ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের দাম দ্রুত নিয়ন্ত্রণে দশ পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

পেঁয়াজের দাম দ্রুত নিয়ন্ত্রণে দশ পদক্ষেপ

এম শাহজাহান ॥ পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমাতে জরুরী ভিত্তিতে ১০টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারী এসব উদ্যোগের মধ্যে বিকল্প উৎস থেকে দ্রুত আমদানি, ভারত থেকে আমদানিকৃত ট্রাক বোঝাই পেঁয়াজ দেশে নিয়ে আসা, দ্রুত এলসি নিষ্পত্তি, অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুদকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, আমদানি শুল্ক কমানো এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির মতো কার্যক্রম রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আগামী তিনমাস চলার মতো প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ দেশে মজুদ আছে। এ কারণে ভোক্তাদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু কিনুন। আগামী এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে দ্রুত নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমানোর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ভোক্তার স্বার্থে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে। বুধবার সচিবালয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে পেঁয়াজের বর্তমান মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন। ওই সময় পেঁয়াজ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মন্ত্রী। তিনি জানান, এটা ঠিক ভারতের রফতানি বন্ধের খবরে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছেন। আর এ কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনেকে বিপুল পরিমাণ জরিমানা দিয়েছেন। অপরাধ প্রমাণ হলে আরও কঠিন শাস্তি রয়েছে। প্রসঙ্গত, বুধবার ঢাকার বেশিরভাগ বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ জাত ও মানভেদে ১০০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকায়। এর আগে সোমবার প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে খুচরা বাজারে। অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে মঙ্গলবার দ্বিগুণ দাম বেড়ে যায় পেঁয়াজের। দেশব্যাপী ৫৩টি বাজার মনিটরিং টিম ১০৭টি অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে অসাধু ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এতে প্রমাণ হয়েছে সারাদেশে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি হয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষা করছে ভারতীয় পেঁয়াজ বোঝাই ১৬৫ ট্রাক। শীঘ্রই অপেক্ষারত পেঁয়াজবাহী ট্রাক ও ট্রেন বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ভারত সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। গত দুইদিনে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে কোন পেঁয়াজের ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি। তবে বন্দরের ওপারে ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে ১৬৫ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায়। যেকোন সময় বাংলাদেশে ঢুকবে ভারতীয় পেঁয়াজের ট্রাকগুলো। বুধবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করে ভোমরা সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের ব্যবসায়ী নেতা মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, যেকোন মুহূর্তে ১৬৫ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢুকবে। এছাড়া ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মাকসুদ খান বলেন, যেসব পেঁয়াজ আগে এলসি করা হয়েছে, সেগুলো যেকোন সময় বাংলাদেশে আসবে। তিনি বলেন, এতদিন এক টন পেঁয়াজ ২৫০ ডলারে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছিল। ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কম হওয়ায় মূল্য বাড়ানোর জন্য পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করা হয়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে গেলে দাম নির্ধারণ করে দেয় ন্যাপেট নামে একটি সংস্থা। ন্যাপেট বর্তমানে এক টন পেঁয়াজের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৭৫০ ডলার। দ্রুত পেঁয়াজ আনতে ১০ উদ্যোগ ॥ দেশে দ্রুত পেঁয়াজের দাম কমাতে ১০টি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে পেঁয়াজ রফতানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র সচিবকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ স্থলবন্দর হতে দ্রুত সময়ে ছাড় করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য বন্দর ও এনবিআর চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে। আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ, পেঁয়াজের দ্রুত সংনিরোধ সনদ ইস্যুকরণে কৃষি মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ, বাজার মনিটরিং জোরদার করা, পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চলে নজরদারি বাড়ানো, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের বাজার মনিটরিং করার জন্য পত্র প্রেরণ, পেঁয়াজ আমদানিতে এলসি সহজীকরণে গবর্নরকে চিঠি, ই-কমার্সের মাধ্যমে পেঁয়াজ রফতানি এবং ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকদের পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য পরামর্শ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, তুরস্ক থেকে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করছে টিসিবি। এর পাশাপাশি মেঘনা, এস আলম এবং সিটি গ্রুপ পেঁয়াজ আমদানি করবে। এ কারণে আগামী এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দাম আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বাণিজ্যমন্ত্রী জানালেন তিন মাস চলার মতো দেশী পেঁয়াজ মজুদ আছে ॥ সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আগামী তিন মাস চলার মতো পেঁয়াজ দেশে মজুদ আছে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছে। এছাড়া ভোক্তাদের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কেনায় দাম বেড়ে গেছে। যে দুই কেজি কিনত সে ১০ কেজি কিনছে, তাই হঠাৎ করে বাজারে চাপ পড়েছে। এ মুহূর্তে দেশে প্রায় ছয় লাখ টন মজুদ রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আগামী জানুয়ারি নাগাদ ১০ লাখ টন লাগবে, ঘাটতি আছে চার লাখ টন। গত কয়েকদিন ধরে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা এক মাস সময় পেলে তুরস্ক, মিয়ানমার, চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। এ সময়টা যদি সহ্য করি, দেশের পেঁয়াজ দিয়ে চালাই, তাহলে সমস্যা হবে না। একটু সহ্য করতে হবে এক মাস। টিসিবি প্রয়োজনে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করবে জানিয়ে টিপু মুনশি বলেন, গতবার যেসব গ্রুপ সহায়তা করেছে তাদের মধ্যে মেঘনা গ্রুপ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে আমদানির বিষয়ে। ভারত থেকে বন্ধ হওয়ার আগেই তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে এলসি খোলা হয়েছে। মানুষ যেন প্যানিক বাই বন্ধ করে, এক মাসের মধ্যে অবস্থা স্বাভাবিক করে ফেলব। দেশে তিন মাস চলার মতো যথেষ্ট পেঁয়াজ রয়েছে, একটুখানি ব্যালেন্স করে চললে বিপদ থেকে পার হতে পারব। এক মাস পর কত দামে পেঁয়াজ দেয়া সম্ভব হবে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যদি আপনারা মানুষকে বোঝাতে পারেন ১০ দিন পেঁয়াজ কিনবেন না, আমি কিন্তু কমে খাওয়াতে পারব। যদি বলেন দুই কেজির জায়গায় ১০ কেজি তাহলে আমি কোন গ্যারান্টি দিতে পারব না। আমি বলছি আমাদের ঘাটতি আছে, এক মাসে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে কালেক্ট করব, এই একটা মাস একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। গত বছরই একইভাবে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছিল, এটি বাংলাদেশকে চাপে ফেলার কৌশল কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, গতবারও বন্ধ করেছিল তার আগেই তারা মিনিমাম প্রাইস বেঁধে দিয়েছিল, সে সময় ১৫০ রুপীতে বিক্রি হয়েছিল। সে সময় আমাদের অন্য মার্কেট থেকে ট্রাই করতে দেরি হয়েছিল। গত ১৫ দিন ধরে দেখছিলাম ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। সেই থেকে আমাদের টিম আলোচনা করে টিসিবিকে এলসি খোলার জন্য বলেছে। মনে করেছিলাম তারা বন্ধ করবে না, মিনিমাম প্রাইস দেবে। কিন্তু তারা হঠাৎ করে বন্ধ করে দিল। ভারত থেকে পেঁয়াজ সস্তায় পাওয়া যায়, একই সময়ে তুরস্ক থেকে আনলে ১০ থেকে ১২ টাকা বেশি হয়, বেশি দাম দিয়ে তো আগে আনা যায় না। যখনই দেখেছি পেঁয়াজের দাম ভারতে বাড়ছে তখনই সঙ্গে সঙ্গে অন্য বাজার থেকে পেঁয়াজ আনার প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে। ভারতের মনের কথা তো সেপ্টেম্বরে না, অক্টোবরে বন্ধ করবে, সেটা তো আমরা জানি না, তারা বন্ধ করে দিয়েছে আমরা বিপদে পড়েছি। ইচ্ছা করলেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করা এবং বাজার তদারকি কেন করা হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা সবাই বোঝেন দেশের বাজারে আমদানি করা ৫০ শতাংশ দিয়ে চলে, এটি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের চাহিদার অর্ধেক বাজারে নেই। আমাদের কাছে যে স্টক আছে তা বেশি দামে বিক্রি করতে চাচ্ছে। লাখ লাখ রিটেইলার ভোক্তা অধিকার কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে, যখনই চাপ দেই তারা পেঁয়াজ হাওয়া করে দেয়, দোকান বন্ধ করে দেয়। জরিমানা করলেও তারা সুযোগটা নেয়। রিটেইলে যে যার মতো বিক্রি করে। দুই কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি না করার নিয়ম করা যায় কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী তা ভেবে বলেন, টিসিবি দুই কেজির বেশি বিক্রি করে না। এটি নোট করে রাখা হলো এটাও দেখব। অনলাইনেও মিলবে টিসিবির পেঁয়াজ ॥ এখন খোলাবাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে (টিসিবি)। পেঁয়াজের অস্থির বাজার সুস্থির করতে খোলা বাজারের পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রি করবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা টিসিবি। টিসিবি গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে খোলা বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। সেখানে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ২ কেজি করে পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। ভারত রফতানি বন্ধ করায় গত বছরের মতো এবারও লাগামহীন হয়ে উঠেছে দেশে পেঁয়াজের বাজার। একদিনের ব্যবধানেই প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রিতে ভাল সাড়া পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ৪০টি ট্রাকে করে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে পেঁয়াজ বিক্রি করব। আমরা খুব আশাবাদী যে মাসে অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার টন পেঁয়াজ ই-কমার্সের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করতে পারব। পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানো হবে ॥ পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমাদের হাতে এটা আছে। যদি রাজস্ব থেকে কোন কিছু করার থাকে অবশ্যই ছাড় দেয়া হবে। অতীতেও বিবেচনা করা হয়েছে এখনও বিবেচনা করা হবে। বুধবার অনলাইনে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। ভারত পেঁয়াজ রফতানির বন্ধের খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, এ প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমানোর জন্য। তারপরও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে জনগণ দুর্ভোগে পড়ছে। এই দুর্ভোগ লাঘবে কি পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের জনগণের দূরদশা বাড়ুক এটা আমরা চাই না। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমরা কেউ এই প্রত্যাশা করি না। ভোক্তাদের স্বার্থে পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। রাজশাহীর বাজারে অভিযান শেষেই বেড়ে গেল পেঁয়াজের দাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, রাজশাহীর বাজারে একদিনের ব্যবধানে এখন দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম চলছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত যেতেই ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে দেন। তবে আধাঘণ্টা পর ম্যাজিস্ট্রেট ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে যায় ফের দাম। বরিশালে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, গত কয়েকদিন থেকে বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করা হয়েছে। বুধবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। মঠবাড়িয়ায় ৩০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করল টিসিবি ॥ সংবাদদাতা, মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) জানান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় সরকারী বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর উদ্যোগে ৩০ টাকা দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে মঠবাড়িয়া পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে এ ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়। আমতলীতে পেঁয়াজের কৃত্রিম সঙ্কট ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বরগুনার আমতলী উপজেলার পেঁয়াজের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে অতিরিক্ত মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। দেশী পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জামালপুরে পাঁচ ব্যবসায়ীকে জরিমানা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জামালপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে পাঁচজন ব্যবসায়ীকে মোট এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মাগুরায় পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের খবরে মাগুরায় পেঁয়াজের মূল্য আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। বুধবার বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ খুচরা ৯০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮২ টাকা কেজিতে। একদিন পূর্বে এই পেঁয়াজের দাম ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছিল। কুড়িগ্রামে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা বন্ধের পরদিন থেকে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার হাটবাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বুধবার সরেজমিনে বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে জানা যায়, একদিনের ব্যবধানে কুড়িগ্রামের জিয়া বাজার ও পৌরবাজারসহ ত্রিমোহণীতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা। সাত দেশ থেকে ৭৯ হাজার টন পেঁয়াজ আসছে ॥ ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, সাত দেশ থেকে ৭৯ হাজার টন পেঁয়াজ আসছে। ভারতের পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৭৯ হাজার ৩৯০ টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে ৩-১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১৭টি আমদানি অনুমতিপত্রের (আইপি) বিপরীতে এসব পেঁয়াজ আসছে।জাহাজে চীন, তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমার, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ড থেকে পেঁয়াজগুলো আনা হবে। উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, ২১ হাজার ৯১১ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য ৬৭টি আমদানি অনুমতিপত্র ইস্যু করেছি আমরা। পেঁয়াজ আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নানা প্রণোদনার কারণে ব্যবসায়ীরা উৎসাহী হচ্ছেন। একজন আমদানিকারক জানিয়েছেন, পচনশীল পণ্য হওয়ায় যত দ্রত সম্ভব রেফার কনটেইনারে পেঁয়াজ আনার চেষ্টা চলছে। পরিমাণ বেশি হলে হিমাগার সুবিধা আছে এমন কার্গো জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজ আনা হবে। যদি ‘কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস’ অনুকূলে থাকে তবে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখা হবে।
×