ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা মোকাবেলায় আরও নজরদারির তাগিদ

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা মোকাবেলায় আরও নজরদারির তাগিদ

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাস্তা থেকে বাজার। টার্মিনাল থেকে গণপরিবহনসহ অফিস আদালত সবকিছুই স্বাভাবিক। রাজধানী ছাড়ালে বোঝার কোন উপায় নেই দেশে এখনও প্রাণঘাতী করোনার ছোবল অব্যাহত। প্রায় দুই কোটি মানুষের শহর ঢাকায় এখন সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ মানুষ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন। বাদ বাকির কাছে করোনার পাত্তা নেই। আর মফস্বল শহর থেকে গ্রামে পাঁচ ভাগ মানুষও মাস্ক ব্যবহার করেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছাড়া বাদ বাকি করোনাকালীন সব ধরনের বিধি নিষেধ ওঠে গেছে। সবকিছুই এখন বলতে গেলে স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে বাস-ট্রেনে সব আসনে যাত্রী ওঠানো হচ্ছে। শুধু তাই নয় গণপরিবহনে আসন পূরণের পাশাপাশি গাদাগাদি করে যাত্রী তোলার দৃশ্য অহরহ। এই অবস্থা চলমান থাকলে ফের আসতে পারে করোনার ধাক্কা। এমন আশঙ্কার কথাই বারবার বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এমন পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবেলায় আরও নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৯৩ জন। সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সর্বশেষ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ১ হাজার ৫৯৩ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৬৪ জন হলো। আর গত একদিনে মারা যাওয়া ৩৬ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৫৯ জনে দাঁড়াল। আইইডিসিআরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ৪৪৩ রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত একদিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ৪১২ জন হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি গণপরিবহন লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার। এরপর অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ও জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি তুলে নিয়ে গণপরিবহন চালু হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ দুই আসনে এক যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি গণপরিবহন পরিচালনায় বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দেয় সরকার। পরিবহন মালিকদের চাপে এক সেপ্টেম্বর থেকে বাসের বিধি নিষেধ তুলে নিয়ে সব আসনে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়া হয়। তবুও বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে অনেক দূরপাল্লার বাস কোম্পানি। আর গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রেনের সব আসনে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়। বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলস্টেশনসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে গণপরিবহনে কোথাও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। করোনাকে তোয়াক্কা না করেই চলছেন সবাই। দেখে মনে হবে করোনা নামে কোন ভাইরাস দেশে আসেনি। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিন বন্ধ থাকার কারণে এখন করোনার খবরের প্রতি সাধারণ মানুষের তেমন কোন আগ্রহও দেখা যায়নি। অনেকে বলছেন, করোনা দেশে আছে এ কথা তাদের জানাই নেই। কারণ এ রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর খবর অজানা। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টায় নগরীর মানুষ। কমলাপুরে থেকে দিনভর বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে ট্রেন। গত চারদিন আগেও কমলাপুর স্টেশন জুড়ে করোনা সংক্রমণ রোধে ছিল নানারকম স্বাস্থ্য নিরাপত্তার চিত্র। এখন প্রায় সব ট্রেন চলাচল করায় কার্যত সবকিছু উবে গেছে। ট্রেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাও আগের মতো নেই। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, শরীরের তাপমাত্রা মাপা, স্বয়ংক্রিয় গেট ব্যবস্থাপনা, স্যানিটাইজার, সাবান ব্যবহার কমে গেছে অনেক। ঢাকার বাইরে থেকে যেসব ট্রেন আসছে সবগুলোতেই দেখা গেছে যাত্রীদের করোনা নিয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এর বাইরে লাব্বাইক, নিউ লাভলী, অনাবিল, ছালছাবিল, তুরাগ, মালঞ্চ, প্রজাপতি, নিউ ভিশন, সিটি সার্ভিস, আট নম্বর, বনানী সার্ভিস, ওয়েলকাম, রাজধানী, বিহঙ্গ, বসুমতি, আজমেরী গ্লোরী, বলাকা, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিবহন, স্বজনসহ বিভিন্ন কোম্পানির বাসে সব আসনে যাত্রী বসানোর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। কোন বাসেই স্বাস্থ্যবিধির কারবার নেই। অন্তত ১০টি বাজার, টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে করোনা নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই। বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না। অফিস পাড়াও স্বাভাবিক হওয়ার পথে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে করোনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞের মতে আসন্ন শীতে সংক্রমণের দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত হানতে পারে। তাই সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এরই মাঝে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত এনেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও প্রতিদিন নব্বই হাজার থেকে এক লাখ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তাই এ প্রেক্ষাপটে কোনভাবেই হেলাফেলার সুযোগ নেই। সবাইকে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন ও জীবিকার চাকা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সামান্য অবহেলা আমাদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী বলেন, সবকিছু ছেড়ে দিয়ে করোনাকে জয় করা সত্যিই খুব চ্যালেঞ্জের। তিনি বলেন, অনেক দেশ সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বিপদের মুখে পড়েছিল। আমাদের যেন এমন না হয়, এজন্য সব কিছুতেই কিছুটা নিয়ন্ত্রণ, নজরদারি রাখা উচিত। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ ব্যাধি। তাই এতে অবহেলা করা উচিত হবে না। রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারের বেশি দেখভাল করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
×