ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেতু পয়েন্টে ৩১ সে. মি.

ভারি বৃষ্টি উজানের ঢল- ধরলার পানি বিপদসীমার ওপরে

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভারি বৃষ্টি উজানের ঢল- ধরলার পানি বিপদসীমার ওপরে

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আমন খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। দীর্ঘ দেড় মাসের বন্যার পর ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই আবারও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ১৮শ’ হেক্টর আমন খেতসহ ২১শ’ ৪ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি দ্রুত নেমে না গেলে এসব ফসল নষ্ট হওয়ায় আশঙ্কা রয়েছে। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, পর পর তিন দফা বন্যায় আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। পানি নামায় ধার-দেনা করে অন্য এলাকা থেকে চারা কিনে এনে দুই বিঘা জমিতে লাগিয়েছিলাম। সেই আমন খেতও গত দুই দিন আগে পানিতে তলিয়ে গেছে। দু’চার দিনের মধ্যে পানি না নামলে আমন খেত সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যাবে। সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের আবুল হোসেন জানান, আমরা কৃষক মানুষ। ধান আবাদ না হলে খাবার উপায় নেই। দীর্ঘ বন্যায় দুই দফা আমন খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আবারও চারা লাগিয়েছি। কিন্তু সেই জমিতে এখন আমন খেতের ওপর ৪ থেকে ৫ ফুট পানি। এবারও খেত নষ্ট হলে বাঁচার উপায় থাকবে না। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মোঃ শামসুদ্দিন মিয়া জানান, পর পর ৩ দফা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেলার কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করা হয়েছিল। নতুন করে নিমজ্জিত হয়ে পড়া আমন খেত থেকে দ্রুত পানি নেমে না গেলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে তীব্র স্রোতের কারণে জেলার ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ২০টি পয়েন্টে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, কাউয়াহাগার ঘাট, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমনের চর, মোগলবাসা ইউনিয়নের চরশিতাইঝাড় ও সন্ন্যাসী, রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়া এলাকায় ধরলার ভাঙ্গন তীব্র হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে তিস্তার ভাঙ্গনের উলিপুরের দলদলীয় ইউনিয়নের ঠুটা পাইকরসহ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে সদরের যাত্রাপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার কয়েকটি এলাকা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুর রহমান জানান, গত দুইদিনে ধরলার ভাঙ্গনে আমার ইউনিয়নের জগমনের চর এলাকার ৫৪টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব পরিবার খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও ১৩শ’ ৫০টি পরিবার পানিবন্দী জীবন-যাপন করছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬টার রিপোর্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কিছু এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×