ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিজের অবস্থান পরিস্কার করলেন আবেগী বাদল রায়

প্রকাশিত: ২১:০৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

নিজের অবস্থান পরিস্কার করলেন আবেগী বাদল রায়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘ফুটবল থেকে আমাকে সরে যেতে হচ্ছে, তাতে আমি খুবই কষ্ট পাচ্ছি। ফুটবলের জন্য কাজ করতেই সভাপতি পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলাম। অনেক কষ্ট ও দুঃখ নিয়ে আজ আপনাদের ডেকেছি। আমার অনেক কষ্ট লাগছে যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমার শরীরের ওপর দিয়ে অনেক চাপ যাচ্ছে। করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠলেও এখনও দুর্বলতা কাটেনি। তো কিভাবে আমি নির্বাচনের ক্যাম্পিং করবো! আমার মেয়ে ও স্ত্রী সবাই বললো, ইলেকশন করার দরকার নেই, তোমার ভালো থাকার দরকার। তুমি বেঁচে থাকো, আমাদের জন্য বেঁচে থাকো। তারপর আমি ভোট না করার সিদ্ধান্ত নিলাম।’ কথাগুলো যার, তিনি বাদল রায়। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক তারকা ফুটবলার, ক্রীড়া সংগঠক এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বর্তমান সহ-সভাপতি। গত শনিবার তিনি জানিয়েছিলেন, আগামী ৩ অক্টোবর বাফুফের বহুল আলোচিত নির্বাচনে অংশ নেবেন না তিনি। কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন পরিবারের আপত্তি এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যা। শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ছিল নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার শেষ সময়। এই সময়ের মধ্যে দুজন সদস্যপদের প্রার্থী সাইদুর রহমান মানিক (আজমপুর ফুটবল ক্লাবের সভাপতি) এবং জাকির হোসেন বাবুল (উত্তর বারিধারা ক্লাবের ডেলিগেট) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বাদল নিজে না এসে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদনপত্র দিয়ে তার স্ত্রী মাধুরী রায়কে বাফুফে ভবনে পাঠান। মাধুরী যখন যখন বাফুফে ভবনে পৌঁছান, তখন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার সময়সীমা পার হয়ে গেছে আরও ঘণ্টাখানেক আগেই। সভাপতি পদে জমা দেয়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করতে ঘন্টাখানেক বিলম্ব হওয়ায় বাদল রায়ের আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হয়নি বাফুফের নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিশনের কাছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আগামী ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য বাফুফের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ব্যালটে থাকবে সাবেক এ তারকা ফুটবলারের নাম। স্বামীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জমা দেয়ার পর মাধুরী রায় বলেছিলেন, কোন কাউন্সিলর যেন বাদল রায়কে ভোট না দেন। কিন্তু বাদল রায় নির্বাচন থেকে সরে গেলেও তার শুভাকাক্সখী ও সমর্থকরা ঠিকই ভোট চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে ওঠেন। আর এটাকে আটকাতেই শুক্রবার বাদল রায় এবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কথা বললেন নিজের প্রিয় ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে বসে। কিন্তু এই ঘোষণা দেয়াটা এত সহজ ছিল না বাদলের জন্য। টানা ১২ বছর বাফুফের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করা বাদল এই ঘোষণা দিতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে বুক ভাসান ডাকসুর সাবেক এ ক্রীড়া সম্পাদক। পাশে তখন তার স্ত্রী মাধুরী রায়। কোনা চাপের কারণে নির্বাচন থেকে সরে যাননি উল্লেখ করে বাদল বলেন, ‘অনেকে মনে করছেন আমার ওপর চাপ আছে। আসলে তা নয়। নিজের কাছেই আমার চাপ। আমি তৃণমূলের সংগঠকদের নিয়ে বেশি ভাবি। তারা খুব অসহায়। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কারণে তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি কাউন্সিলরদের অনুরোধ করবো, আপনারা চিন্তাভাবনা করে ভোট দেবেন। আমি চাই ফুটবল ফেডারেশনে শক্তিশালী কমিটি আসুক। এমন কাউকে ভোট দিয়েন না যারা ফুটবলের জন্য কাজ করবে না।’ মনোয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদনের পর তা গ্রহণ না করা প্রসঙ্গে বাদল বলেন, ‘হ্যাঁ, আবেদন করতে দেরি হয়েছে। তাতে আইনগতভাবে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। সালাউদ্দিন সাহেব চাইলে পারতেন এটা এড়িয়ে যেতে। তার তো শক্তি অনেক। আমাকে কেন হয়রানি করছেন, জানি না।’ সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র কিনে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব লিমিটেডের কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। এছাড়া পূর্ব প্রতিশ্রুতি মোতাবেক মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন বাদল রায়-ও। সালাউদ্দিনের বিরোধী প্রতিপক্ষ তরফদার রুহুল আমিন যখন কয়েক মাস আগে অপ্রত্যাশিতভবে বাফুফের আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়নোর ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন তার শিবিরে যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছিল, সেটা সামাল দিতেই তখন বাদল রায় গত এপ্রিল ঘোষণা দেন, ‘কেউ যদি সভাপতি পদে সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে না দাঁড়ায়, তাহলে আমিই দাঁড়াবো।’ শারীরিকভাবে অসুস্থ বাদল রায় সত্যিই কী নির্বাচন করবেন! এ নিয়ে তথনই অনেকের মনে তৈরি হয় সংশয়-সন্দেহ! তখন সবাই মনে করেছিলেন এটা হয়তো বাদলের কথার কথা বা আবেগপ্রসূত ঘোষণা। তার কারণ দুটি। গত আগস্টে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর থেকে বাসাতেই আইসোলেশনে আছেন ডাক্তারের পরামর্শে। এখনও পুরোসুরি সুস্থ হননি। শ্বাসকষ্ট রয়ে গেছে এখনও। শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালের জুনে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছিল বাদল রায়কে। এতে তার শরীরের আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সেই ধকল বয়ে বেড়াচ্ছেন আজও। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া বাদল রায় সেই ১৯৯৬ সাল থেকেই বাফুফের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন সময় পালন করেছেন বিভিন্ন পদে দায়িত্ব। দেশের ফুটবলের স্বর্ণযুগ আর পড়ন্ত বেলা-দুটোই তার দেখা। বাদল বাফুফের সহ-সভাপতি হিসেবে টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বর্ণাঢ্য খেলোয়াড়ী জীবনে জাতীয় দলের হয়ে ১৯৮১-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত খেলেছেন। মোহামেডানের জার্সিতে এই সাবেক এ্যাটাকিং মিডফিল্ডার খেলেছেন ১৯৭৭-১৯৮৯ সাল পর্যন্ত। এখন ফুটবলবোদ্ধারা অনেকেই বলছেন, বাদল রায় সরে দাঁড়ানোতে বাফুফেতে কার্যতঃ তার অধ্যায়-ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে গেল। এখন সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়ে গেলেন মানিক।
×