ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সাফল্যের অনন্য দৃষ্টান্ত

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সাফল্যের অনন্য দৃষ্টান্ত

ফিরোজ মান্না ॥ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলছে। দেশের লাল-সবুজ পতাকা অশান্ত দেশগুলোর মানুষের কাছে পরিচিত হয়েছে ‘বাংলা বন্ধু’ দেশের পতাকা হিসাবে। অশান্ত দেশগুলোতে শান্তি ফেরাতে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা মিশনে সাফল্যের অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের সাফল্যের কারণে বাংলাদেশের সম্মান দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে, বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসাবে এক নম্বর স্থানে উঠে এসেছে। বিভিন্ন মিশনে তারা রাস্তা-ঘাটসহ অবকাঠামো নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষিণ সুদানে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের তৈরি একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ রোড’। অন্যদিকে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দিক থেকেও দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান্তিরক্ষী জোগানে প্রথম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ। ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই বাংলাদেশ এই কার্যক্রমে অংশ নেয়। এ বছর বাংলাদেশ এক নম্বর দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে চলে এসেছে। দক্ষিণ সুদানে (আনমিলস) পুরুষ শান্তিরক্ষী ১৩৯১-নারী শান্তিরক্ষী ৩০ জন। মোট ১৪২১ জন কাজ করছেন। ডিআর কঙ্গোতে (মনুস্কো) ১৩৩০ পুরুষ শান্তিরক্ষী-নারী শান্তিরক্ষী ২৯ জন। মোট ১৩৫৯ জন শান্তিরক্ষী রয়েছেন। লেবানন (ইউনিফিল) ১ জন শান্তিরক্ষী রয়েছে, সুদানে (দারফুর-আনমিড) ২ জন শান্তিরক্ষী কাজ করছেন। ওয়েস্টার্ন সাহারায় ১৭ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী শান্তিরক্ষী কাজ করছেন। মালিতে (মিনুসমা) ১২০৯ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী শান্তিরক্ষী কাজ করছেন। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে (সিএআর) নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে (মিনুস্কা) ১১০৯ জন পুরুষ ও ১৮ জন নারীসহ মোট ১২১৫ জন শান্তিরক্ষী কাজ করছেন। সুদানের বিতর্কিত এ্যাবিয়ে অঞ্চলে একজন শান্তিরক্ষী রয়েছেন। জাতিসংঘ সদর দফতরে ৪ জন শন্তিরক্ষী কাজ করছেন। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানের মধ্যে সশস্ত্র সহিংসতা বন্ধে নিয়োজিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত তিন দশকে যেসব দেশে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কাজ করেছেন, কর্ম আর দক্ষতায় তা অনন্য হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন মিশন সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘের উদ্যোগে বিশ্বের শান্তিরক্ষার উদ্যোগে তিন দশকে বাংলাদেশের অবদান অনন্য হয়ে দেখা দিয়েছে। শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘে বাংলাদেশকে শক্তিশালী দেশ হিসেবে সম্মানের চোখে দেখা হয়। ইউনাইটেড নেশনস নিউজ সেন্টারে প্রতিবছরই প্রকাশিত প্রতিবেদনে শান্তি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের সাফল্য তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সামরিক ও পুলিশ সদস্য পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের ৬ হাজার ৪৭৭ জন পুরুষ ও ২৫৫ জন নারী মিলিয়ে মোট ছয় হাজার ৭৩২ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘ মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইথিওপিয়া, এ দেশটির শান্তিরক্ষীর সংখ্যা ৬ হাজার ৬৬২ জন। রুয়ান্ডার রয়েছে ৬ হাজার ৩২২ জন। নেপাল ৫ হাজার ৬৮২ জন নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে নেপাল, ৫ হাজার ৩৫৩ জন নিয়ে পঞ্চম অবস্থানে ভারত, পাকিস্তান ৪ হাজার ৪৪০ জন নিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। মিশর ৩ হাজার ৯৩ জন শান্তিরক্ষী নিয়ে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী নানা জাতি-গোষ্ঠী থেকে আসা। ভিন্ন সংস্কৃতি আর ভাষার এসব শান্তিরক্ষীর একমাত্র লক্ষ্য থাকে ঝুঁকিপূর্ণ মানবগোষ্ঠীকে রক্ষা করা। সহিংসতা থেকে শান্তির পথে আসা দেশগুলোকে সহযোগিতা করা। