ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘প্রাণ বাঁচাতে ওজোন, ওজোনস্তর সুরক্ষার ৩৫ বছর’

প্রকাশিত: ০০:১৬, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

‘প্রাণ বাঁচাতে ওজোন, ওজোনস্তর সুরক্ষার ৩৫ বছর’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস আজ বুধবার। ওজোনস্তর ক্ষয় ও তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ১৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবারের ওজোন দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাণ বাঁচাতে ওজোন : ওজোনস্তর সুরক্ষার ৩৫ বছর। বায়ুম-লের ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের বিকল্প ব্যবহার জনপ্রিয় করা এবং ওজোনস্তরের গুরুত্ব ও এর সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ওজোন দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে মোতাবেক ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস পালিত হচ্ছে। এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবসটি পালনে সরকারীভাবে কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ভূপৃষ্ঠের ওপরিভাগের ১০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত উচ্চতা ওজোনস্তর হিসেবে শনাক্ত করা হয়ে থাকে। এ স্তরকে বলা হয়ে থাকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার। এ স্তরে গ্যাসের ঘনত্ব এতই কম যে এ স্তরের ওজোন অণুকে একত্রিত করা হলে এর পরিমাণ পৃথিবী পৃষ্ঠজুড়ে কমলালেবুর খোসার মতো একটি পাতলা আবরণে পরিণত হবে। তিনটি অক্সিজেন পরমাণুর সমন্বয়ে ওজোন অণু গঠিত। তীব্র গ্যাসযুক্ত হালকা নীল বর্ণের গ্যাসীয় পদার্থ হলো ওজোন। স্ট্রাটোস্ফিয়ারে অবস্থানের কারণে প্রকৃতির ওপর প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যসমূহ গ্রীন হাউসগ্যাস হিসেবেও সক্রিয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব দ্রব্যসমূহ গ্রীন হাউস প্রভাব বিস্তারের যে ক্ষমতা রাখে তা অন্য গ্রীন হাউস গ্যাস অপেক্ষা বেশি। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যসমূহের ব্যবহার রোধ জরুরী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ক্লোরোফ্লোরোকার্বন এবং হাইডোক্লোরোফ্লোরোকার্বনকেই সবচেয়ে বেশি ওজোনস্তর ক্ষয়কারী পদার্থ হিসেবে শনাক্ত করা হয়ে থাকে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও বার্ষিক জনপ্রতি ০.৩ কিলোগ্রামের নিচে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী বস্তুর ব্যবহার রয়েছে। তবে মন্ট্রিল প্রটোকল অনুযায়ী ২০১০ সালে জানুয়ারি মাসে সিএফসি এবং হ্যালন এর ব্যবহার রোধ করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, দেশে ক্লোরোফ্লোরোকার্বনের (সিএফসি) ব্যবহার প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে। ২০১০ সালে ১ জানুয়ারি শুধুমাত্র ওষুধ শিল্প ব্যতিত সব সেক্টর থেকে সিএফসির ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে। শুধুমাত্র ওষুধ শিল্পে এ্যাজমা রোগীদের জন্য ইনহেলার তৈরির লক্ষ্যে অল্পকিছু সিএফসির ব্যবহার রয়েছে। ২০১২ মালের মধ্যে ওষুধ শিল্প থেকে সিএফসির ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে। বাংলাদেশের ওজোনস্তর ক্ষয়কারী বস্তুসমূহের মধ্যে হাইডোক্লোরোফ্লোরোকার্বন (এইচসিএফসি) সাধারণত এয়ারকুলার, এয়ারকন্ডিশনিং এ রিফ্রিজারেন্ট এবং ফোম তৈরি সময় ব্লোয়িং এজেন্ট হিসেবে এর ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচসিএফসির ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য হলেও এর প্রভাব সিএফসির চেয়ে কম। পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে এয়ারকুলার বৃদ্ধির কারণে এইচসিএফসি রিফ্রিজারেন্টের ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। ২০১০ সালে এর ব্যবহার ছিল ৮০২.৮৯ মেট্রিকটন। এবং ফোম সেক্টরে ব্লোয়িং এজেন্ট হিসেবে এইচসিএফসির ব্যবহার ছিল ১৯০ মেট্রিক টন। এইচসিএফসি হ্রাসে সরকার একটি ম্যানেজমেন্ট প্লান নিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন ও লাইসেন্সিং প্রথা আরোপের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। তারা বলছেন, ওজোনস্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে রক্ষা করে। ভূপৃষ্ঠের আল্ট্রাভায়োলেট বি রশ্মি অবাধ আপাতনকে বাধাগ্রস্ত করে।
×