বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মিয়ানমারে সম্মানজনক পুনর্বাসনে আবারও তুরস্কের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় নবনির্মিত বাংলাদেশ চ্যান্সেরির (দূতাবাস) কমপ্লেক্স আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সময়ে আঙ্কারায় উপস্থিত ছিলেন দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এতে সংযুক্ত হন ভার্চুয়াল মাধ্যমে। উল্লেখ্য, তিন বছর আগে রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরু হলে তুরস্ক সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণসহ সমর্থন ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশের প্রতি। ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ১৩ এপ্রিল তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের আমন্ত্রণে সেদেশ সফর করেন। প্রায় ৫০ বছর আগে ১৯৭৪ সালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক এবং নিবিড়। ১৩ শতকে তুর্কী সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়ের মাধ্যমে এই সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে অনেক আগেই। তদুপরি আধুনিক ও প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি কামাল আতাতুর্কও বাংলাদেশের জন্য একজন নন্দিত অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। বর্তমান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে বাংলাদেশ তার সুদৃঢ় অবস্থান ও সমর্থন ব্যক্ত করে বর্তমান সরকারের প্রতি। এই প্রেক্ষপটে তুরস্কের প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানটি তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। উল্লেখ্য, তিন বছর অতিক্রান্ত হলেও মিয়ানমারের কাছ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে তেমন অগ্রগতি নেই। বরং সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তে সে দেশের সেনা সমাবেশে সাময়িক কিছু উত্তেজনার সৃষ্টি হলে ঢাকা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তাৎক্ষণিক তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে দেশটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলার শুনানিও চলমান। ধৃত ও দোষী সাব্যস্ত মিয়ানমারের চার সেনাধ্যক্ষ বিষয়টি অকপটে স্বীকারও করেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আউন সান সুচিও বর্তমানে একঘরে ও কোণঠাসা।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে তিন বছর পার হলেও বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে গেছে বলেই প্রতীয়মান হয়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বর্তমানে আর সাড়াশব্দ নেই বললেই চলে। বরং সারা বিশ্ব যেন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে করোনা মোকাবেলাসহ ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কোনভাবেই আত্তীকরণ করা হবে না। চলতি বর্ষা মৌসুমের শেষে তাদের পর্যায়ক্রমে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হবে। এর পাশাপাশি চেষ্টা চলবে ইউরোপ-আমেরিকাসহ তৃতীয় কোন দেশে পুনর্বাসনের। এটি সময়সাপেক্ষ ও দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। তাই বলে রোহিঙ্গারা কিন্তু বসে নেই। গত তিন বছরে অন্তত দুই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে পালিয়ে গেছে। যে কারণে সেনাবাহিনীর সহায়তায় দেয়া হচ্ছে কাঁটাতারের বেড়া। রোহিঙ্গা শিবিরগুলো প্রাচীরবেষ্টিত ও সুরক্ষিত নয় বলে সীমিত পুলিশী নজরদারির সুযোগে তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র। শিশুচুরি, ইয়াবা পাচারসহ জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে অথবা জাল করে পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে। সেখানেও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে রোহিঙ্গা বিশেষ করে তরুণদের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা। সে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে আরও জরুরী উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও প্রভাবশালী দেশ হিসেবে তুরস্ক এক্ষেত্রে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করতে পারে বাংলাদেশকে।
শীর্ষ সংবাদ: