ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে স্বপ্ন

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দরকে ঘিরে স্বপ্ন

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ধান-নদী-খালবেষ্টিত অঞ্চল বরিশাল। সাগর বিধৌত ও নদী বেষ্টিত বরিশাল বিভাগের সাথে একসময় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো খুবই অনুন্নত। সড়ক পথে ফেরি পারাপার ছিল বিড়ম্বনার। নৌপথেও যাতায়াতে আধুনিক ব্যবস্থা ছিলোনা। আকাশ পথও ছিলো বিচ্ছিন্ন। আর রেল গাড়ি? তা স্বপ্নেও ভাবেননি দক্ষিণাঞ্চলবাসী। এসবের কারণে অবজ্ঞার চোখে দেখা হতো বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে বিএনপি দীর্ঘদিন সরকারে থাকা ও এ অঞ্চলে বিএনপির প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, এমনকি রাষ্ট্রপতি থাকলেও বরাবরেই দক্ষিণাঞ্চল ছিলো অবহেলিত। সেই অবহেলিত মানুষের কাছে আশির্বাদ হয়ে এসেছে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলে এখন অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশালসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, পায়রা সমুদ্র বন্দরে পণ্য ওঠানামা করছে, পায়রা বন্দরের অদূরে লালুয়া ইউনিয়নে এক হাজার একর আয়তনের এলাকা ঘিরে নির্মানাধীন কয়লা ভিত্তিক তাপবিদুৎ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুত উৎপাদন শুরু হয়েছে। বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বরিশালে নির্মিত হয়েছে শেখ হাসিনা সেনানিবাস, গড়ে উঠছে আইসিটি পার্ক (হাইটেক পার্ক), বিমান বাহিনীর রাডার কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য বরিশালের হিজলা উপজেলার হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়নের মেঘের চর নামক এলাকাকে প্রস্তাব রাখা হয়েছে। নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর কল্যাণে সরাসরি রেলপথ যাবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে বরিশাল দিয়ে পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে এ কাজ শেষ করা হবে। রেললাইন নির্মাণের জন্য সরকার থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। ইতোমধ্যে অধিকাংশ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সর্বত্রই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। এরমধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমেই অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে শুরু করেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে। পায়রা সমুদ্রবন্দর আর কুয়াকাটার পর্যটন শিল্পকে ঘিরে বর্তমান সরকারের সময়ে শুরু হওয়া মেগা প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ অতীতে কল্পনাও করেননি এ অঞ্চলের মানুষ। শেখ হাসিনার সরকারের সারাদেশে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এককালের অবহেলিত বরিশাল বিভাগের সর্বত্র উন্নয়নের জোয়ারে বদলে যেতে শুরু করেছে। উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলমান বৃহত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এতে করে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথাপিছু আয়ের শহর হবে বরিশাল। চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের অব্যাহত অগ্রগতিতে একসময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে এখন সারাদেশের আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ আগ্রহের নেপথ্যে কাজ করছেন স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সু-নজরে মহামারি করোনার মধ্যেও ধারাবাহিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বরিশালের কৃতি সন্তান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও শিক্ষানুরাগী এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার জনকণ্ঠকে বলেন, উচ্চশিক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের গত মেয়াদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বরিশালে রয়েছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আলাদা মহিলা ও পুরুষ টেকনিক্যাল ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি), মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং মেরিন একাডেমি। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সবকিছু মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বরিশালেই রয়েছে সবধরনের ব্যবস্থা। বরিশালের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোঃ হানিফ জনকণ্ঠকে বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই শিক্ষায় অগ্রগামী ছিল বরিশাল। তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বরিশালে যুগোপযোগী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া ব্যাপক উন্নয়নের মহাযজ্ঞে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সর্বত্রই এখন উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এতে মহাখুশি দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দারা। মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ আরও বলেন, চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের অব্যাহত অগ্রগতিতে একসময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে এখন সারাদেশের আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। আর এ আগ্রহের নেপথ্যে কাজ করছেন স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সু-নজরে ধারাবাহিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। যে কারণে চলমান প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের পর এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরির্বতন বয়ে আনবে। উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চলমান উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হলে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের মতো বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথাপিছু আয়ের শহর হবে বরিশাল। এমনিতেই সিঙ্গাপুরের মতো আলাদা নির্ভরতা রয়েছে বরিশালের। পাশাপাশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় অগ্রাধিকারের সমৃদ্ধ অর্থনীতি পাবে বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলাও। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দুইবারের জনপ্রিয় সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস জনকণ্ঠকে বলেন, সিঙ্গাপুর একদিনে এমন হয়নি। একসময় মালয়েশিয়া তাদের বের করে দিয়েছে। তাদের নেতা লি কুয়ানের অদম্য প্রচেষ্টায় মাত্র ৭৩০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সিঙ্গাপুর এখন সারাবিশ্বে উজ্জ্বল। তিনি আরও বলেন, বরিশাল যেসব প্রকল্পের ওপর ভর করে বদলে যাচ্ছে সেগুলোও এসেছে উন্নয়নের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। এসব প্রকল্পের জন্য দীর্ঘদিন বরিশাল জেলার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এখন সেসবের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলায় স্বস্তি ফিরে এসেছে বরিশালবাসীর মাঝে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে দীর্ঘদিন থেকে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে ‘উন্নয়নের রূপকার’ খেতাব অর্জন করা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মন্ত্রী আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যতোবার ক্ষমতায় এসেছেন, ততোবারই দেশ এগিয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে অসংখ্য মেগা প্রকল্প হাতে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। এসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলেই দ্বিতীয় সিঙ্গাপুরের মতো ফুঁটে উঠবে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল।
×