ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়ার কমিউনিটি ক্লিনিক আগের অবস্থায়

প্রকাশিত: ২১:২২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

বগুড়ার কমিউনিটি ক্লিনিক আগের অবস্থায়

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ করোনাকালে মাস দুয়েক আগে বগুড়ার ৩৬৬ কমিউনিটি ক্লিনিকের যে বেহাল অবস্থা ছিল তা কাটিয়ে উঠছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মিগণ নিয়মিত যাচ্ছেন। এমনটি জানালেন ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজার রহমান তুহিন। বললেন কমিউনিটি ক্লিনিকে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মধ্যেই করোনা উপসর্গ নিয়ে কেউ চিকিৎসা নিতে গেলে তাদের দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফল জানিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত অর্থবছরে (করোনার আগে) ৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানের স্বাভাবিক অবস্থায় চলতি অর্থবছরের ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিকের সংস্কার কাজ চলমান। এসব ক্লিনিকে টাইলস বসিয়ে ওয়াশ রুম ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। নারী ও পুরুষের আলাদা ওয়াশ রুম নির্মিত হয়েছে। সংস্কার কাজ শেষ হওয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে বাড়তি ব্যবস্থায় করোনা নমুনা সংগ্রহ করা যায় কিনা সেই প্রস্তÍুতি নেয়া হচ্ছে। বগুড়া স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর জানিয়েছে, উপজেলাগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগের নষ্ট হওয়া স্থাপনা মেরামত,সংস্কার ও রক্ষণাবক্ষেণ কাজে বরাদ্দের ৬ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকের সংস্কার ও মেরামত কাজ শেষ হয়েছে। এরুলিয়া ইউনিয়নের বানদীঘি কমিউনিটি ক্লিনিকের যে দুরবস্থা ছিল তা এখন নেই। বেশিরভাগ কমিউনিটি ক্লিনিকে নিরাপদ পানির জন্য সাবমার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। ডেপুটি সিভিল সার্জন জানালেন, জেলার ১১০টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রতি এলাকার ৬ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি), একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন পরিবার কল্যাণ সহকারী (এফডব্লিউএ) থাকেন। প্রতিদিন সকাল ন’টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত আউটডোর সেবা দেয়া হয়। করোনার শুরুতে এই সেবাদানে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। গত আগস্ট মাসের শেষভাগে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবার মান পূর্বাবস্থায় নেয়া সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় একশ’ রোগী কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা পায়। জটিল রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। অন্তঃসত্তাদের (প্রেগনেন্ট) ফলোআপে রাখা হয়। প্রয়োজনে তাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে সহযোগিতা দেয়া হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকে সাধারণ অসুখবিসুখের উপশমে ২৭ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। শিবগঞ্জের আলিয়ারহাট কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি রফিকুল ইসলাম জানান, করোনার এই সময়ে সপ্তাহের ৬ কর্মদিবসে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থেকে সেবা দেন। স্বাস্থ্য সহকারী ও এফডব্লিউএ তিনদিন ক্লিনিকে ও তিনদিন গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে টিকাদান কর্মসূচী,পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে মনিটরিং করেন। তবে টিকাদান কর্মসূচী কিছুদিন বন্ধ থাকায় কে কতদিন আগে সর্বশেষ টিকা নিয়েছে তা মনিটরিং করে তালিকা করা হচ্ছে। বাড়তি কাজ হিসেবে করোনার স্বাস্থ্যসেবার পরামর্শ দেন। সোনাতলা তেকানিচুকাইনগর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী আফরোজা খানম জানালেন, নিভৃত এই গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স দূরে হওয়ায় গ্রামের লোকজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে আসে। ক্লিনিকটি কিছুদিন আগেও সংস্কারের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। সংস্কারের পর সাধারণের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। আগে সেবা প্রত্যাশী বেশি হলে অপেক্ষার জন্য বসার জায়গার সঙ্কুলান হতো না। এখন তারা অপেক্ষা করতে পারেন। কমিউিনিটি ক্লিনিকেও করোনার স্বাস্থ্যসেবার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এফডব্লিউএ সাবিহা বেগম জানালেন, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সেবা ও কন্ট্রাসেপটিভ বিতরণে গ্রামের ঘরে ঘরে যান সপ্তাহে তিন দিন। শাজাহানপুর খালিসাকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী জানালেন, জনসংখ্যার অনুপাতে পাওয়া সরবরাহকৃত ওষুধ শেষ হওয়ার আগেই চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সরকারের সংগ্রহশালা থেকে ওষুধ সরবরাহ করে। মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিএইচসিপিগণ রোগীর পরীক্ষা করে ওষুধ দেন। জটিল কোন রোগীর ওষুধ না দিয়ে সরাসরি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসারের কাছে পাঠানো হয়।
×