ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একনেকে ৫৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ প্রকল্প অনুমোদন

দেশজ উদ্ভিদ ও প্রাণী আমরা সংরক্ষণ করব ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৩:০১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

দেশজ উদ্ভিদ ও প্রাণী আমরা সংরক্ষণ করব ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজ প্রত্যেকটা উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শামুকের পাশাপাশি ঝিনুক সংরক্ষণেও তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ কথা বলেন তিনি। একনেক সভায় ৫৩৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা খরচে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ৪৪০ কোটি ৯৮ লাখ এবং বিদেশী ঋণ ৯৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও অর্থমন্ত্রী গণভবন থেকে একনেক সভায় অংশ নেন। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রী, সচিবরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সম্মেলন কক্ষে অবস্থান করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় অংশ নেন। একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাসহ প্রকল্প বিস্তারিত তুলে ধরেন। সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বললেন, দেশজ যা কিছু আছে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রত্যেকটাকে আমরা সংরক্ষণ করব। শামুক নিয়ে প্রকল্প আছে, ঝিনুককেও আনতে হবে। কাঁকড়াকেও আনতে হবে। বাংলাদেশের যা প্রাণিজ, জলজ, ভূমিজ সম্পদ আমাদের আছে, প্রত্যেকটা আইটেমকে কাজে আনতে হবে। প্রকল্পের বিষয়ে বলতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মূল বার্তা হলো দেশী প্রজাতির মাছ। এগুলোকে বাঁচানো, সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করা। তার সঙ্গে সঙ্গে শামুক, যা একটি জলজ প্রাণী। শামুক নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী খুবই খুশি যে, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। কারণ, উনার বাড়ি ওই অঞ্চলে। ছোটবেলায় শামুক-টামুক দেখেছেন। ওই এলাকায় শামুক থেকে চুন তৈরি হয়। কোটালিপাড়ায় চুন হয়। উনি (প্রধানমন্ত্রী) মনে করেন, আপনারা যে গুণগান করছেন শামুক নিয়ে, হাঁসের খাবার হয়। আরেকটা যে কাজ হয়, সেটা মনে আছে ? চুন হয়। এম এ মান্নান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা শুধু মানুষের স্বাধীনতা নয়, বাংলার প্রকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণ হলো আমাদের আরেকটা উদ্দেশ্য। আমরা নাগরিকরা যারা মানুষ, প্রকৃতির সামান্য অংশ। সুতরাং আমাদের শামুক, টেংরা-পুঁটি এদেরও সংরক্ষণ করা উচিত। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য তাই। সভায় আন্তর্জাতিকমানের সাফারি পার্কের আলোকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বিদ্যমান মাস্টার প্ল্যানের উন্নয়ন করা হবে। এ জন্য সাফারি পার্কের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জানুয়ারি ২০১৭ থেকে চলমান প্রকল্পটি ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। চলমান প্রকল্পে আরও ৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সাফারি পার্কের বহিস্থ ও অভ্যন্তরীণ রাস্তায় যানজট নিরসন ও যোগাযোগ সুবিধার উন্নয়ন, পার্কে বিদ্যমান বন্যপ্রাণী এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিধান ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের সুবিধাদি উন্নয়ন করা হবে। সাফারি পার্কে পুকুর ও জলাধার খনন, ৪টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও প্রকল্পের বিদ্যমান মাস্টারপ্ল্যান হালনাগাদকরণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ককে আন্তর্জাতিকমানে রূপ দিতে প্রয়োজনীয় সব কাজ করা হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক যদি আরও সম্প্রসারণের প্রয়োজন হয় তাহলে জমি দেবে সরকার। এছাড়া ২০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মৎস্য সেক্টর সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকার ১ লাখ ৮ হাজার ৮৪৭ জন সুফলভোগীর দক্ষতা উন্নয়ন করা হবে। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদফতর। এছাড়া একনেক সভায় ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি) : রাজউক (প্রথম সংশোধিত) ও ১৪৭ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিরূপনে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের মাধ্যমে ঢাকার জন্য একটি ম্যাপও তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আবাসন সঙ্কট কাটাতে উদ্যোগ রয়েছে। ফলে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটবে। একনেক সভায় আরও অংশ নেন- কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি; শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন; বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি; মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়কমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন।
×