ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাম্বার ওয়ান ডেভিড মালান

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

নাম্বার ওয়ান ডেভিড মালান

প্রতিটি দলেই বোধহয় এমন কিছু ক্রিকেটার থাকেন দুই-এক ম্যাচে খারাপ করলেই যাদের বাদ পড়তে হয়, ডেভিড মালান তেমনই একজন। তারকায় ঠাসা ইংল্যান্ড একাদশের সাইড বেঞ্চেও যে তারকার অভাব নেই! নিরন্তর যুদ্ধ করে টিকে থাকা এমন কেউ যদি আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠেন বিস্ময়টা তখন আরও বেড়ে যায়। তিন বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০; তিন ফরমেট মিলিয়ে মাত্র ৩২ ম্যাচের ক্যারিয়ার। টি২০ই ১৬টি। ২০ ওভারের ধুন্ধুমার ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কতটা কঠিন, মাঠে যারা খেলেন তারাই কেবল সেটি বোঝেন। বোঝেন ডেভিড মালান! সর্বশেষ আইসিসি টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে যিনি বাবর আজম, এ্যারন ফিঞ্চ, লোকেশ রাহুলের মতো ধুন্ধুমার উইলোবাজকে হঠিয়ে উঠে এসেছেন এক নম্বরে। করোনাকালে ঘরের মাঠে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দুই সিরিজে সমানে আলো ছড়িয়ে সিংহাসনে ৩৩ বছর বয়সী বাঁহাতি এ ব্যাটসম্যান। যেখানে ৬ ম্যাচে তার স্কোর-২৩, ৫৪*, ৭, ৬৬, ৪২ ও ২১! আইসিসি টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে ব্যাটসম্যানদের তালিকায় চার ধাপ এগিয়ে শীর্ষে উঠে আসা মালানের রেটিং পয়েন্ট ৮৭৭, দ্বিতীয় স্থানে নেমে যাওয়া বাবারের ৮৬৯। সেরা পাঁচে পরের তিনটি স্থানে যথাক্রমে এ্যারন ফিঞ্চ (৮৩৫), লোকেশ রাহুল (৮২৪) ও কলিন মুনরো (৭৮৫)। ২০১৭ সালে ইংলিশদের জার্সি গায়ে টি২০ অভিষেক মালানের। কিন্তু পরবর্তীতে ইনজুরির কারণে দল থেকে বদ পড়ার পর আবারো দলে ফিরতে বেশ খাটুনি করতে হয় তাকে। নবেম্বরে দলে ফিরে ক্যারিয়ারের সেরা রেটিং পয়েন্ট অর্জন করেন মালান। মালানের আজকের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে বড় ভূমিকা রেখেছে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ লিগ। গত কয়েক বছর নিয়মিত বিপিএল খেলেছেন। গত বিপিএলে খেলেছেন কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সে। বিপিএলের মাঝ পথেই পারিবারিক কারণে দেশেও যেতে হয়েছিল তাকে। যে কারণে কয়েকটি ম্যাচও মিস করেছিলেন তিনি। এরপরও ১১ ম্যাচ খেলে ৪৪৪ রান করেছেন তিনি। পুরো টুর্নামেন্টে একা হাতে দলকে টেনেছেন। তার আগে ২০১৮-১৯ বিপিএলে খেলেছেন খুলনা টাইটানসে। সেবার ৯ ম্যাচে করেন ২৪০ রান। ২০১৬-১৭ মৌসুমে বরিশাল বুলসের জার্সিতে ৬ ম্যাচ খেলেছেন, করেছেন ১৩১ রান। বিপিএলে ভালো খেলা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হয়ত সব সময়ই উপমহাদেশের ভিন্ন উইকেটের চ্যালেঞ্জ উপভোগ করেন। বিপিএলে দুর্দান্ত পারফর্মের ফলস্বরূপ ইংল্যান্ড টি২০ দলের অপরিহার্য সদস্যে পরিণত হন মালান। পাকিস্তানের বিপক্ষে সুযোহ পেয়ে দারুণ পারফর্ম করে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে ১২৯ রান করে চার ধাপ এগিয়ে সবার শীর্ষে উঠে এসেছেন মালান। টি২০ তে ধারাবাহিক থাকা খুবই কঠিন। ইংলিশ ব্যাটসম্যান ডেভিড মালান কঠিন কাজটাই সহজ করে তুলেছেন। আন্তর্জাতিক টি২০তে মাত্র ১৬ ইনিংস মালান ৪৮.