ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সীমান্তে সেনা মোতায়েনের ব্যাখ্যা মেলেনি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপ অব্যাহত

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপ অব্যাহত

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘও সক্রিয়। এবারও রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে একটি রেজুলেশন পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যম এ সংক্রান্তে ইতোমধ্যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভার্চুয়াল এ ইভেন্টের আয়োজন করে কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্ক। এদিকে, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে নতুন করে সৈন্য সমাবেশকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা শিবিরসহ বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। মিয়ানমার পক্ষ এখনও প্রকাশ করেনি কেন তাদের এ বাড়তি সৈন্য সমাবেশ। সীমান্ত বিভিন্ন এলাকার অদূরে তাঁবু গেড়ে অবস্থান নেয়া সৈন্যদের এখনও সরিয়ে নেয়া হয়নি। কুমিরখালী সেনানিবাস থেকে উর্ধতন সেনা কর্মকর্তারা তুমব্রু এলাকায় সেনা সদস্যদের অবস্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন বলে ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সেনা কর্মকর্তারা তাঁবু পরিদর্শন করে ফিরে গেছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ওপারে মংডু কাছারিবিল থেকে উত্তরে সাহাববাজার ফকিরা বাজার পর্যন্ত এলাকায় সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে মিয়ানমার। সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারে স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন গ্রুপ দেশটিতে বিদ্রোহ করে আসছে। আরসা এবংআরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে সমঝোতা হওয়ার সংবাদে ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আরও একটি শক্তিশালী বিদ্রোহী গ্রুপ তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বলে জানা গেছে। এই বিদ্রোহী গ্রুপটি হচ্ছে আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ)। ওই গ্রুপে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ট্রেনিংপ্রাপ্ত রোহিঙ্গা ক্যাডাররা রয়েছে বলে সূত্র দাবি করেছে। সীমান্তের অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার অভ্যন্তরে যত ঘটনা বা যত ফৌজ মোতায়েন করুক না কেন, বাংলাদেশ সীমান্তে এখনও কোন ধরনের উত্তেজনা নেই। নিয়মিত বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে। কোনারপাড়ায় মিয়ানমার অভ্যন্তরে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের কাছে শুনেছেন দাবি করে স্থানীয়রা বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে সেনা সদস্য ও আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধেছে, এ জন্য সীমান্তে মিয়ানমার মিলিটারি দিয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত শান্ত রয়েছে উল্লেখ করে তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা ও ঘুমধুম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবছার কামাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, মিয়ানমার বিনা উস্কানিতে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, সশস্ত্র ও সন্ত্রাসী যত প্রকারে বিদ্রোহী গ্রুপ আছে সবই মিয়ানমারের। ওই গ্রুপগুলোর ক্যাডাররা তাদের দেশে কিছু একটা ঘটালেই মিয়ানমার সীমান্তে দেশটির সৈন্য সমাবেশ অথবা অতিরিক্ত বিজিপি মোতায়েন করে থাকে। এটি আমাদের বাংলাদেশ সীমান্তের জন্য কোন ধরনের উদ্বেগ এর বিষয় না হলেও অতীতেও দেখা গেছে মিয়ানমার অহেতুক বাড়াবাড়ি করে থাকে। বার বার সীমান্ত চুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের গাফিলতির কারণে গত তিন বছরেও রোহিঙ্গাদের একটি পরিবারও ফেরত নেয়নি তারা। এদিকে, আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে সাইট লাইনে ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সাম্প্রতিক চার বছর টেকসই সমাধান নিশ্চিতে চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আয়োজক চার দেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের নেতারা মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন মিয়ানমার বিষয়ক স্বাধীন তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান। জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা জানিয়েছেন, এবারও রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘে একটি রেজুলেশন পাস হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দফায় বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে। তিনি সাধারণ পরিষদে মূল ভাষণ দেবেন ২৬ সেপ্টেম্বর।
×