ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাক্রান্ত বিদেশী শ্রমবাজার

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনাক্রান্ত বিদেশী শ্রমবাজার

দেশের শ্রমিকদের জন্য করোনায় বড় ক্ষতি হিসেবে দেখা হচ্ছে বিদেশের শ্রমবাজারের সার্বিক পরিস্থিতিকে। বিভিন্ন দেশে লকডাউন, জরুরী অবস্থার কারণে শিল্পকারখানা, সেবা ও নির্মাণ খাত বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন অনেক বাংলাদেশী অভিবাসী কর্মী। গত পাঁচ মাসে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন সোয়া লাখের বেশি কর্মী। ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ২ লাখ। অন্যদিকে করোনার আগে বিভিন্ন সময়ে ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় ২ লাখ কর্মী। এই মুহূর্তে ৫ লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন রয়েছেন। শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন নতুন করে আরও প্রায় ৩ লাখ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাশাপাশি সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরালো করার উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের ফলে বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরে অর্তনীতির সব হিসাবনিকাশই বদলে গেছে। আর এটা বিশ্বব্যাপী। তাই চ্যালেঞ্জটা বেশি। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নমুখী দেশে তরুণদের জন্য শ্রমবাজারের সম্প্রসারণ জরুরী। কোভিড-১৯ একদিকে যেমন আয় এবং কর্মসংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে, সীমিত পরিসরে হলেও বিশেষ করে তরুণদের জন্য নতুন করে কাজের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে অনলাইন ভিত্তিক কর্মকা- ও ই-কমার্সের সম্প্রসারণের জন্য বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া আবশ্যক। জনশক্তি আমাদের দেশের বড় সম্পদ। অনেকেই দেশের অধিক জনসংখ্যাকে বোঝা বলে মনে করেন। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে দক্ষ করে তুলে বিদেশে পাঠানো হলে এই জনগণই পরিণত হয় জনশক্তিতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী শ্রমজীবীরা অত্যন্ত কর্মদক্ষতার প্রমাণ রেখে চলেছেন। এতে দেশের মানুষের ভাগ্যের দরোজা যেমন হয়েছে প্রশস্ত, তেমনি তাদের কষ্টার্জিত অর্থে দেশের অর্থনৈতিক ভিতও মজবুত হচ্ছে। জনসম্পদকে সুষ্ঠুভাবে কাজে লাগানো গেলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চেহারাই পাল্টে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত শ্রমিকদের কষ্টার্জিত অর্থেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকছে, যা বলার আপেক্ষা রাখে না। শ্রমশক্তি আমদানিকারক দেশের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কাজটি জরুরী। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে এমনটা বলা যাবে না। বিদেশের শ্রমবাজার ধরে রাখাটাই চলতি বছরের জন্য আরাধ্য কাজ। বিদেশে ১ কোটির বেশি অভিবাসী কর্মী রয়েছেন। তারা যেন চাকরি না হারান, সে জন্য সরকারের কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে, তাদের উন্নয়নে বাংলাদেশী কর্মীদের অবদান রয়েছে। এমনিতেই দেশের শ্রমবাজারে সবার কর্মসংস্থানের সুযোগ হয় না। তার ওপর যারা ফেরত এসেছে তাদের বাড়তি চাপও থাকছে। তাদের কর্মসংস্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সুচিস্তিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশিত।
×