ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোমেনা আক্তার

ভাড়াটিয়ার বিড়ম্বনা

প্রকাশিত: ২১:১১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

ভাড়াটিয়ার বিড়ম্বনা

রাজধানীসহ সারা দেশের কোটি নগরবাসীর বাড়িভাড়া নিয়ে একটা প্রশ্ন। বাড়িভাড়া বৃদ্ধি কবে শেষ হবে? একটি বাসায় পাঁচ বছর, ১০ বছর থাকলেও বাড়িভাড়া বৃদ্ধি বন্ধ হয় না। ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগের বাসা ছেড়ে দিয়ে নতুন বাসায় উঠেও কি কারোর স্বস্তি আছে? যখন কেউ একটা নতুন বাসায় উঠে তখন মনে মনে ঠিক করে আর বাসা পাল্টাবে না। কিন্তু দেখা যায় বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার সেই একই বিড়ম্বনা। তাদের জীবনটা যেন যাযাবরের মতো। নতুন বাসা খোঁজা, বাসাবদল করা যেমন ঝামেলা তেমনি কষ্টেরও বটে। টাকা যেমন খরচ হয় তেমনি টানাটানিতে নষ্ট হয় জিনিসপত্রও। তার ওপর রয়েছে অ্যাডভান্সের টাকা পরিশোধ। বাড়িভাড়া বৃদ্ধির নতুন চাপ নিয়ে নতুন বছর শুরু করতে হয় নগরবাসীকে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতন বৃদ্ধি না হলেও প্রতি বছর বাড়িভাড়া বৃদ্ধি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না কেউ। একই অবস্থা রাজধানীর বাইরে অন্যান্য শহরের ভাড়াটিয়াদের। ডিসেম্বর মাস এলেই বাড়িভাড়া বৃদ্ধির মানসিক চাপ নামক আতঙ্কে থাকেন। ডিসেম্বরেই বাড়তি ভাড়ার নোটিশ জানিয়ে দেন বাড়ির মালিকরা, জানুয়ারি থেকে তা কার্যকর করা হয়। ভাড়া বৃদ্ধির কোন প্রতিবাদ করা যায় না। বাড়িওয়ালার সাফ জবাব, পোষাইলে থাকেন, না পোষাইলে চলে যান। ছেড়ে দিলে পরের মাসে ঠিকই ভাড়াটিয়া পাওয়া যাবে। যত ভোগান্তি হয়, সব ভাড়াটিয়ার। বাসায় মেহমান এলে অনেক বাড়িওয়ালা সহজভাবে নিতে চান না। ভাড়াটিয়া জীবনের বিড়ম্বনা এবং হয়রানির যেন কোন শেষ নেই। ভাড়াটিয়া জীবনে বাড়িওয়ালার সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাত এড়িয়ে চলতে পেরেছেন এ রকম সৌভাগ্যবানের সংখ্যা খুব কমই আছে। আবার অনেক ভাড়াটিয়ার ক্ষেত্রেও দেখা যায়, তারা মালিক বনে যায়। তারা নিয়মিত টাকা পরিশোধ করে না, উল্টো দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে। আবার ইচ্ছাকৃত বাসার ক্ষতি করে চলে যায়। এসব মানুষের সংখ্যা অনেক কম। একধাপে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করা সত্ত্বেও বাড়ি ছেড়ে দিতে পারেন না অনেক ভাড়াটিয়া। তাদের বাচ্চারা এলাকার স্কুলে পড়ে। অনেক সময় তাদের পরীক্ষা থাকে। বাচ্চার বাবা বা মা এলাকায় চাকরি করে। এসব কারণে চাইলেও হঠাৎ করে বাসা বদলানো যায় না। বাসা খোঁজা এবং বাসা বদল করতে পরিবারের সবাইকে হাড়ভাঙা খাটুনি করতে হয়। সবকিছুর চিন্তা করে অনেকে বাসাবদল করতে চান না। আর এ সুযোগ নেন অনেক বাড়িওয়ালা। ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করলে বাড়িওয়ালা সামন্ততান্ত্রিক আচরণ করেন ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে। এ করোনাকালীন অনেক বাসার মালিকরা ভাড়াটিয়া শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলেছে। ভাড়াটিয়াদের তারা কোন মানুষ মনে করে না। মালিক ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বলে না। বাড়ি ছাড়ার সময় দারোয়ানকে দিয়ে বলায় বাসা ছেড়ে দেয়ার কথা। কেন বাড়ি ছাড়তে হবে এর কোন ব্যাখ্যা চাওয়া যায় না। স্বল্প আয় ও নি¤œ আয়ের অসহায় ভোক্তাদের ভোগান্তির শেষ নেই। দ্রব্যমূল্য, হোল্ডিং ট্যাক্স, আয়কর, গ্যাস, পানির দাম বৃদ্ধিসহ নানা অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। তাই বলব, ভাড়া বাড়ানোর বিভিন্ন অজুহাতস্বরূপে ভাড়াটিয়াকে দোষারোপ করা হলেও, মূলত দায়ী থাকে মালিকেরাই। অগ্রিম টাকা আদায়, লাগামহীন ভাড়া, আর সার্ভিস চার্জ নামে অনৈতিক অর্থ আদায়ের ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আরোপ করা প্রয়োজন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট থেকে
×