ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়াকাটা-গঙ্গামতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল হুমকিতে

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

কুয়াকাটা-গঙ্গামতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল হুমকিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ কুয়াকাটায় আমফান পরবর্তী অস্বাভাবিক জোয়ারে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির প্রাচীন গাছগুলোতে যেন মড়ক লেগেছে। কুয়াকাটা সৈকতের গঙ্গামতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের হাজারো গাছ বিবর্ণ হয়ে কঙ্কালের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এসব গাছ আবার কেটে নিয়ে যাচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ। কেউ কেউ মরা গাছে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলছে। সাগরে ভেসে গেছে হাজারো গাছ। বনবিভাগের উদাসীনতা আর নানামুখি প্রাকৃতিক সমস্যায় কুয়াকাটা-গঙ্গামতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল এখন হুমকির মুখে পড়েছে। স্থানীয় বাসীন্দাসহ সাগরপারের জেলেরা বলেছে ঢেউয়ের তান্ডবে গাছের শেকড় উপড়ে মরে যাচ্ছে। এছাড়া শ্বাসমূল বালিতে চাপা পড়ায়ও মারা পড়ছে গাছগুলো। আর বনদস্যুদের তান্ডব তো আছেই। বহুমুখি সমস্যায় কুয়াকাটা-গঙ্গামতির সংরক্ষিত গোটা বনাঞ্চলটি এখন হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ প্রতিবেশের বিরুপ প্রভাবের পাশাপাশি বনবিভাগের উদাসীনতায় সবচেয়ে বেশি বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে গেছে বলে সেখানকার সাধারণ মানুষের দাবি। কুয়াকাটা বিট থেকে গঙ্গামতি লেকের দুই দিকে প্রায় ছয় কিলোমিটারজুড়ে হাজারো মারা গাছে সয়লাব হয়ে আছে। এসব গাছগুলো আবার এখন এক শ্রেণির বনদস্যুরা কেটে সাবাড় করছে। যে হারে সংরক্ষিত বনের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির প্রাচীন গাছগুলো মারা পড়ছে তাতে আগামি দশ বছরে গোটা এলাকা বিরাণভূমিতে পরিণত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সকল জেলের মতামত কুয়াকাটা সৈকতের দীর্ঘ এলাকা ভাঙ্গন রোধে প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ করলে ডেউয়ের ঝাপটা থেকে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চল রক্ষা হতে পারে। জেলে আমিনুল হোসেন জানান, যে হারে সাগর ধেয়ে আসছে তাতে বনাঞ্চল থাকবে না। এখনই সরকারের বন এবং সৈকত রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। আর মরা গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করলেও সরকার হাজার হাজার টাকার রাজস্ব পেত। এই জেলে আরও জানালেন, কেউ মারা গাছ কেটে খুটি বানাচ্ছে। কেউ নৌকার বৈঠা বানাচ্ছে। কেউ জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করছে। কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। গঙ্গামতি বনাঞ্চলের বিট কর্মকর্তা মো. সহিদ উদ্দিন জানান, আনুমানিক দুই হাজার একর এলাকা গঙ্গামতি বনাঞ্চলের। কমে গেছে প্রায় ২০০ একর। তবে এটি নতুন করে সার্ভে করার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানালেন এই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানালেন, হাজারো ঝাউগাছ জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটায় ভেসে গেছে সাগরে। আর মারা গাছ সংরক্ষণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। পরিবহন খরচ না থাকায় এসব মরা গাছ কেটে লট করা যাচ্ছে না। বনাঞ্চল রক্ষায় নতুন নতুন চরাঞ্চলে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বাগান সৃজনের কাজ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানালেন তিনি।
×