ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গভীর সমুদ্রবন্দর

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

গভীর সমুদ্রবন্দর

বিস্তর গবেষণা ও জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হতে চলেছে কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে। এর জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২৬ সালের মধ্যে গভীর সমুদ্রবন্দরটি চালু হতে পারে। তবে এর আগেই পরীক্ষামূলকভাবে মাদার ভেসেল ভেড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। করোনা মহামারীর সঙ্কট ও লকডাউনে কয়েক মাস কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও পুনরায় শুরু হয়েছে মাঠপর্যায়ের কাজ। ইতোমধ্যে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়ি। আগামী মাসে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের পর বিস্তারিত পরিকল্পনা তথা বন্দরের ডিজাইন করবে প্রতিষ্ঠানটি। এরপরই নিয়োগ দেয়া হবে ঠিকাদার কোম্পানি। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশের অন্যতম সহযোগী জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। বাকি অর্থের জোগান দেবে সরকার। বলাবাহুল্য, ইতোমধ্যে দেশের সার্বিক অর্থনীতির আকার ও পরিধি অনেক বেড়েছে। দেশের অভ্যন্তরে নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রামের সীতাকু- ও ফেনীর সোনাগাজী মিলিয়ে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, যা হবে দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম। আমদানি-রফতানির পরিমাণও বেড়েছে বহুলাংশে। বর্তমানে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয়ে থাকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নৌবন্দরের মাধ্যমে। তবে এই বন্দর দিয়ে আর কুলোচ্ছে না। ইতোমধ্যে পলিমাটি জমে বন্দরের চ্যানেল সরু ও ভরাট হয়ে গেছে। মাদার ভেসেল ভিড়তে পারে না বললেই চলে। লাইটারেজ জাহাজ দিয়ে কাজ চালাতে হয়। অন্যদিকে চালনা নৌবন্দরের কার্যক্রমও সীমিত। সবদিক বিবেচনায় সরকার পটুয়াখালীর পায়রা এবং কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম দিকে বিবেচনায় ছিল মহেশখালীর সোনাদিয়া। তবে মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বৃহৎ বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য জেটি ও চ্যানেল নির্মাণের কাজ শুরু হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে বেছে নেয়া হয় এই স্থানটিকেই। এতে যোগাযোগ সহজ, পরিবেশ রক্ষা, অধিক গভীরতা সবই পাওয়া সম্ভব। পায়রা সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রমও দৃশ্যমান হচ্ছে ক্রমশ। দেশ-বিদেশের পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়ছে, ছেড়ে যাচ্ছে, রাজস্ব আদায় হচ্ছে নিয়মিত। এমনকি যেসব জাহাজ এখান দিয়ে যাওয়ার সময় অতিক্রম করে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা তারাও টোল দিয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান হয়েছে বহু লোকের। আগামীতে বন্দরটি অধিক সচল ও বহু ব্যবহার্য হলে আরও বাড়বে কর্মচাঞ্চল্য। চাপ কমবে চালনা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সর্বাধিক মনোযোগ দেয় বিদ্যুত উৎপাদন, বন্দর স্থাপন ও যোগাযোগের উন্নয়নে- যা যে কোন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক। দেশ বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। চট্টগ্রাম ও চালনার পর পায়রায় হয়েছে তৃতীয় সমুদ্র বন্দর। সর্বোপরি মাতারবাড়িতে হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে অবস্থান করছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় প্রবৃদ্ধি ডবল ডিজিটে রূপান্তরিত হতে পারে। সে অবস্থায় গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন ও গুরুত্ব আরও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, চালনা ও পায়রা বন্দরের আধুনিকীকরণসহ সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
×