ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সমস্যা হবে না

খাদ্যশস্য মজুদ পর্যাপ্ত, সাড়ে ১৪ লাখ টন

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

খাদ্যশস্য মজুদ পর্যাপ্ত, সাড়ে ১৪ লাখ টন

তপন বিশ্বাস ॥ অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও সরকারের পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে উঠেছে। বর্তমানে সরকারের গুদামে মজুদ রয়েছে সাড়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য। এবারের বোরো সংগ্রহ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন ধান-চাল। সংগ্রহের লক্ষমাত্রা ছিল সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন। এ ব্যাপারে খাদ্যসচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানম জনকণ্ঠকে বলেন, সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও বর্তমানে আমাদের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বিলি-বিতরণের জন্য যতটুকু দরকার তা আমাদের আছে। প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে এবং আমন ফসল ঠিকমতো তুলতে পারলে কোন রকম সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, বিগত বছর এই সময় মুজদ তিন লাখ মেট্রিক টন বেশি ছিল। এই বেশি মজুদ নিয়ে আমরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছিলাম। বেশি মজুদ থাকা খাদ্যশস্য যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য বিভিন্ন প্রকার কর্মসূচী করা হয়েছিল। ভিজিএফসহ এই কর্মসূচীর মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়। এবার পর্যাপ্ত মজুদও রয়েছে, একই সঙ্গে কৃষকও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে। তিনি বলেন বর্তমানে আমাদের মজুদ সাড়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রা বেশি নির্ধারণ করা হয়, কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পায়। এছাড়া বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনার ছোবলে দেশে যাতে কোন খাদ্য সঙ্কট তৈরি না হয়, সে বিবেচনায় এবার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বেশি নির্ধারণ করা হয়। সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ দিন পর্যন্ত ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহ করা গেছে। ঘাটতি রয়েছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৯৪ মেট্রিক টন। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও কোন খাদ্য সঙ্কট হবে না। তারা বলছেন, সাড়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ৩১ আগস্ট ছিল শেষ দিন। তবে ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু করে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও সংগ্রহ করতে পারেনি সরকার। এ কারণে সময় আরও ১৫ দিন বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর করা হয়। সর্বশেষ সময় পার হলেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ঘাটতি রয়েছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৯৪ মেট্রিক টন। খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকার ১৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান-চাল সংগ্রহ করার জন্য গত ২৬ এপ্রিল থেকে বোরো ধান এবং ৭ মে থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। সর্বশেষ সময় বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ লাখ মেট্রিক টন। তবে শেষদিন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোরো ধান সংগ্রহ করা হয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। সিদ্ধ চালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ লাখ মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ৬ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭ মেট্রিক টন। আর আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। সংগ্রহ হয়েছে ৯৪ হাজার ৩৪৭ মেট্রিক টন। জানা গেছে, আপৎকালীন মজুতের জন্য সরকার প্রতিবছর আমন ও বোরো মৌসুমে স্থানীয় চালকল মালিকদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে চাল সংগ্রহ করে থাকে। তবে এবার মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বোরো মৌসুমে সরকার এ সংগ্রহ অভিযানকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়। এজন্য এবার ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অন্যবারের চেয়ে আরও বেশি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের লটারি করতে করতেই প্রায় দেড় মাস চলে যায়। এর মধ্যেই কৃষকের হাত থেকে ধান মজুদদারদের গুদামে চলে গেছে। ফলে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সফল হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা, আগাম বন্যা ও সারাবিশ্বে দুভিক্ষের আভাস পেয়ে অনেক গৃহস্থ এবার ধান হাতছাড়া করেননি। যারা মজুদদার তারাও ধান কাটা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধান ক্রয় করা শুরু করেন। মিলাররাও এ সময় ধান মজুদ করেন। ফলে যেসব কৃষক ধান বিক্রি করেছেন, সেগুলো ইতোমধ্যে মজুদদারদের গুদামে চলে গেছে। মিলারদের সঙ্গে চালের জন্য সরকারের যে চুক্তি হয়েছে, সে চুক্তি অনুযায়ী অনেক মিলাররাও চাল দিতে পারেননি। চাল কেনার জন্য কেজি ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। তবে একই চাল বাজারে ৪০-৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মিলাররা বলছেন, বেশি দামে ধান কেনার কারণে কম দামে সরকারকে চাল সরবরাহ সম্ভব হয়নি। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও কোন সমস্যা মনে করছেন না খাদ্যসচিব। তিনি বলেন, আমাদের খাদ্যের কোন সঙ্কট হবে না। খাদ্য নিরাপত্তায় আমরা ভাল অবস্থানে আছি। কারণ সাড়ে ১৪ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য আমাদের স্টকে আছে। তাছাড়া আর কিছুদিন পরেই আমনের মৌসুম শুরু হবে। আমন মৌসুমে আমরা ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারলে খাদ্যের ব্যাপারে কোন সঙ্কট সৃষ্টি হবে না।
×