ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুলক সেন

চরিত্রাভিনেতা সাদেক বাচ্চু

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

চরিত্রাভিনেতা সাদেক বাচ্চু

সাদেক বাচ্চু। এই নামটির সঙ্গে মিশে আছে আমাদের অভিনয় শিল্পের একটা লম্বা অধ্যায়। বিশেষ করে, যে সব দর্শক আশি এবং নব্বই দশকের তাদের কাছে সাদেক বাচ্চু মানে একজন শক্তিশালী চরিত্রাভিনেতা। মঞ্চ, টিভি এবং বড় পর্দার এই তারকা অভিনেতা গত দুদিন হয় পৃথিবীর এই রঙ্গ মঞ্চ ছেড়ে অনন্তলোকে পাড়ি জমিয়েছেন। ঢাকাই সিনেমার সোনালি যুগ বলে যে সময়টাকে স্মৃতি হাতড়ে উল্লেখ করা হয় সাদেক বাচ্চু সেই সোনালি অতীতের উজ্জ্বল স্মৃতির নাম। মানুষ যে সময় মুখ চেনা অভিনেতাদের সিনেমা দেখতে হলে যেত সে সময় সাদেক বাচ্চু তার অসামান্য অভিনয়ে দর্শকের কাছে একজন নির্ভরযোগ্য শিল্পী হয়ে ওঠেন। যদিও আশির দশকে তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘রামের সুমতি’ দর্শকদের কাছে তার জাত চেনাতে সাহায্য করেছে। পরবর্তীতে নব্বই দর্শকের জনপ্রিয় জুটি শাবনাজ-নাঈমের একাধিক হিট সিনেমায় তার শক্তিশালী উপস্থাপন দর্শকদের কাছে একটা আলাদা অবস্থান তৈরি করেন। বিশেষ করে, চাঁদনি, দিল, সোনিয়া, চাঁদনি রাতের মতো দর্শক নন্দিত সিনেমা নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে তাকেও খ্যাতির শীর্ষে তোলে। একই দশকে সালমান শাহ্ আভিনীত সুজন সখী, আনন্দাশ্রু যেমন আলোচিত হয় তেমনি সাদেক বাচ্চুর খল অভিনয়ও দর্শকদের কাছে আলাদা মাত্রা পায়। রাজধানী শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় সাদেক বাচ্চু হয়ে ওঠেন পরিচিত মুখ। একই দশকে তার অভিনীত অসংখ্য সিনেমা যেমন সুপার হিট হয় তেমনি নতুন শতাব্দীর বহু সিনেমা! আসলে টিভি কিংবা মঞ্চ সব উতরে তিনি হয়ে ওঠেন বড় পর্দার শক্তিশালী অভিনেতা। সাদেক বাচ্চুর জন্ম এবং বড় হওয়া ঢাকা শহরে। ছোট বেলা থেকে সে সময়ের সংস্কৃতিচর্চার শহর ‘ঢাকা’ তাকে সংস্কৃতিচর্চায় উদ্বুদ্ধ করে। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় রবীন্দ্রনাথের ‘ডাক ঘর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন এবং নিজের ভবিষ্যতও তিনি ঠিক করেন। যদিও কর্মজীবনে সাদেক বাচ্চু একজন সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন তারপরও তাঁর ভেতর একটা শক্তিশালী সাংস্কৃতিক চেতনা সব সময় জাগ্রত ছিল। যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মাহবুব আহমেদ সাদেক থেকে বোনে যান ‘সাদেক বাচ্চু’Ñ বাংলার কোটি ভক্তের হৃদয়ে। সত্তরের দশকে সাদেক বাচ্চু মঞ্চ, টিভি এবং বেতারে নিয়মিত অভিনয় করেছেন। পৌনে দুই ঘণ্টার একক অভিনয়ের নাটকও তিনি সার্থকভাবে উপস্থাপন করেছেন। ঢাকার নাট্যপ্রেমীদের কাছে সাদেক বাচ্চু একজন সংগঠক, নাট্য নির্দেশক এবং নাট্যকার বটে! নিজ উদ্যোগে গড়েছেন নাটকের দল। অন্যদিকে টিভি নাটকে তার অভিনীত শত শত নাটক গৃহস্থ দর্শকদের কাছে আজ দীর্ঘ স্মৃতির ডায়েরি হয়ে আছে। এই গুণী মানুষটিকেও মহামারীর কালো ¯্রােতে পড়ে জীবন দিতে হলো। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন করোনাভাইরাসে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বছরটা শুরু হতেই যে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে তাতে করে সত্যিই ভয় হয় কখন কোন নক্ষত্র অন্ধকারে হারিয়ে যায়। আমরা চাই না এই কালরাত আমাদের আরও গ্রাস করুক! আর কোন সাদেক বাচ্চুর জীবন নিয়ে নিক। এমনিতেই সংস্কৃতিচর্চার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। শেষ প্রদ্বীপটাও যেন নিভে না যায় এবং পুনর্বার যেন পূর্ণ আলোক রশ্মীতে জ্বলে উঠতে পারে আমাদের শিল্পী-সংস্কৃতি- এমনটাই আশা প্রয়াত সাদেক বাচ্চু, মহিউদ্দিন বাহার এবং কে এস ফিরোজদের...
×