ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ

‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর শত গান’ বইয়ে রাজাকার পুত্রের গান

প্রকাশিত: ২২:২৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর শত গান’ বইয়ে রাজাকার পুত্রের গান

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১৯ সেপ্টেম্বর ॥ রাজাকার পুত্রের গান শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর শত গান বইয়ে প্রকাশের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। বইটির সংকলন বাজেয়াফতের দাবিতে লালমনিরহাটে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর শত গানের বইয়ের সংকলনে লালমনিরহাটের কুখ্যাত রাজাকার, গ্রাম্য চিকিৎসক সোলাইমান মিয়ার ছেলে সাজেদ ফাতেমীর দুটি গান প্রকাশের প্রতিবাদে এবং এই সংকলন বাজেয়াফত এবং কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজাকার পুত্রে গান প্রকাশ পেল তদন্ত করে বিচারের দাবিতে শনিবার বেলা ১১টায় জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উপজেলা কমান্ড, আমরা মুক্তিযুদ্ধার সন্তান জেলা কমান্ড, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশের বক্তারা বলেন, কুখ্যাত রাজাকার পুত্র সাজেদ ফাতেমী ফোক গানের একজন শিল্পী। তার বড় ভাই লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলাউল ফাতেমী। তার পিতা গ্রাম্য চিকিৎসক সোলাইমান মিয়া আদিতমারীর পলাশী ইউনিয়নে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শান্তি কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিল। সেই সময় পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সে পাকিস্তান সেনাদের হাতে ধরিয়ে দেয় এবং হত্যা করে। তার ছোট ভাই বিমানবাহিনীর স্কোয়াডন লিডার (অব) জিয়া উল ইসলাম ফাতেমী ’৭১’র যুদ্ধাপরাধী মামলায় মৃত্যুদ-ের সাজা কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা আজাহারুল ইসলামের জামায়াতা। সাজেদ ফাতেমী জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় ছাত্রদলের হল শাখার নেতা ছিল। বর্তমানে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা। সে তার কর্মজীবন জামায়াতের পত্রিকা নয়াদিগন্তে সাংবাদিকতা করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সম্পাদনায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শতবর্ষে বঙ্গবন্ধুর শত গানের সংকলনে কুখ্যাত এই রাজাকার পুত্র সাজেদ ফাতেমীর দুটি গান কিভাবে প্রকাশ পায়। রাজাকার পুত্রের এই গান প্রকাশকে মুক্তিযোদ্ধারা মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমহানির সঙ্গে বেইমানি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তারা শিল্পকলার এই বইয়ের সংকলন বাজেয়াফত করে রাজাকার পুত্রের লেখা গান দুটি বাদ দিয়ে পুনরায় গানের বই প্রকাশের দাবি জানান। সেই সঙ্গে কিভাবে রাজাকার পুত্রের গান বইয়ে স্থান পেল তা তদন্ত করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। বক্তারা বলেন, সাজেদ ফাতেমীর বাবা কুখ্যাত রাজাকার গ্রাম্য চিকিৎসক সোলাইমান মিয়ার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তৈরি রাজাকারের খসড়া তালিকায় ১৫ নম্বরে রয়েছে। জামায়াতের অর্থায়নে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ফেসবুক পেজে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নাট্য ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে আসছে রাজাকার পুত্র সাজেদ ফাতেমী। রাজাকার পুত্রে হঠাৎ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ প্রীতির পেছনে জামায়াতের কোন অসৎ উদ্দেশ্য অবশ্যই আছে। জামায়াত শিবির উগ্রমৌলবাদী চক্র সাজেদ ফাতেমীর মতো রাজাকার পুত্রের ওপর ভর করে মুক্তিযুদ্ধের মূল¯্রােতে মিশে যেতে চায়। সুবিধামতো সময়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিষদাঁত বসিয়ে নিঃশেষ করার গভীর ষড়যন্ত্র এটা। জেলায় তার পরিবার জামায়াত ও উগ্রমৌলবাদী পরিবার হিসেবে কুখ্যাতি আছে। তার ভাই জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলা উল ফাতেমী ২০১৩ সালে দুর্গাপূজায় পলাশী ইউনিয়নে মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুর করে ছিল। ইউনিয়ন পরিষদের রুম দখল করে শিবিরের কার্যালয় করে ছিল। কাতার চ্যারিটির নামে কোটি কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ হাতিয়েছে। মহিলা ও এতিম শিশুদের উগ্রমৌলবাদী ট্রেনিং দিয়ে গ্রামে গ্রামে উগ্রমৌলবাদী আদর্শ প্রচার করেছে। এখনো নামুড়িতে একটি মাদ্রাসার আড়ালে ইন্টারনেট ও নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের বিরুদ্ধে ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হতে বক্তারা হুংকার দিয়ে বলেন, এই রাজাকার পুত্রের লেখা গানের সংকলনটি বাজেয়াফত না করলে এবং কারা তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তদন্ত করে শাস্তির আওতায় না আনলে জেলার মুক্তযোদ্ধাগণ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা স্বাধীনতার সপক্ষের জনতাকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে লালমনিরহাটকে অচল করে দিবে। এছাড়াও নামুড়িতে রাজাকার পরিবারের ওপর কোন অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলে তার দায় আওয়ামী লীগ নেবে না বলে জানান। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মোঃ মতিয়ার রহমান, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু বকর সিদ্দিক, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আমিনুর ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সমশের আলী, মুক্তিযোদ্ধা আকমল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বুলবুল আহম্মেদ, জেলা বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর সংগঠনের সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবির, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান জেলা ইউনিট কমান্ডের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোঃ ইকবাল হোসেন মামুন, সাংস্কৃতিক কর্মী মোঃ সাইফুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মোশারফ হোসেন মামুন, সদর উপজেলা চাত্রলীগের সহসভাপতি শ্রী হৃদয় চন্দ্র বর্মণ প্রমুখ। মানববন্ধনে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিককর্মী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দসহ সমাজের সর্বস্তরের কয়েক শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
×