ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ॥ ধরলার পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ॥ ধরলার পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত

স্টাফ রিপোর্টার,কুড়িগ্রাম ॥ কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এতে করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আমন ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক। দীর্ঘ দেড় মাসের বন্যার পর ঘুরে দাড়াতে না দাড়াতেই আবারো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষজন। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের ১৮শ হেক্টর আমন ক্ষেতসহ ২১শ ৪ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানি দ্রুত নেমে না গেলে এসব ফসল নষ্ট হওয়ায় আশংকা রয়েছে। সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষক মতিয়ার রহমান জানান, পর পর তিন দফা বন্যায় আমন বীজতলা নষ্ট হয়ে যায়। পানি নামার ধার-দেনা করে অন্য এলাকা থেকে চারা কিনে এনে দুই বিভাগ জমিতে লাগিয়েছিলাম। সেই আমন ক্ষেতও গত দুই আগে পানিতে তলিয়ে গেছে। দু’চার দিনের মধ্যে পানি না নামলে আমন ক্ষেত সম্পুর্ণরুপে নষ্ট হয়ে যাবে। সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের আবুল হোসেন জানান, আমরা কৃষক মানুষ। ধান আবাদ না হলে খাবার উপায় নাই। দীর্ঘ বন্যায় দুই দফা আমন ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আবারও চারা লাগিয়েছি। কিন্তু সেই জমিতে এখন আমন ক্ষেতের উপর ৪ থেকে ৫ ফুট পানি। এবারও ক্ষেত নষ্ট হলে বাঁচার উপায় থাকবে না। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো: শামসুদ্দিন মিয়া জানান, পর পর ৩ দফা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেলার কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন প্রনোদনা দেয়া হয়েছে। সেই সাথে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও পুরন করা হয়েছিল। নতুন করে নিমজ্জিত হয়ে পড়া আমন ক্ষেত থেকে দ্রুত পানি নেমে না গেলে ক্ষতির আশংকা রয়েছে। অন্যদিকে তীব্র স্রোতের কারনে জেলার ধরলা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ২০টি পয়েন্টে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, কাউয়াহাগার ঘাট, ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমনের চর, মোগলবাসা ইউনিয়নের চরশিতাইঝাড় ও সন্নাসী, রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়া এলাকায় ধরলার ভাঙ্গন তীব্র হয়ে উঠেছে। অন্যাদিকে তিস্তার ভাঙ্গনের উলিপুরের দলদলীয় ইউনিয়নের ঠুটা পাইকরসহ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে সদরের যাত্রাপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: সাইদুর রহমান জানান, গত দুইদিনে ধরলার ভাঙ্গনে আমার ইউনিয়নের জগমনের চর এলাকার ৫৪টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব পরিবার খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও ১৩শ ৫০টি পরিবার পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুল ইসলাম জানান, নদ-নদীর বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৬ টার রিপোর্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীর পানি বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। কিছু এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
×