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষী জোগানদাতা দেশ। বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী জোগানে এক নম্বর বৃহত্তম দেশ বলে জাতিসংঘ ঘোষণা করেছে। সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদানে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্টিনজেন্ট-১৯ দক্ষিণ সুদানের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও স্থানীয় জনসাধারণের সাহায্যার্থে ‘হাই তিরিরি নামক গ্রাম ও ‘মুন্দ্রি-মারিদি’ মূল সড়কের মাঝে একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে। ‘সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ রোড’। সড়কটি নির্মাণের ফলে হাই তিরিরি গ্রামটির সঙ্গে মুন্দ্রি শহরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। স্থানীয়রা এই সড়কটি নির্মাণে জরুরী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, শিশুদের স্কুলে যাতায়াত, বায়োজ্যেষ্ঠ ও স্থানীয় জনগণের চলাচল এবং বাণিজ্যিকভাবে গ্রামবাসী উপকৃত হচ্ছেন। স্থানীয় জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে সড়ক নির্মাণের ফলে ব্যান ইঞ্জিনিয়ার (কনস্ট্রাকশন)-১৯’র অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রশাসন নবনির্মিত সড়কটির নামকরণ করেন বাংলাদেশ রোড। জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কটি উদ্বোধন করা হয়। দক্ষিণ সুদানের বহুল প্রচারিত ‘রেডিও মিরায়া’ ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘জুবা মনিটর’ বাংলাদেশ রোড নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিবেদন প্রচার করে। এটি দক্ষিণ সুদানে মিশন এলাকায় কর্মরত বাংলাদেশ সেনা সদস্যসহ বাংলাদেশের নাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। এই সড়ক নির্মাণ করে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং কোর (কনস্ট্রাকশন)-১৯ ও দেশের বিশ্বের কাছে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে তুলেছে। সড়কটি অনলাইন ডিজিটাল ম্যাপ ও আনমিস অফিসিয়াল ম্যাপেও হালনাগাদ করা হয়েছে। বিশ্ব জুড়ে বাংলাদেশ সড়কটি এখন ভীষণভাবে পরিচিতি পেয়েছে। দক্ষিণ সুদান থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, তেল সমৃদ্ধ সদ্য স্বাধীন দেশ দক্ষিণ সুদান। উত্তর অফ্রিকার এই দেশটির মানুষ ৯ বছর আগে শৃঙ্খল মুক্ত হন। সম্পদশালী সুদানের দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উত্তর সুদানের সঙ্গে গৃহ বিবাদ লেগেই ছিল। উন্নয়ন বৈষম্যের কারণে দুই সুদানের মধ্যে চলে আসা গৃহযুদ্ধে কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। অবশেষে সেই গৃহ বিবাদের অবসান ঘটে ২০১১ সালের ৯ জুলাই। এই দিন পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম হয় আরও একটি স্বাধীন দেশ। তার নাম হয় দক্ষিণ সুদান। জন্মের পর থেকেই অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও গৃহযুদ্ধে বিপর্যপ্ত হয়ে পড়ে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটি। সুদান পৃথিবীর সবচেয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ববহুল দেশগুলোর অন্যতম ছিল। উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর এলাকার অধিকাংশ মানুষ মুসলিম। দক্ষিণাঞ্চলের অনগ্রসর এলাকার অধিবাসীদের অধিকাংশই অমুসলিম। সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, ও রাজনৈতিক বিভাজন ও মতবিরোধের ফলে সুদানে আধুনিককালের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। অশান্ত দক্ষিণ সুদানে শান্তি ফেরাতে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা। দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষায় ইউনাইটেড ন্যাশনস মিশন ইন সাউথ সুদান (আনমিস) নিয়োগ পান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশটিতে শান্তিরক্ষার পাশাপাশি নানা সামাজিক কাজ কর্মে অংশ নেন। তারা বিধস্ত দক্ষিণ সুদানের রাস্তা ঘাট নির্মাণ করেন। দেশটির সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মাণ করা রাস্তার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ রোড’। এই রোডই বাংলাদেশকে আরও সম্মান বয়ে এনে দিয়েছে। সেনাসদস্যদের রাত দিনের প্রচেষ্টায় নির্মিত রোড দিয়ে এখন জাতি সংঘ মিশনের সব দেশের সেনা ও দেশটির মানুষ চালাচল করছেন। দক্ষিণ সুদান থেকে সূত্র জানিয়েছে, দেশটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা বাংলাদেশ সড়কটি নির্মাণ করেছে। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্ট-১৯। তারাই এই কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে যাচ্ছে। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত দুর্গম অঞ্চলের মানুষদের প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সেবা। