ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে এক নারী হাতিয়েছে ৩০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ২২:২৫, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে এক নারী হাতিয়েছে ৩০ কোটি টাকা

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ ‘কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই’ সংবাদপত্রে এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস হলেও তার কথাবার্তা ও স্মার্ট চালচলনে কানাডা প্রবাসী ভেবে ভুল করেছেন অনেক নিরীহজন। এভাবে ১১ বছর ধরে পত্রিকায় এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল সে। তার ফাঁদে পড়ে কোটি টাকা খোয়া গেছে অনেকের। এই অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গেস্খফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সময় তার কাছ থেকে ভুক্তভোগীদের অনেক পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোন, ৩টি মেমোরি কার্ড, ৭টি সিল, অসংখ্য সিম ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করা টাকার একটি হিসাব বই উদ্ধার করা হয়। এদিকে ঢাকা ও এর আশপাশের তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে সিআইডি। পরে তার চারটি ব্যাংকে কোটি টাকা হিসাবে জমা পেয়েছে তারা। তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। অপরদিকে গ্রেফতারকৃত প্রতারক জান্নাতুলকে দু’দিনের রিমান্ড নিয়েছে সিআইডি। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার এসব তথ্য জানান। শেখ রেজাউল হায়দার জানান, এ বছরের ৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়- প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, কানাডার সিটিজেন, ডিভোর্সি, সন্তানহীন, বয়স ৩৭, ৫.৩ ফুট লম্বা, নামাজী পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই। যোগাযোগের জন্য ঠিকানা- বারিধারা। এরপর একটি মোবাইল নম্বর দেয়া হয়। এভাবেই ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস। সে তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এই প্রতারণা শুরু করে। ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে সিআইডি। অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার জানান, বিজ্ঞাপন দেখে মোঃ নাজির হোসেন প্রতারক জান্নাতুলের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে গত ১২ জুলাই গুলশান-১ নম্বরের থাই সিগনেচার রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবে এবং সেখানে তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা দেখভাল করবেন। জান্নাতুলের এসব কথায় বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরে প্রতারক জান্নাতুল জানান, কানাডায় প্রচ- শীত তাই সেখান থেকে তার দুই শ’ কোটি টাকা দেশে ফেরত নিয়ে আসবে। পরে দেশেই ব্যবসা করবে। তিনি জানান, ডিএইচএলের মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে ভুক্তভোগী নাজির হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন তারিখে ট্যাক্স/ভ্যাট/ডিএইচএল বিল বাবদ মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখেন জান্নাতুল ফেরদৌস। ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে প্রতারক জান্নাতুল ফেরদৌস। সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার জানান, গত ১১ বছরে অসংখ্য মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সে। তার একটি হিসাবখাতা জব্দ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ২৫/৩০ কোটি টাকার হিসাব আমরা পেয়েছি। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে আমরা সেগুলোতে ১ কোটি টাকা পেয়েছি। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হলে পরে সে মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দিত। আমরা এই চক্রের আরও সদস্যকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। দু’দিনের রিমান্ড ॥ এদিকে গ্রেফতারকৃত সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌসের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর রহমান শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে রিমান্ডের আদেশ দেন। এদিন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক শরীফুল ইসলাম শরীফ আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অপরদিকে আসামিপক্ষে এ্যাডভোকেট জুলহাস উদ্দিন আহম্মেদ সবুজ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে সাদিয়া জান্নাতের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেয়।
×