ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টাইগারদের শ্রীলঙ্কা সফর

আশার আলো- শর্ত শিথিলের উদ্যোগ নিচ্ছে লঙ্কান বোর্ড

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

আশার আলো- শর্ত শিথিলের উদ্যোগ নিচ্ছে লঙ্কান বোর্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর নিয়ে অনেক জল ঘোলা হচ্ছে। যে শর্তগুলো দেয়া হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশকে আতিথ্য দিতেই চাচ্ছে না শ্রীলঙ্কা! তবে এ সফর নিয়ে এখন আশার আলো আছে। শর্ত শিথিল করার পথে আছে শ্রীলঙ্কা। শর্ত শিথিল হলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের শ্রীলঙ্কায় সফর করতে বাধা থাকবে না। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল পাঠিয়ে দুটি শর্ত কোনভাবেই মানতে রাজি নয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। একটি, ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকা। এই সময়ে কোন অনুশীলন করার সুবিধা না পাওয়া। দ্বিতীয়, সবমিলিয়ে ৩০ জনের দল হতে হবে। এই শর্তগুলো শেষপর্যন্ত বজায় থাকলে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া যে কঠিন, তা বলেই দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা একটি বার্তাই ওদের দিতে চাই, ওরা যে শর্তাবলী দিয়েছে, এটা ইতিহাসে বিরল। এটা দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সম্ভব নয়। এই বার্তাই ওদের দিতে চাই। তারপর ওরা যদি বলে যে, ‘আসো আলাপ আলোচনা করি,’ তখন আমরা দেখব কী বলা যায় বা কোথায় শিথিল করতে বলব। তবে এই কন্ডিশনে খেলা হবে না। অনেক দেশে ৭ দিন কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে, তখনও নিজেদের মধ্যে প্র্যাকটিস করতে পারছে, জিম ব্যবহার করতে পারছে। শ্রীলঙ্কা যা বলল, তাতে ১৪ দিন কেউ হোটেলে ঘর থেকেই বের হতে পারবে না। খাওয়া-দাওয়াও ঘরে করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সাধারণত যা হয়, সফরে গেলে বল থ্রো করার জন্য থ্রোয়ার দেবে, নেট বোলার দেবে, যে কোন দেশে গেলেই দেয়। ওরা এটাও দিচ্ছে না। সেটাও না হয় বুঝলাম ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের এখান থেকেও নিতে দেবে না। ওরা কী বলতে চাচ্ছে, আমি বুঝছি না। এটা তো ছেলেখেলা নয়, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ!’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘৩০ জনের মধ্যে নেট বোলার, থ্রোয়ার, সিকিউরিটি, মেডিক্যাল টিম, সবই আমাদের নিতে হবে। তাহলে ক্রিকেটারই তো নিতে পারব না! ওরা বলেছিল যে ওদের ওখানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভাল। সেজন্যই আমরা বড় স্কোয়াড নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন প্র্যাকটিসই করতে দিচ্ছে না। যেখানে আমাদের ক্রিকেটাররা ৭ মাস ধরে খেলায় নেই, ওখানে গিয়েই প্র্যাকটিস করতে পারব না, এটা তো হয় না। এসব চিন্তা করে আমরা ঠিক করলাম যে, আমরা জানিয়ে দেব, আমাদের চিন্তাধারার সঙ্গে ওদের বাস্তবের কোন মিল নেই। ওরা যেটা দিয়েছে, এটা মেনে কোন অবস্থাতেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা সম্ভব নয়। তার পর দেখি ওরা কী বলে।’ বিসিবি সভাপতি এমন কথা বলার পর, কড়া জবাবের পর ব্যাপারটি নজরে পড়েছিল শ্রীলঙ্কার যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নামাল রাজাপাকসের। লঙ্কান বোর্ডকে তিনি বলেছেন, দেশের কোভিড টাস্কফোর্সের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে। তিনি টুইট করে জানান, ‘আমরা সবাই জানি যে কোভিড-১৯ মহামারী এখনও বিশ্বজুড়ে প্রবলভাবে বিরাজমান, এই অবস্থায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাই সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে এই অঞ্চলের ক্রিকেটের স্বার্থে আমি এসএলসিকে বলেছি কোভিড টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে আলোচনা করে বিসিবির ব্যাপারটি পুনর্বিবেচনা করতে।’ এই মাসের শেষ দিকে, ২৭ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের। শেষ মুহূর্তে এসে এমন হচ্ছে। তবে শ্রীলঙ্কার যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রীর কথায় আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি) চেয়ারম্যান শাম্মি সিলভা যা বলেছেন তাতে আবার অনিশ্চয়তার দেখা মিলতে শুরু করেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘যদি তারা (বিসিবি) এটি উল্লেখ করে থাকে তবে এটি ভুল। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না কেন এক সপ্তাহের কথা বলছে? ৭ দিনের কোয়ারেন্টাইন সময়সীমা হবে এমন কোন আলোচনা বিসিবির সঙ্গে হয়নি। আমরা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত সময়কালের বাইরে যেতে পারি না। নিশ্চিতভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশ দলকে এখানে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এখানে আসার আগেও বাংলাদেশকে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে এবং কলম্বোতে পৌঁছার পর তাদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এ সময় সব খরচ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বহন করবে। কোয়ারেন্টাইন নিয়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের বেশি কিছু করার নেই।’ এমন কথার পর সফর যে ঝুলেই গেছে, তাই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কার গণমাধ্যমে, দ্য আইল্যান্ডে এ নিয়ে একটি রিপোর্ট হয়েছে। তা যদি সঠিক হয়, তাহলে সফর নিয়ে আশার আলো আছে। সফর নিয়ে বিসিবির কড়া জবাবের পর শর্ত শিথিলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে আছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট ও দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ নিয়ে মৌখিক আলোচনা করেছে। আলোচনা ফলপ্রসূও হয়েছে। তাই সরকারকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন সাত দিনে নেমে আসতে পারে। ৩০ জনের বহরে আরও পাঁচজন যুক্ত হতে পারে। এছাড়া ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) যে জৈব সুরক্ষা বলয় অনুসরণ করে করোনা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, শ্রীলঙ্কায়ও সেটি মেনে চলার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সরকার থেকে এখনও কোন সিদ্ধান্ত পায়নি শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। তবে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছে, শর্ত শিথিলে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে সরকার। আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত আসবে শীঘ্রই। মাঠে ক্রিকেট ফেরাতে শ্রীলঙ্কাও চেষ্টা করছে। বিসিবিও চাচ্ছে ক্রিকেটারদের যেন খেলানো যায়। না হলে দুই দলের ক্রিকেটারদেরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর না খেলেই এ বছর শেষ করতে হবে। করোনার কারণে ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ইংল্যান্ড সিরিজ স্থগিত হয়েছে। ঘরের মাঠে একাধিক সিরিজ স্থগিত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন দেশটির ক্রিকেট বোর্ড। আবার এশিয়া কাপও হয়নি। এজন্য বাংলাদেশ সিরিজ আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরাতে মুখিয়ে তারা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তিন টেস্ট শেষ পর্যন্ত হবে, এমন আশা এখনও আছে।
×