৭১ গড়ে করেছেন ৬৮২ রান। ইংল্যান্ডের হয়ে টি২০তে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড তারই দখলে। গত বছর নবেম্বরে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন নম্বরে নেমে ৫১ বলে অপরাজিত ১০৩ রানের পথে ৪৮ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। টি২০তে ইংল্যান্ডের মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ট্রিপল ফিগারে নাম লেখান মালান। এছাড়া আছে ৭টি হাফ সেঞ্চুরি। রানটাও করেছেন বেশ দ্রুত। ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট ১৪৬.৬৬! ইংল্যান্ডের দ্বিতীয়সেরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিরাট কোহলির মতো অসামান্য ধারাবিহকতা নেই আর কোন ব্যাটসম্যানের। তিন ফরমেটে পঞ্চাশোর্ধ্ব গড় আছে কেবল ভারত অধিনায়কেরই। সবশেষ সিরিজের মধ্যপথে সেই কোহলিকেও পেছনে ফেলে দিয়েছিলেন মালান। যেখানে ১৫ ইনিংসে তার গড় দাঁড়িয়েছিল ৫০.৮৪, কোহলির ৫০.৮০। তবে ভারতীয় অধিনায়ক ব্যাট করেছেন ৭৬ ইনিংসে। আর তাই কোহলির সঙ্গে তুলনায় আপত্তি মালানের, ‘বিরাট কোহলি যতটা ভালো, আমি তার ধারেকাছে নেই। যদিও পরিসংখ্যান সে রকমই বলছে। তবে আমি যদি ৫০টির মতো ম্যাচ খেলতাম, তাহলে হয়ত তুলনা কিছু করা যেত। এখন আমি যেটা পারি, কেবল রান করে যেতে।’ এদিকে ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এখই ২০২১ টি২০ বিশ্বকাপের ভাবনায় বিভোর। ফলে বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় যারা আছে কেবল তাদের দিকেই নজর ইসিবির। এমন অবস্থায় দলে একাদশ ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মানেন মালান। পরিসংখ্যানের চেয়ে আপাতত মালানের বেশি মনোযোগ তাই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি২০ সিরিজের আগে চোটে পড়েন ওপেনার জেসন রয়, পারিবারিক কারণে নেই অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। দুজনই সামনে ফিরবেন এবং একাদশে তাদের জায়গা প্রায় নিশ্চিত। ফলে মালান ভাল করেই জানেন, দুই-এক ম্যাচ ব্যর্থ হলেই জায়গা হারাতে পারেন তিনি! এই মুহূর্তে তাই যত বেশি সম্ভব রান করে একাদশে জায়গা ধরে রাখার পরিকল্পনা মালানের। এই ইংলিশ ক্রিকেটার বলেন, ‘আমরা সবাই জানি, আমাদের দলে যারা জায়গা ধরে আছে, তারা কতটা ভাল। গত চার-পাঁচ বছর ধরেই তাদের রেকর্ড দুর্দান্ত। এখানে বাইরে থেকে ঢুকে কাউকে নিজের জায়গা করে নিতে হলে খুবই ধারাবাহিক হতে হবে এবং দলকে জেতাতে হবে।’ এরপরে আরও যোগ করেন, ‘আমি যেভাবে রান করে চলেছি, এভাবেই যদি করে যেতে পারি, তাহলে হয়ত তাদের (টিম ম্যানেজমেন্ট) জন্য কঠিন হবে আমাকে উপেক্ষা করা এবং কোনভাবে হয়ত একাদশে জায়গা ধরে রাখতে পারব।’
×