অব্যাহত সহযোগিতার আশা করেন। বিজিবির ডিজি আশ্বস্ত করেন যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কোন ক্যাম্প বা আস্তানা নেই। বিজিবি ডিজি আরও বলেন, বাংলাদেশ কখনও তার ভূমি কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা অন্য কোন রাষ্ট্রের বিশেষ করে ভারতের কোন শত্রু পক্ষকে ব্যবহারের সুযোগ দেয়নি এবং ভবিষ্যতেও দেবে না। তিনি এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। বিএসএফ ডিজি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে নতুন ডিজাইনের একসারি বিশিষ্ট কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়ে পয়েন্ট উত্থাপন করেন। এ প্রেক্ষিতে বিজিবি ডিজি জানান যে, নতুন ডিজাইনের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ না করার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। উভয়পক্ষ সীমান্তে অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক দ্রব্য, মাদক, স্বর্ণ এবং জালমুদ্রা পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছেন। সীমান্তে চোরাচালানি দ্রব্যসহ আটক ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য এবং উভয় বাহিনীর প্রয়োজন অনুযায়ী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের প্রতিবেদন বিনিময়ের বিষয়ে দু’পক্ষই সম্মতি দিয়েছে। বিজিবির ডিজি বিএসএফ ডিজিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিজিবি এয়ার উইংয়ের দুটি হেলিকপ্টারের অধিকতর ট্রেনিং ও অপারেশনাল ফ্লাইটের বিষয়ে অবহিত করেন এবং যেকোন ধরনের বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে তাকে তার বাহিনীর প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত অবহিত করার অনুরোধ জানান। বিজিবি ডিজি আরও জানান যে, এ ব্যাপারে বিজিবি কর্তৃক বিএসএফের মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কমান্ডারদেরকে আগেই অবহিত করা হবে। বিএসএফ ডিজি বিজিবি থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তির পরে স্থানীয় বিএসএফ ইউনিটকে এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়ার আশ্বাস দেন।
×