ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুত বিভাগের বৈঠকে সিদ্ধান্ত

পরিকল্পিত শিল্প এলাকার বাইরে বিদ্যুত সংযোগ নয়

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

পরিকল্পিত শিল্প এলাকার বাইরে বিদ্যুত সংযোগ নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিকল্পিত শিল্প এলাকার বাইরে আর কোন বিদ্যুত সংযোগ দেবে না কোন বিতরণ কোম্পানি। এজন্য এসব শিল্প এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার বিদ্যুত বিভাগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকার পরিকল্পিত এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। এজন্য সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। কিন্তু উদ্যোক্তারা অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পিত এলাকার বাইরে গিয়ে নিজেদের পছন্দের জায়গাতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। এতে করে নিয়ন্ত্রণে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশে পরিকল্পিত এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যতটা সহজ অন্য জায়গাতে তা খুব সহজ নয়। ফলে শিল্প মালিকের প্রধান দাবি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য বিদ্যুতের চেয়ে শিল্প মালিকরা গ্যাস সংযোগ নিচ্ছেন। যাতে করে দিনের পর দিন বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোকে অলস বসে থাকতে হচ্ছে। সরকার গত বছর শিল্প মালিকদের গ্রিডের বিদ্যুত নেয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু শিল্প মালিকরা এজন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের দাবি করে। কিন্তু গত এক বছরে বিতরণ কোম্পানি নিরবচ্ছিন্ন শিল্প বিদ্যুত সরবরাহে বিশেষ কোন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এতে উল্লেখযোগ্য ভাবে শিল্প সংযোগ বৃদ্ধি পায়নি। উদ্যোক্তারা দুটি কারণে এটি করছেন না বলে মনে করা হচ্ছে। এর প্রথমটি নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ হলেও গ্রিডের বিদ্যুতের বাড়তি দর এর আরও একটি কারণ। গ্রিড থেকে বিদ্যুত নিলে যে পরিমাণ খরচ হয় তার অর্ধেক খরচে গ্যাস জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা যায়। এজন্য বড় শিল্প কারখানার মালিকরা বিদ্যুত সংযোগ না নিয়ে গ্যাস সংযোগ নেয়। আর তা দিয়েই বিদ্যুত উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মেটায়। এখন সারাদেশে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট ক্যাপটিভ বিদ্যুত উৎপাদন করে উদ্যোক্তারা। গ্যাস জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন করতে গিয়ে প্রচুর গ্যাসের অপচয় হয়। উচ্চদামে এলএনজি আমদানি করে তা কম মূল্যে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এরপর ক্যাপটিভের এই অপচয় এখন সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এমন শিল্প কারখানা রয়েছে যেখানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের প্রয়োজন হয়। কোন কারণে সেসব শিল্পে এক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হলে কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য তাদের ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে বিদ্যুত সংযোগে উৎসাহিত করা যাবে না। সঙ্গত কারণে সরকার গত বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে কি করা যায় সেজন্য একটি বিশেষ কমিটি করেছিল। ওই কমিটি একটি প্রতিবেদনও দিয়েছিল। তবে তা বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ বিষয়। এজন্য এখন পরিকল্পিত এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে। বুধবার বৈঠকে বিতরণ কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে জানানো হয় তারা এখন পরিকল্পিত এলাকায় সংযোগ দেয়ার কথা ভাবলেও অপরিকল্পিত এলাকায় বহু শিল্প সংযোগ রয়ে গেছে। এসব সংযোগে বিদ্যুত সরবরাহ করতে হচ্ছে। তবে এখন পরিকল্পিত এলাকার বাইরে আর কোন সংযোগ না দেয়ার বিষয়ে তারা উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করছেন। বিদ্যুত জ্বালানি খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিদ্যুত সচিব ড. সুলতান আহমেদ, জ্বালানি বিভাগের সচিব আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল জলিল, সকল বিতরণ কোম্পানির প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার শিল্প কারখানার বিস্তারে পরিকল্পিত এলাকাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এখানে সংযোগ দিলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব। এর বাইরে শিল্প কারখানা স্থাপন করলে যা সম্ভব নয়। উদ্যোক্তারা যদি এসব বিষয় চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে বিদ্যুত সংযোগ পেতেও তাদের কোন সমস্যা হবে না। বিদ্যুত বিভাগ বলছে এখন সারাদেশে ৯৮টি অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। এরমধ্যে ৬৯টি সরকারী এবং বাকিগুলো বেসরকারী মালিকানাধীন। গত বছর অক্টবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে পরিকল্পিত শিল্প এলাকায় বিদ্যুত সংযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার আলোকে বিদ্যুত বিভাগ সকল বিতরণ কোম্পানিকে কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলেছিলেন। কিন্তু এখনও এসব বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি।
×