ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবের ঢের বাকি, তবে বইতে শুরু করেছে পূজার হাওয়া

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

উৎসবের ঢের বাকি, তবে বইতে শুরু করেছে পূজার হাওয়া

মোরসালিন মিজান ॥ আশ্বিন শুরু হয়ে গেছে। শরতের দ্বিতীয় মাস এটি। এ মাসেই উদ্যাপিত হয় শারদীয় দুর্গোৎসব। সচরাচর তাই দেখা গেছে। তবে এবার ব্যাপার ভিন্ন। আশ্বিনে নয়, পূজা হবে কার্তিকে। এক মাসের ব্যবধান। লম্বা সময়। তবে প্রকৃতিতে ঠিক বইতে শুরু করেছে পূজার হাওয়া। আর যেন তর সইছে না বাঙালীর! তা কেন এবার পেছাতে হলো শারদ উৎসব? অনেকের মনেই প্রশ্ন। উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, মল মাসের কবলে পড়েছে আশ্বিন। এ কারণেই বিলম্ব। কোন এক মাসে যদি দুটি অমাবস্যা পড়ে যায় তবে সে মাসটিকে বলা হয় মল মাস। যে কোন মাসে দুটি অমাবস্যা পড়তে পারে। ওই মাসটিকে তখন মল মাস হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পঞ্জিকার হিসাব যারা ভাল বুঝেন তাদের মতে, দুই বছর তিন মাস থেকে দুই বছর নয় মাসের ব্যবধানে হানা দেয় মল মাস। সে হিসেবে ১৮ কিংবা ১৯ বছর পর পর শিকারে পরিণত হয় আশ্বিন। এর আগে ২০০১ সালে এমনটি দেখো গেছে। তার পর চলতি বছর ঘটল একই ঘটনা। মল মাসের কবলে পড়ল পূজার মাস আশ্বিন। কবলে পড়ল বা শিকারে পরিণত হলো বলার কারণ মল মাসকে অশুভ জ্ঞান করা হয়। এ মাসে কোন শুভ কাজে হাত দেয়া হয় না। একই কারণে হয় না পূজাপার্বণ। এবারের দুর্গোৎসব তাই কার্তিকে গড়াচ্ছে। তার আগে আজ বৃহস্পতিবার মহালয়া। দিনটি ঘিরে যৎসামান্য আনুষ্ঠানিকতা থাকবে বটে। এর পর লম্বা বিরতি। ৬ কার্তিক ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল উৎসব। পাঁচ দিনের শারদীয় আয়োজন দশমী পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হবে। তবে উৎসবের অনেক বাকি থাকলেও, পূজা যে আসছে তা চারপাশে তাকালে এখন বোঝা যায়। বদলে যাওয়া প্রকৃতি উৎসবের আগমনী ঘোষণা করছে। ইতোমধ্যে কাশফুলে ভরে উঠেছে নদীর ধার। মৃদু হাওয়ার কী সুন্দর দুলছে! গ্রামে জলাভূমিতে ঘন হয়ে ফুটে আছে কাশফুল। দুরন্ত ছেলেমেয়েরা ছোট্ট ডিঙি নৌকা নিয়ে বনের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। সংগ্রহ করছে কাশের গুচ্ছ। কাশফুল দৃশ্যমান হয়েছে ঢাকার আশপাশেও। উত্তরা সংলগ্ন দিয়াবাড়িতে বিস্তীর্ণ খোলা অঞ্চলের প্রায় পুরোটাজুড়ে কাশবন। উপরে নীল আকাশ, সাদা মেঘের ভেলা। নিচে শুভ্র সুসজ্জিত প্রান্তর। নগরবাসী সময় পেলেই সেখানে ছুটে যাচ্ছেন। তন্বী তরুণীরা আলত করে জড়িয়ে ধরছেন কাশের গুচ্ছ। ছবি তুলছেন। এমন হাসিরাশি আনন্দ শারদীয় দুর্গোৎসবেরই প্রাক সূচনা বলে মনে হয়। এদিকে শারদের অর্ঘ্য হয়ে ফুটেছে শিউলী। নজরুল লিখেছিলেন, ‘এসো শারদপ্রাতের পথিক এসো শিউলি-বিছানো পথে। শিউলীতে বিছানো পথেই আসবেন উমা। সাদা ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণে যেন আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে দেবীকে। প্রতিমা গড়ার কাজও মোটামুটি শুরু হয়ে গেছে। সরব হয়ে উঠছে শাখারীবাজারের সরু গলি। শুধু তো প্রতিমা নয়, প্রতিমা ও ম-প সাজানোর কত কী উপকরণ! সব নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী শাখারীবাজার। পূজার্থীরাও মনে মনে প্রস্তুত। পূজার গন্ধ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। দেশীয় বুটিক হাউসগুলো নতুন জামা কাপড় সেলাইয়ে ব্যস্ত। করোনাকাল চলছে বটে। পূজা আসতে আসতে আর তা থাকবে না, এমন আশায় বুক বাঁধছে দেশীয় সব ফ্যাশন হাউসগুলো। কবিগুরু লিখেছিলেন : ‘আমাদের শরতে বিচ্ছেদ-বেদনার ভিতরেও একটা কথা লাগিয়া আছে যে, বারে বারে নূতন করিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে বলিয়াই চলিয়া যায়- তাই ধরার আঙিনায় আগমনী-গানের আর অন্ত নাই। যে লইয়া যায় সেই আবার ফিরাইয়া আনে। তাই সকল উৎসবের মধ্যে বড়ো উৎসব এই হারাইয়া ফিরিয়া পাওয়ার উৎসব।’ আশ্বিনে হারানো উৎসব কার্তিকে ঠিক ফিরবে। আশ্বিন তথা শরত ঋতুর বাইরে চলে গেলেও, শারদীয় উৎসব রূপেই পাওয়া হবে আবার। এখন শুধু দিন গোনা। সনাতনীরা শুধু নন, শারদীয় উৎসবে মাতবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আপাতত সেই অপেক্ষা।
×