ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধান চাল সংগ্রহে চুক্তিভঙ্গ

প্রকাশিত: ২১:১০, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

ধান চাল সংগ্রহে চুক্তিভঙ্গ

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে মিলাররা বোরো মৌসুমে ২৭ হাজার তিন শ’ ১২ মেট্রিকটন চাল দেবে বলে চুক্তি করলেও দিয়েছে মাত্র ১৫ হাজার এক শ’ পাঁচ মেট্রিক টন। তিন শ’ ৫১ রাইসমিল মালিক এটি করেছে। বাজারে ধানের দাম বেশির কথা বলে তারা চাল দেয়নি সরকারকে। সংগ্রহ অভিযান শেষ হওয়ায় এবার চুক্তি ভঙ্গ করা মিলারদের তালিকা করার চিন্তা করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরপর নেয়া হবে ব্যবস্থা। এসব মিলাররা যাতে আগামীতে চুক্তিবদ্ধ হতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা হতে পারে। একইসঙ্গে বাতিল করা হতে পারে রাইসমিলের লাইসেন্সও। সংগ্রহে হতাশার চিত্র ধানেও। এ বছর বোরো মৌসুমে যশোরে ১০ লাখ ৩০ হাজার সাত শ’ ৬৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। আর চাল উৎপাদন হয়েছে ছয় লাখ ৮০ হাজার তিন শ’ ছয় মেট্রিকটন। অথচ খাদ্যগুদামে ধান এবং চাল সংগ্রহের চিত্র হতাশাজনক। দাম বৃদ্ধির অজুহাতে মিলাররা চুক্তি অনুযায়ী চাল দেয়নি। এ কারণে ২৭ হাজার তিন শ’ ১২ মেট্রিকটনের জায়গায় সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার এক শ’ পাঁচ মেট্রিকটন। হতাশাজনক অবস্থা ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রেও। ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র তিন হাজার ছয় শ’ ৪৪ মেট্রিকটন। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার পাঁচ শ’ ৬৬ মেট্রিকটন। নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর সরকার আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করার পরও কোন কাজ হয়নি। ধান বিক্রি করতে আসেনি কোন কৃষক। সরকার নির্ধারিত সময় শেষ হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ধারে কাছেও যায়নি। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করার নির্দেশ ছিল। কিন্তু যশোরে সেটি সম্ভব হয়নি। খাদ্য বিভাগ সংগ্রহ শুরু করে মে মাসের শেষের দিকে। ৩১ আগস্ট ছিল সংগ্রহের সর্বশেষ সময়। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে না যাওয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয় বাধ্য হয়ে আরও ১৫ দিন বৃদ্ধি করে। সেটি শেষ হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। কৃষক এবং মিলার খাদ্যগুদামমুখী হয়নি। অথচ যশোরে এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর যশোর সদর উপজেলার কৃষকদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান কিনতে এ্যাপের মাধ্যমে আবেদন চাওয়া হয়। গত বছর আমন মৌসুম থেকে যশোরে এ প্রক্রিয়ায় ধান কেনা শুরু হয়। আমন মৌসুমে সদর উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের কাছ থেকে দু’ হাজার আট শ’ ২৬ মেট্রিকটন ধান কেনে খাদ্য অধিদফতর। বোরো মৌসুমে আট শ’ ৭০ মেট্রিকটন বৃদ্ধি করে তিন হাজার ছয় শ’ ৯৬ মেট্রিকটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সদর উপজেলায়। পুরো জেলায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার তিন শ’ ৭৪ মেট্রিকটন। সদর উপজেলায় এ্যাপের মাধ্যমে আবেদনের পর লটারিতে যারা বিজয়ী হন কেবলমাত্র তারাই সরকার নির্ধারিত এক হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রির সুযোগ পান। সদর উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও পৌরসভা থেকে আট হাজার ছয় শ’র মতো কৃষক আবেদন করেন। এরমধ্যে লটারিতে বিজয়ী হন দু’ হাজার আট শ’ ৬২ জন। বিজয়ীদের মধ্যে তিন ক্যাটাগরির কৃষক ছিলেন। তারা হচ্ছেন, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড়। লটারিতে বিজয়ী হন এক হাজার আট শ’ ৫০ ক্ষুদ্র, ছয় শ’ ৯৫ মাঝারি এবং তিন শ’ ১৭ বড় কৃষক। ক্ষুদ্র কৃষক সর্বোচ্চ ২৫ মণ, মাঝারি কৃষক সর্বোচ্চ ৪০ মণ এবং বড় কৃষক সর্বোচ্চ ৬০ মণ করে ধান খাদ্যগুদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করার সুযোগ পান। কিন্তু বিজয়ী এসব কৃষকের বেশিরভাগ খাদ্যগুদামমুখী হননি। কারণ হিসেবে খাদ্য ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর বাজারে ধানের দাম বেশি। এ কারণে অধিকাংশ কৃষক ঝামেলায় জড়াতে চাননি। এত গেল বোরো ধান সংগ্রহের চিত্র। চাল সংগ্রহের চিত্র প্রায় একই রকম। বোরো মৌসুমে চাল দেয়ার জন্য জেলার তিন শ’ ৫১ মিলার চুক্তিবদ্ধ হন। তারা ২৭ হাজার তিন শ’ ১২ মেট্রিকটন চাল দেবেন বলে চুক্তি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই চুক্তির প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন তারা। ধানের দাম বেশি উল্লেখ করে পুরোপুরি চাল দেয়নি মিলাররা। অথচ চুক্তি অনুযায়ী প্রত্যেক মিলারের চাল দেয়া বাধ্যতামূলক। খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তি করার পরও যেসব মিলার বিভিন্ন অজুহাতে চাল দেয়নি তাদের তালিকা তৈরি করা হবে। আগামীতে তারা যাতে কোনভাবে চুক্তিবদ্ধ হতে না পারে সেই ব্যবস্থা করবেন তারা। একইসঙ্গে মিলের লাইসেন্সও বাতিল করা হতে পারে। যশোরে এ বছর ২৪ অটো রাইসমিল এবং তিন শ’ ২৭ টি হাসকিং মিল মালিক চাল দেবেন বলে চুক্তিবদ্ধ হন। সংগ্রহ অভিযান সম্পর্কে কথা হয় যশোর সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি জানান, বোরো মৌসুমে তার গুদামে তিন হাজার আট শ’ ৫৮ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল, ছয় শ’ ৭৩ মেট্রিকটন আতপ চাল এবং দু’ হাজার দুশ’ ৫১ মেট্রিকটন ধান কেনা হয়েছে। এই দুরবস্থার মধ্যে এমন সংগ্রহে খুশি তিনি। এ বিষয়ে যশোর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, সংগ্রহের সময় শেষ হয়েছে। ধানের দাম বেশির কথা বলে চুক্তিবদ্ধ মিলাররা পুরোপুরি চাল দেয়নি। শেষ পর্যন্ত ৫৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। এখন খাদ্য অধিদফতরের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। যেভাবে নির্দেশনা আসবে সেইভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য কর্মকর্তা।
×