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার কন্টিনজেন্ট-১৯ দেশটির প্রদান মহাসড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের অংশ হিসেবে ‘মুন্দ্রি-মারিদি-ইয়াম্বিয়’ (২৫৬ কিলোমিটার) সড়ক সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজের শান্তিরক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দায়িত্ব পায়। এ লক্ষ্যে মুন্দ্রি এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। মহাসড়কটির সংস্কার ও মেরামত কাজ চলাকালীন সময়ে এক্সিকিউটিভ উাইরেক্টর, মুন্দ্রি কাউন্টি মিঃ তাবান জ্যাকসন ক্যাম্প কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং স্থানীয় কিছু গ্রাম ভিত্তিক অনুন্নত এলাকার সঙ্গে ‘মুন্দ্রি-মারিদি’ মূল সড়কের সংযোগ সড়ক নির্মাণের অনুরোধ জানান। দক্ষিণ সুদান থেকে সূত্র জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ মিশন আনমিসে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গত ২০১১ সাল থেকে অত্যন্ত দক্ষতা এবং সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সদর দফতরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুবই অল্প সময়ে বাংলাদেশ থেকে ৮৫০ জনের একটি পদাতিক কন্টিনজেন্ট দক্ষিণ সুদানে মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর কিছু দিনের মধ্যে দেশটিতে বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। উল্লেখ্য দেশটিতে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে ১৫ লাখের ওপর মানুষের প্রাণহানির পর বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় আরেকটি স্বাধীন দেশ- দক্ষিণ সুদান। জাতিসংঘ স্বীকৃত ১৯৩তম দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে দেশটি। আফ্রিকার নতুন এই দেশটির স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দিন রাজধানী জুবায় নাচে গানে মেতে উঠেছিল সেদিন দক্ষিণ সুদানের মানুষ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংবিধানে সই করে শপথ নিয়েছিলেন সালভা কীর। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির ও জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন। বিদেশী বহু কূটনীতিক ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সেদিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন সালভা কীর। গণভোটের মাধ্যমে দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা লাভ করে। সূত্র জানিয়েছে, হাইতির শান্তি মিশন পুলিশের নারী সদস্য নিয়ে গঠন করা হয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই শান্তি মিশন ভূমিকম্প বিধ্বস্ত হাইতির পুনর্গঠন কাজ এবং দেশটির বিরাজমান সহিংসতার মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে মিশন শেষ করেছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা এ কাজের জন্য জাতিসংঘের বিপুল প্রশংসা পেয়েছিল। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকায় শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত থেকেছেন। সেন্ট্রাল আফ্রিকার দেশগুলো কঙ্গো, সুদানের দারফুরসহ কঙ্গোর বুনিয়া, ইটুরি প্রদেশে কাজ করেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। এই প্রতিবেদক সুদানে সফরে গিয়ে শান্তিরক্ষীদের কাজ দেখেছেন। তারা গৃহবিবাদের দেশটি পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেছেন। শান্তিরক্ষার পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা কাজে অংশ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বিশ্বশান্তি রক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশের ১৩২ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের এ আত্মত্যাগ গর্বের ও অহঙ্কারের নিদর্শন। সহিংস কঙ্গোর প্রান্তিক গ্রামগুলোতে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের বিচরণ, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির মূলে কাজ করেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে এই প্রতিবেদক দেখেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা অক্লান্ত শ্রম ঘাম ঢেলে তারা আফ্রিকার অশান্ত দেশগুলোতে শান্তির বার্তা দিচ্ছেন। শান্তির জন্য দিন রাত কাজ করছেন। সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ হিসাবে দীর্ঘদিন দ্বিতীয় অবস্থানে থাকার পর আবারও প্রথম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী গত ৩১ আগস্ট শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী মোট ছয় হাজার ৭৩২ জনে উন্নীত হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। দ্বিতীয় সাফল্য হচ্ছে বাংলাদেশী একজন সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মাঈন উল্লাহ চৌধুরী দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার নির্বাচিত হয়েছেন। এই তথ্য আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সামরিক ও পুলিশ শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আগেও অনেক বছর শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছির। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল। সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী পাঠানো দেশ হিসাবে বাংলাদেশের নাম এখন বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।
×