ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একাদশে ভর্তি- শিক্ষাঋণ

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

একাদশে ভর্তি- শিক্ষাঋণ

গত কয়েক মাস ধরে চলমান করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতি দেশের শিক্ষাঙ্গনে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে সেই জট খুলতে শুরু করেছে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির মাধ্যমে। রবিবার থেকে চলমান এই কার্যক্রম চলবে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রধানত অনলাইনে ইতোপূর্বে ভর্তির আবেদন গ্রহণ, যাচাই-বাছাই, -মাইগ্রেশন ও অন্যান্য ধাপ শেষ করা হয়েছে, যা শুরু হয়েছিল ৯ আগস্ট থেকে। করোনার কারণে এবার ভর্তির নিয়মকানুন কিছু শিথিল করা হয়েছে। অবশ্য এবারে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। কিছু বিষয় কমিয়ে অথবা কম নম্বরে পরীক্ষা নিয়ে খুব শীঘ্রই সেটি অনুষ্ঠিত হতে পারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এর পাশাপাশি সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয় করোনার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আরও কিছু ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ও পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস ও পাঠদান বন্ধ থাকলেও রেডিও-টেলিভিশন-অনলাইনে ক্লাস নেয়া ও পরীক্ষা চলেছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঋণ দেয়ার পাশাপাশি ই-লার্নিং-এর ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে সরকার। করোনার কারণে অনেক অভিভাবকের আয় সঙ্কুচিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিতে অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও মেধাবীদের জন্য শিক্ষাঋণ চালু হলে ভুক্তভোগীরা সমূহ উপকৃত হবে। পাশাপাশি ই-লার্নিং শিক্ষার্থীদের নতুন বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল তথা যুগোপযোগী হতে সহায়তা করবে নিঃসন্দেহে। অথচ কিছুদিন আগেও মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরই দেশব্যাপী একটা তোড়জোড়, হৈ-হট্টগোল পড়ে যেত একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য। তখন এটাকে নিছক ভর্তি না বলে ‘ভর্তিযুদ্ধ’ বলাই অধিকতর সঙ্গত হতো। ভাল একটি কলেজে ভর্তি হওয়া নিয়ে প্রায় সব শিক্ষার্থী ও অভিভাবক থাকতেন প্রবল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। কলেজগুলোতে পড়ে যেত সাজ সাজ রব ও অসম প্রতিযোগিতার ছড়াছড়ি। অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া তথা ভর্তির ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন শুরু হওয়ায় এই জট, জটিলতা, উদ্বেগ ও উত্তাপ কমে এসেছে অনেকাংশে। এবার করোনা তা কমিয়ে দিয়েছে বহুলাংশে। কোন দৌড়ঝাঁপ ও বিড়ম্বনা ছাড়াই রাজধানীসহ সারাদেশে ভর্তিচ্ছু ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর আবেদনপত্র চূড়ান্ত করে ভর্তিও শুরু হয়েছে। অপেক্ষমাণ ৬০ হাজার শিক্ষার্থীও পরে ভর্তি হতে পারবে। অনলাইনে ক্লাস শুরু হবে অক্টোবর থেকে। উল্লেখ্য, ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে মেধা ও ফলের ভিত্তিতে। অবশ্য হাতেগোনা কয়েকটি নামী-দামী কলেজ আদালতের রায় নিয়ে নিজস্ব নিয়মে অর্থাৎ, ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তবে এই সংখ্যা নগণ্য বলা চলে। বাস্তবতা হলো, দেশের সব কলেজের মান একই রকম নয়। নামী-দামী কলেজের পাশাপাশি অনেক অখ্যাত, অজ্ঞাত কলেজও আছে। আবার শহর ও গ্রামের শিক্ষার মানও এক রকম নয়। বরং বৈষম্য বিরাজমান। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা একটি অধিকার। কাউকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যায় না। আবার এর মানও অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয়, পর্যায়ক্রমে হলেও অন্তত অধিকাংশ স্কুল-কলেজের অবকাঠামোসহ শিক্ষা ও পাঠদানের মানোন্নয়ন করা। তাহলে আগামীতে ভর্তি সমস্যা বলে কিছু আর থাকবে না। দরিদ্র ও মেধাবীদের জন্য শিক্ষাঋণ এবং ই-লার্নিং কার্যক্রমের সম্প্রসারণও এক্ষেত্রে ফলপ্রসূ অবদান রাখতে পারে।
×