ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় আওয়ামী লীগই মানুষের পাশে রয়েছে

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনায় আওয়ামী লীগই মানুষের পাশে রয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের কল্যাণে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেছেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলেই এইভাবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছে ও মানুষকে সহযোগিতা করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। অন্য দল হলে এটি মোটেই করত না, বরং তারা দেখত এখান থেকে কিছু ফায়দা লুটতে পারে কিনা। কিন্তু আমরা মানুষের সেবায় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। এটিই আমাদের নীতি, আমাদের লক্ষ্য। এটি জাতির পিতাই আমাদের শিখিয়েছেন। বুধবার গণভবনে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সভায় সূচনা বক্তব্য রাখতে গিয়ে তার বয়স ৭৪ বছর হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাষ্ট্র পরিচালনায় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দিক-নির্দেশনা তৈরির প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্বটা হচ্ছে দেশটা শুধু বর্তমান না, নতুন প্রজন্মের জন্য কীভাবে এগিয়ে যাবে, কীভাবে চলবে- সেটা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে নির্দেশনা দিয়ে রাখব। যেন যারাই ভবিষ্যতে আসুক তারাই এগিয়ে নিতে পারবে। কারণ আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। আমার তো ৭৪ বছর বয়স, আর কতদিন? সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এরপরে যারা আসবে তারা যেন দিকহারা হয়ে না যায়। তাদেরও যেন একটা দিক-নির্দেশনা থাকে, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে।’ করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভার পর এই প্রথম দলের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিম-লীর সভা অনুষ্ঠিত হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভার শুরুতে করোনাভাইরাসে সদ্য প্রয়াত দুই সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও সভাপতিম-লীর সদস্যদের মধ্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ড. আব্দুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মতিন খসরু, আব্দুল মান্নান খান, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সূচনা বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, করোনাভাইরাস ছাড়াও বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে। কারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে সেবা করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা যদি অন্য দলগুলো দেখি তারা হয়ত শুধু ওই লিপ সার্ভিস অর্থাৎ মুখে মুখে কথা বলেছে। কিন্তু প্রকৃত মানুষের কাছে গিয়ে মানুষকে সাহায্য করা সেটা কিন্তু আমরা ছাড়া অন্যদল বা অন্য সংস্থা, অনেককেই আমরা দেখেছি তাদের উপস্থিতিটা ওভাবে দেখিনি। ওই এনজিও অনেকেই আছে কিন্তু তাদের আমরা ওভাবে দেখি নাই। শেখ হাসিনা বলেন, মহামারীর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় প্রশাসনের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন পরে আমাদের এই সভা। করোনাভাইরাসের পর থেকেই বিশ্বব্যাপী একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি চলছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং শুধু আমাদের দেশ বলে না পৃথিবীজুড়ে এই অবস্থার সৃষ্টি। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যে এই করোনাকে মোকাবেলা করে আমরা কীভাবে আমাদের দেশের অর্থনীতির গতিটা অব্যাহত রাখতে পারি। সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের এক সময় প্রায় রফতানি থেমেই যাচ্ছিল। ইন্ডাস্ট্রিগুলো প্রায় বন্ধ ছিল। সীমিত আকারে আস্তে আস্তে ইন্ডাস্ট্রিগুলো আবার চালু করেছি। সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যটা যাতে সচল থাকে আর বিশেষ করে শ্রমিকদের বেতন দেয়া, শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো এবং কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো। সেই ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। এই প্রণোদনা আমাদের বাজেটের প্রায় চার শতাংশ আমরা এই প্রণোদনা দেই। কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও সরকার ৫ লাখ কোটি টাকার মতো বিশাল বাজেট দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত বড় বিশাল বাজেট। এটা দেয়া কিন্তু কম কথা না। কিন্তু আমার কথা ছিল জানি না করোনার জন্য কতটুকু করতে পারব না পারব। কিন্তু আমার কথা ছিল আমাদের প্রস্তুতিটা থাকতে হবে সম্পূর্ণভাবে। যদি অবস্থা ভাল হয় আমরা সবটুকু অর্জন করতে পারব। যদি না পারি তারপরও তখন সেটা আমরা আবার দেখব। আমরা কিন্তু পিছিয়ে যাইনি। বাজেট আমরা ঘোষণা দিয়েছি দেশের জন্য। