ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ আঃ মুক্তাদির

লিখিত চুক্তিপত্র আবশ্যক

প্রকাশিত: ২১:০৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

লিখিত চুক্তিপত্র আবশ্যক

ভাড়াবাসা নগর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষ তার কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে নগরমুখী হয়ে থাকে। জীবিকার সন্ধানে, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় অনেককেই নিজ বাড়ি-ঘর, পরিবার-পরিজন ছেড়ে অন্যত্র বাস করতে হয়। প্রয়োজন হয় মাথা গোজার জন্য এক টুকরো ছাদের। তখন ভাড়াবাড়িই একমাত্র ভরসা। রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি দেশের সকল জেলা শহর, পৌরসভায় বাসা ভাড়া দেয়ার প্রচলন রয়েছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ ভাড়া বাসার উপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় ভাড়াটিয়ারা বাড়িওয়ালা কর্তৃক নানা ধরনের অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হন। যেমন- যখন তখন ভাড়া বৃদ্ধি করা, বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করা, দুই তিন মাসের অগ্রিম ভাড়া গ্রহণ করা, মেহমান এলে ভাড়াটিয়াকে অপমান করাসহ বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম। বর্তমান সময়ে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগর জীবনে একজন বাড়িওয়ালা যখন তার বাড়ি ভাড়া দিতে মনস্থ করেন তখন তার মাথায় এটা কাজ করে যে, তার বাড়িতে তিনি নিজের মতো কাউকে ভাড়া দেবেন, যার সঙ্গে তার বনিবনা হবে। পাশাপাশি তার থেকে উপযুক্ত ভাড়াও তিনি আদায় করে নিতে পারবেন। পাশাপাশি একজন ভাড়াটিয়াও এমন একটি বাড়ি খোঁজেন যেটির ভাড়া কম হবে, বাড়ির মালিকের আচরণ ভাল হবে ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ সময়েই এই দুই শ্রেণীর স্বার্থ এক বিন্দুতে মেলে না। ফলে বিভিন্ন কারণে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। তখন বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেন। এ ধরনের অনিয়ম ও হয়রানি প্রতিরোধ করতে ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তভাবে কার্যকর করতে হবে। ভাড়াটিয়া হিসেবে নাগরিকদের অধিকার এই আইনে লেখা আছে। এই অধিকার কোনো বাড়িওয়ালা লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইন অনুযায়ী বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য ভাড়ানিয়ন্ত্রক রয়েছেন। সিনিয়র সহকারী জজ আদালত এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। মার্কেটে দোকান বা দোকানঘর ভাড়া নেয়ার জন্য লিখিত চুক্তিপত্র হয়ে থাকে এবং মার্কেট মালিক বা দোকান মালিক আর ভাড়াটিয়ার মধ্যে সমস্যা হলে একজন আইনজীবীর মাধ্যমে সিনিয়র সহকারী জজের আদালতে ভাড়া জমা দেয়া হয়। কিন্তু বাসা-বাড়ির ভাড়াটিয়ারা সমস্যা হলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়াকে ঝামেলা মনে করেন। আবার অনেক ভাড়াটিয়া এই আইন সম্পর্কে জানেনই না। এই সুযোগ নিয়ে বাড়িওয়ালারা যথেচ্ছ আচরণ করে থাকেন। ভাড়াটিয়ার যেমন ভাড়াবাসার উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় থাকে না, তেমনি বাড়িওয়ালাগণও তাদের বাসাভাড়া দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। অতএব দেখা যাচ্ছে বাসাভাড়া পারস্পরিক আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত। অতএব বাড়িভাড়া নেয়ার সময় বাড়িভাড়ার চুক্তি অবশ্যই ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে করতে হবে। এ চুক্তিপত্রে ভাড়া, ভাড়ার রসিদ, ভাড়ার মেয়াদ, ভাড়া বৃদ্ধি, বাড়ি ছাড়ার নোটিশ, গ্যাস, পানি, বিদ্যুত, ইন্টারনেট বিভিন্ন বিষয় স্পষ্ট করে উল্লেখ করতে হবে। তাহলে বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়া উভয়েই নিজের আচরণ সম্পর্কে সতর্ক থাকবে। বগুড়া সদর, বগুড়া থেকে
×