ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

স্বাভাবিক জীবনের প্রত্যাশা

বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করোনা মহামারীর সার্বিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠে সর্বস্তরের মানুষ কবে নাগাদ সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে- সেটি একটি বহুল উচ্চারিত অমূল্য প্রশ্ন। আদৌ ফিরে আসতে পারবে কি না- সে বিষয়টিও খুবই অনিশ্চিত। কেননা এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর যে চারিত্র্যলক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য দৃশ্যমান- তাতে প্রতীয়মান হয় যে, সহজে এই আপদ বিদায় নেবে না বিশ্ব থেকে। এমনকি কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলেও এর বহুল সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাবে। বার্ড-ফ্লু, ইনফ্লুয়েঞ্জা, ইবোলা ভাইরাস, এইচআইভি-এইডস, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, নিপা ভাইরাস ইত্যাদির মতোই মানুষকে প্রায় চিরদিন বহন করে বেড়াতে হবে করোনাভীতিও। সে ক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে যে, করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক চেহারা ও পুনর্বিন্যাস কখনই আর আগের মতো হবে না। গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবেও উঠে এসেছে বিষয়টি। সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি বলছে, দুই বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী এমন সমূহ সঙ্কট খুব কমই দেখা গেছে। বরং কোভিড-১৯ তার থেকেও অনেক বেশি এবং সার্বিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে বিশ্বকে, যা গত ৭৫ বছরের ইতিহাসে দেখা যায়নি। পৃথিবীজুড়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সমাজ, অর্থনীতি, বাণিজ্য, পর্যটন, উৎপাদন ব্যবস্থা প্রায় সবই বিপর্যস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন হয়েছে করোনা মহামারীতে। অগণিত মানুষের মৃত্যুসহ স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতার বাইরে সমূহ ক্ষতির তালিকায় রয়েছে সর্বস্তরের মানুষের জীবন-জীবিকা, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও শিক্ষা সর্বোপরি উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান। ফলে প্রায় সর্বত্র দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্য বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনীতি ও পরিবেশ। বহুধা বিস্তৃত এই ক্ষয়ক্ষতির মোকাবেলা করে কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধ এবং এর সমূহ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতি জরুরী এবং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত এই প্রস্তাবে ১৬৯টি দেশ সমর্থন জানায়, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ভোট দিয়েছে প্রস্তাবের বিপক্ষে। হাঙ্গেরি ও ইউক্রেন বিরত থাকে ভোট দেয়া থেকে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনে এই প্রস্তাব পাস হতে পারে। সম্মিলিতভাবে বহুমুখী এই চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করা না গেলে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত ও ব্যাহত হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনীতিই মূলত বিশ্বায়নের সঙ্গে সংযুক্ত। পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এই অবস্থায় করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতির চেহারা কী দাঁড়াবে, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, চরম এক মহামন্দার কবলে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব। এর পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী খাদ্য সঙ্কট তথা দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাসও দিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। অন্তত ৩৬টি দেশে দুুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি। বাংলাদেশ অবশ্য এদিক থেকে ভাল অবস্থানে রয়েছে। বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় আগামীতে খাদ্য সঙ্কট এড়ানো যেতে পারে। বহির্বিশ্বে পোশাক রফতানিও বাড়ছে। সরকার গৃহীত প্রণোদনাসহ নানা পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণাধীনে বলা চলে। তবু সতর্ক ও সাবধানতার বিকল্প নেই। সে অবস্থায় যথাযথ সুরক্ষাসহ শিল্প-কারখানাসহ মেগা প্রকল্পগুলো সচল এবং সর্বস্তরের মানুষ উদ্যোগী হলে জীবন-জীবিকা এক সঙ্গে চলতে পারে হাত ধরাধরি করে।
×