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের ফেরত আসতে হয়েছে জানিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এই প্রবাসীদের ফেলে দিতে পারেন না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকের ধারণা ছিল আমাদের রেমিটেন্স কমে যাবে, রেমিটেন্স কিন্তু কমেনি। কারণ আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি ২ শতাংশ। তার ফলে রেমিটেন্স কিন্তু আমাদের বেড়েছে। এটা অনেকে ভাবতে পারেনি যে আমাদের রেমিটেন্স এত বাড়বে। রিজার্ভ এখন আমাদের ৩৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমাদের রিজার্ভও কিন্তু ভাল রিজার্ভ আছে এটা আমি বলব। কাজেই সেদিক থেকে আমাদের অর্থনীতি মোটামুটি একটা ভাল অবস্থানে আছে। বাজেটের ডেফিসিট এবার আমরা ৬ শতাংশ ধরেছিলাম। এখানে আমার সিদ্ধান্ত ছিল দরকার হয় আমরা ১০ শতাংশ ধরব। কিন্তু সেটা আমাদের লাগেনি।’ দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথাও সভায় তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার দেশের উন্নয়ন ও মানুষকে সুন্দর জীবন দিতে ডেল্টা প্লান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই সংগঠনই এই দেশের স্বাধীনতা এনেছে। কাজেই আমরা যখন সরকারে আছি আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশটা শুধু বর্তমানেই না আগামী দিনের নতুন প্রজন্মের জন্য কীভাবে এই দেশটা এগিয়ে যাবে, কীভাবে চলবে সেটাই আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখব বা নির্দেশনা দিয়ে দেব। তিনি বলেন, এটা ঠিক যে, এখন আমরা যেটা করছি সময়ের বিবর্তনে সেটা কিন্তু সংশোধন করতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে, পরিশোধন করতে হবে। এটা করতে হবে- এটাই নিয়ম। সেটা আমরা জানি। কিন্তু তারপরও একটা ফ্রেমওয়ার্ক, একটা ধারণাপত্র অথবা একটা দিক-নির্দেশনা সেটা যদি সামনে থাকে তাহলে যে কোন কাজ খুব সহজে, যারাই আসুক ভবিষ্যতে তারাই করতে পারবে। সভায় শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রাম ও পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পার্টির (আওয়ামী লীগ) যে পলিসি সেটাকে মেনেই কিন্তু সব পদক্ষেপ নিচ্ছি। ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে ২০১০ সালে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছিলাম ২০১০ থেকে ২০২০। এখন আমরা ২০২১ থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সেটাও আমরা গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশ হচ্ছে একটা ডেল্টা বা বদ্বীপ। এই বদ্বীপের ভবিষ্যত চিন্তা করে তার সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’ তিনি বলেন, এই নদী ড্রেজিংয়ের কথা আমরা সব সময় বলে আসছি। একটা সময় ছিল, আমি আর বোধ হয় মতিয়া আপা (বেগম মতিয়া চৌধুরী) ছাড়া আর কেউ ড্রেজিংয়ের কথা বলতই না। অনেক বিশেষজ্ঞরাও এটা নিয়ে তখন প্রশ্ন তুলত। কিন্তু এখন আবার প্রত্যেকে আমাদের পথে আসছে। এখন সেই বিশেষজ্ঞরাও বলে যে, ড্রেজিং-ই একমাত্র উপায়।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নদীগুলো ভাঙছে। এতে নদীগুলোরই ক্ষতি হচ্ছে। নদীগুলোকে বাঁচানো দরকার। আমরা ডেল্টা প্ল্যান করেছি। ডেল্টা প্ল্যানের একটাই লক্ষ্য, আমাদের যত বড় নদী আছে সেগুলোকে ড্রেজিং করে নাব্য বজায় রেখে এই বদ্বীপটা রক্ষা করা এবং সুরক্ষিত করা। দেশের মানুষকে কীভাবে সুন্দর একটা জীবন দেয়া যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নটা ত্বরান্বিত করাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি, বাস্তবায়ন করছি।’ তিনি বলেন, জাতিসংঘ ঘোষণা দিয়েছে-এসডিজি-২০৩০। সাসটেইনবেল ডেভেলপমেন্ট গোল অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নটা একটা স্থিতিশীল উন্নয়ন হবে। সেখানে যে ধারাগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জন করেছিলাম; এসডিজি বাস্তবায়নেও আমাদের সাফল্য আসবে। ভবিষ্যতে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে রাষ্ট্র পরিচালনায় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য দিক-নির্দেশনা তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা সভায় তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। যেহেতু আমরা ক্ষমতায় আছি, তাই পরবর্তী প্রজন্ম শুধু বর্তমানেই নয়, বরং ভবিষ্যতেও কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তার উপায় বের করার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। আর সে লক্ষ্যে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
×