ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাফুফে নির্বাচন ২০২০

নিজেকে সফল দাবি করেছেন সালাউদ্দিন

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

নিজেকে সফল দাবি করেছেন সালাউদ্দিন

রুমেল খান ॥ কাজী সালাউদ্দিন স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুটবল তারকা। দীর্ঘদিন জাতীয় দলের হয়ে মাঠ মাতানোর পাশাপাশি কোচ হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০০৮ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চতুর্থবারের মতো বাফুফের প্রধান পদে লড়ছেন তিনি। আগামী ৩ অক্টোবর বাফুফের নির্বাচন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ সরব। ‘বয়কট সালাউদ্দিন’ হ্যাশট্যাগে তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পেন চলছে। এ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধনও হয়েছে। প্রতিবারের তুলনায় এবারের নির্বাচন নিয়ে বেশি আলোচনা চলছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই নির্বাচন নিয়ে সরব। এগুলো কি বাড়তি প্রভাব ফেলেছে সালাউদ্দিনের ওপর? ‘আমার ফেসবুক আইডি নেই। জানি, আমাকে অনেকে গালিগালাজ করে। এক হাজার লোক আমাকে গালি দেয়ার পাশাপাশি নামটাও ভুল লিখেছে। কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ লিখেছে! নাম তো একজন ভুল করতেই পারে। কিন্তু এক সঙ্গে হাজার মানুষ একইভাবে নাম ভুল করছে। অর্থাৎ একটি পক্ষই এসব নিয়ন্ত্রণ করছে। তাই আমি বলি এসব ভুল তথ্য।’ সালাউদ্দিনের জবাব। তিনি আরও বলেন, ‘টিভিতে দেখলাম দাবি উঠেছে সালাউদ্দিনকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েকদিন। আপনি কেন নির্বাচন করতে আসছেন না? আমি তো নির্বাচিত হয়েই এখানে এসেছি। আমি তো আমার নির্বাচন করছি। আপনি নির্বাচনে না এসে আমাকে পদত্যাগ করতে বলছেন। আপনি কে, আপনার যোগ্যতা কী? যদি এমন হতো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আপনার সাংগঠনিক কোন বড় অবদান আছে, তাও মেনে নিতাম। গণমাধ্যমে এসে গালাগালি করলেন। কিন্তু গণমাধ্যমও তার কথা তুলে ধরছে, যা ভিত্তিহীন। আমি যদি অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে সমালোচনা করি। তাহলে দেখতে হবে অর্থনীতিতে আমার জ্ঞান কতটুকু। যারা আমাকে গালি দিচ্ছে, বলছে পদত্যাগ করতে তাদের যোগ্যতা কী? ফুটবলে আমার ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা। খেলোয়াড়, কোচ ও সংগঠক হিসেবে কাজ করছি।’ গত ১২ বছরে জাতীয় দলের ম্যাচ জয়ের সংখ্যা খুবই কম। চতুর্থবারের মতো সভাপতি পদে জয়ী হলে কোন কোন বিষয়ে আমূল পরিবর্তন আনতে চান? সালাউদ্দিনের ভাষ্য, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৫০ বছর। আমরা সময়টাকে সোনালি অতীত বলি। মাঠে দর্শক ছিল। তখন কিন্তু ঢাকায় জাতীয় দল আসত না। ক্লাবগুলো আসত। আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে জিতেছি প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ। বিষয়টি গৌরবের হলেও আমরা আসলে দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয় দলের বিপক্ষে জিতেছিলাম। এখন আমরা কোরিয়ান জাতীয় দলের বিপক্ষে মাঠে নামি। গত ৪০ বছরের মধ্যে ৫ শতাংশ বেশি জয় রয়েছে আমার সময়ে। আমাদের সবার স্বপ্ন দল ভাল করুক। জাতীয় দলে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেই। কোচিং স্টাফকেই কয়েক কোটি টাকা বেতন দিচ্ছি। আমাদের সময় এগুলো ছিল না। আগে ম্যাচের আগের দিন বিদেশ পৌঁছতাম। এখন সাত/আটদিন আগে পৌঁছে যাই। প্রস্তুতি ক্যাম্প গ্রহণ করি। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করছি। খেলোয়াড়দের ভাল করতে হবে। গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রয়েছে। আমি সভাপতি, তবে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে পুরো দেশকে এক কাতারে দাঁড়াতে হবে। আমি কোন চমক দেখাতে আসিনি। ১২ বছর ধরে ১১টা লীগ হয়েছে। সব খেলাধুলা নিয়মিত হচ্ছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লীগ নিয়মিত হচ্ছে। সব জায়গায় খেলা হচ্ছে। একটা বেজ তৈরি হয়ে গেছে। একটা ৩০-৩২ তলা বিল্ডিং করতে ফাউন্ডেশন তৈরি করতে হয়। আমার এই সময়টা লেগেছে ফাউন্ডেশন তৈরি করতে। এখন সময় হয়েছে ৩০ তলা বিল্ডিং তৈরি করার। খেলোয়াড়রা এখন দামী গাড়ি চালায়। আগে ১/২ লাখ টাকা পেত। এখন ৬০/৭০ লাখ টাকা পায়। আমার নিয়ত হচ্ছে লীগের যে মান, সেটাকে দিনের পর দিন আরও বড় করে তোলা।’ সালাউদ্দিন জানান, প্রত্যেক নির্বাচনই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আরও জানান, ‘ফেডারেশন কখনও ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করে না। টুর্নামেন্টগুলো আয়োজন করে, জাতীয় দলের কোচ নেয় ও ডিসিপ্লিনটা মেনটেন করে। ইউরোপের সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারব না বলে একাডেমি, ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট এবং নারী ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করি। ক্লাবগুলোকে দোষ দিতে পারি না, তাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। অবশ্য গত ১০ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে, ক্লাবগুলোর অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আজকাল খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে খুব একটা সমস্যা হয় না। অনেক নিয়মের মধ্যে চলে এসেছে সবকিছু। আমার মনে হয়, আমরা ৭০-৮০ ভাগ কাজ করে ফেলেছি। আগামী পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসবে।’ বাংলাদেশের ফুটবল দর্শকের উদ্দেশে সালাউদ্দিন বলেন, ‘তাদের কাছে আমার একমাত্র চাওয়া, আপনারা খেলা দেখেন; দেখে জানান, বাংলাদেশের ফুটবল আগের চেয়ে উন্নতি করেছে কি না। আপনারা টকশো দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন না।’ নিজের সময়কালকে সফল দাবি করেছেন সালাউদ্দিন। বাদল রায়, তরফদার রুহুল আমিনকে চাপ প্রয়োগ করে সরিয়ে দেননি বলেও দাবি করেছেন। বরং প্রতিপক্ষের উপর সম্মান রেখে নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আহ্বান জানিয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘আমি তিনবার নির্বাচন করেছি। তিনবারই প্রমাণ দিয়েছি। যারা সরে দাঁড়িয়েছেন তাদের বলব নির্বাচন করে নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণ করেন।’ গত ১২ বছরের ব্যর্থতার দায়ভার কেন গোটা কমিটিকে না দিয়ে শুধু সালাউদ্দিনকে দেয়া হয়? ‘যেহেতু প্যানেল আমার দায়িত্বে থাকে, সেহেতু দায়-দায়িত্ব সব আমার কাঁধেই বর্তায়। সেটা আমি মানছি।’
×