ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আবারও শুরু হয়েছে অবৈধ বিলবোর্ড অপসারণ। আবারও বলার কারণ, ঢাকায় এ ধরনের অভিযান আমরা কিছুকাল পরপর দেখে থাকি। হঠাৎ একটা হাওয়া আসে। তারপর মিলিয়ে যায়। এবার কি হবে তা দেখার বিষয়। আমরা আগ্রহভরা চোখে তাকিয়ে আছি। দেখছি। দেখব। কিন্তু একইসঙ্গে জানতে চাই পোস্টারের কী হবে? শহর ঢাকার মুখ দেখা যায় না। পুরোটাই পোস্টারে ঢাকা। গুরুত্বপূর্ণ দেয়াল, বিশেষ করে ফ্লাইওভারের পিলারগুলো একরকম ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। কী যে নোংরা একটা ছবি! দেখে মনে হয় এ শহরে যারা বাস করেন তাদের রুচি বলতে কিছু নেই। রুচির বড়সড় দুর্ভিক্ষ চলছে। বাইরের দেশের মানুষ শহরে প্রবেশ করেই চোখ কপালে তোলেন। ভেবে পান না একটি দেশের রাজধানী শহরের ছবি এমন কী করে হয়! হ্যাঁ, পোস্টার নতুন কিছু নয়। আগেও ছিল। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়ার পর এখন বলা চলে, মহামারী চলছে। কোন কোন দেয়ালে পোস্টার আছে? এ প্রশ্ন অবান্তর। কোথায় নেই? শহরের সর্বত্রই পোস্টার। দেখে অনেকে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। দেখছেন প্রতিদিন। কিছু তবু যাচ্ছে না। আসছেও না। বেদনার বিষয় হলো শহরটিকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব যাদের তারা সবচেয়ে বেশি নির্বিকার। নান্দনিকতার বোধ তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র আছে কী? যদি থাকত তাহলে শহরের পরিবেশ এত শ্রীহীন হতো না। প্রধান প্রধান সড়কের পাশে যত দেয়াল সব সয়লাব হয়ে গেছে পোস্টারে। চারপাশে তাকিয়ে ভাল কিছু নান্দনিক কিছু দেখার সুযোগ নেই। পোস্টারে আড়াল হয়ে গেছে। অফিস-আদালত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি বাসা বাড়ির সীমানা প্রাচীর পোস্টার দিয়ে লেপা। ঢাকার কিছু দেয়াল চমৎকার রং করা, ম্যুরাল পেইন্টিং করা। টেরাকোটার কাজ করা দেয়ালও আছে। কিন্তু এসবের ওপরও বিনা দ্বিধায় লাগানো হচ্ছে পোস্টার। এ অপকর্মটি না করার কত অনুরোধ! কোন অনুরোধই কাজে আসছে না। সবচেয়ে বেশি নোংরা করা হচ্ছে ফ্লাইওভারের পিলারগুলো। রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এসব পিলার ডিসপ্লে বোর্ডের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। আসা-যাওয়ার পথে সেদিকে চোখ যায়। যাবেই। সুতরাং পোস্টার না লাগালেই নয়। রাজনীতির লোকেরা তো পিলারগুলোকে পৈত্রিক সম্পত্তি বলেই মনে করেন। দেশের ‘সেবক’ তারা। স্থানীয় রাজনীতিতে কে কত বড় নেতা হয়ে উঠেছেন তা পোস্টার দেখে বোঝা যায়। কত রঙয়ের ঢঙয়ের ছবি তাদের! দেখে গা গুলিয়ে ওঠে। ইঁদুর মারার ওষুধের বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে পিলারের গায়ে। সিনেমার নাটকের যত উদ্ভট পোস্টার সেঁটে দেয়া হচ্ছে। সেসবে অশ্লীল অশৈল্পিক উপস্থাপনা। আছে কোচিং ব্যবসার বড় বড় বিজ্ঞাপন সংবলিত পোস্টার। ‘বাসা ভাড়া হবে’, ‘মেসে সিট হবে’, ‘প্রাইভেট পড়াতে চাই’, ‘ডুপলিকেট চাবি বানাই’, ‘দোকানের সাঁটার ঠিক করি’ ‘গ্যাসের চুলো মেরামত করি’ আরও কত কী! এভাবে নাগরিক জীবনের সব সমস্যার সমাধান দিয়ে চলেছে পোস্টার। রোদে বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত হয়ে পুরনো পোস্টার খসে পড়ছে। নুয়ে পড়ছে। বাতাসে দোল খাচ্ছে। তার ওপরই আঁঠা দিয়ে লাগানো হচ্ছে নতুন পোস্টার। পরোক্ষণেই হাজির হচ্ছে আরেক দল। সদ্য লাগানো পোস্টার এক টানে যতটুকু ছেঁড়া যায়, ছিঁড়ছেন। তার ওপর লাগাচ্ছেন নিজেদেরটি। এভাবে প্রতিটি পিলার আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আর কতকাল এভাবে চলবে? অপেক্ষাকৃত স্মার্ট দু’জন মেয়র এখন ঢাকার দুই সিটির দায়িত্বে। এখন কি এর সামাধান আশা করতে পারি না আমরা? অন্য প্রসঙ্গ। পুজোর হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সারাদেশের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজধানী ঢাকাও। বৃহস্পতিবার ছিল মহালয়া। করোনাকাল চলায় অন্যান্য বছরের তুলনায় আনুষ্ঠানিকতা কম ছিল। তবে ছিল। সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দির, বনানী পূজা কমিটির অফিসের মিলনায়তনসহ বিভিন্ন স্থানে সীমিত পরিসরে ধর্মীয় আচার পালন করা হয়েছে। অবশ্য শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আয়োজন এবার পিছিয়েছে। আশ্বিনে নয়, পুজো হবে কার্তিকে। কারণটি ইতোমধ্যে অনেকে ব্যাখ্যা করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মল মাসের কবলে পড়েছে পুজোর মাস আশ্বিন। মাসটিকে অশুভ জ্ঞান করা হয়। এ মাসে কোন শুভ কাজে হাত দেয়া হয় না। একই কারণে হয় না পূজাপার্বণ। এবারের দুর্গোৎসব তাই কার্তিকে গড়িয়েছে। আগামী ৬ কার্তিক ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় উৎসব। পাঁচদিনের আয়োজন শেষ হবে দশমী পুজোর মধ্য দিয়ে। আপাতত অপেক্ষা। কেবল সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নন, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সকল বাঙালী অপেক্ষা করে আছে। কুকুর প্রসঙ্গ টেনে শেষ করা যাক। ঢাকার কুকুর নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে। ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপস এ আলোচনার সূত্রপাত করেন। বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে জানিয়ে এর কিছু ঢাকার বাইরে পাঠানোর ঘোষণা দেন তিনি। কিন্তু এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হন কুকুরপ্রেমী নাগরিকদের একাংশ। নানাভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন তারা। কিন্তু দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন যে তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি সেটি বোঝা যায় অতিসম্প্রতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কর্পোরেশনের লোকদের কুকুর ধরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। বিশেষ জাল দিয়ে আটকে ইনজেকশনের মাধ্যমে অচেতন করে ট্রাকে তুলে নেয়া হচ্ছে কুকুর। এ দৃশ্য দেখার পর থেকে নতুন করে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। প্রতিবাদকারীদের দলে মানবিক মানুষ যেমন রয়েছেন, তেমনি আছেন সমাজের এলিট ক্লাসের প্রতিনিধিত্ব করা ব্যক্তিবর্গ ও তাদের সন্তানেরা। এ অংশটি ঘরে সবসময় বিদেশী কুকুর রাখেন। পরিবারের সদস্য হিসেবে একে আদরে যতেœ লালন পালন করেন। সে জায়গা থেকেই কুকুর ধরা অচেতন করা ও বাইরে পাঠানোর বিরোধিতা করছেন তারা। প্রাণবিক ঢাকার দাবি তুলছেন। দক্ষিণ সিটির মেয়রের সিদ্ধান্তের পক্ষেও আছেন অনেকে। তারা বলছেন, মানুষের বেলায়ও তো জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নেয়া হচ্ছে। তাহলে কুকুর কমাতে সমস্যা কোথায়? একটি কুকুর প্রচুর বাচ্চা দেয়। বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা তাই আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে বলে দাবি তাদের। তারা বলছেন, এভাবে চলতে পারে না। যখন তখন গাড়ির সামনে পড়ছে। রাত বিরাতে পথিকের পিছু নিচ্ছে। কামড়ে দিচ্ছে। এর একটা প্রতিকার তো চাই। সবমিলিয়ে উভয় সঙ্কট। কোন পথে এগোবে দক্ষিণ সিটি?
×