স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বহুর আলোচিত নির্বাচন আগামী ৩ অক্টোবর। সভাপতি পদ নিয়েই আলোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বর্তমান সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন আবারও নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তার বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ও আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। ভার্চুয়াল সেই আন্দোলন এখন চলে এসেছে রাজপথেও।
‘সালাউদ্দিন হঠাও, ফুটবল বাঁচাও’, ‘দুর্নীতি হঠাও, ফুটবল বাঁচাও’, ‘আমরা কারোর বিপক্ষে নই, আমরা ফুটবলের পক্ষে’, ‘ফুটবলের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে হবে’, ‘সেভ ফুটবল’, ‘বয়কট সালাউদ্দিন’, ‘উই লাভ প্লেয়ার সালাউদ্দিন, বাট নট লাভ প্রেসিডেন্ট সালাউদ্দিন’, ‘সালাউদ্দিন নিপাত যাক, ফুটবল মুক্তি পাক’, ‘বিগত ১২ বছরের দুর্নীতির বিচার চাই’, ‘আমরাও একদিন ফুটবল বিশ্বের শক্তিশালী খেলুড়ে দেশ হতে চাই’, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাপ্নিক বন্ধন ও আন্দোলনের যাত্রা’ ... এরকম আরও শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে সোমবার সকালে মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যে ঢাকার তোপখানা রোডে অবস্থিত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় হাজির হয়েছিল প্রায় শ’খানেক ফুটবলপ্রেমী (এরা ৪/৫টি ফেসবুকভিত্তিক ফুটবল গ্রুপের সদস্য)। তারা এসেছিল ‘প্রজন্ম (ফুটবল, যাদের চেতনায় ও অস্তিত্বে) নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে। এই সভায় যারা যোগ দেন, তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। তাদের আমন্ত্রণ পেয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় যোগ দেবেন সাবেক জাতীয় ফুটবলার কায়সার হামিদ। এছাড়া ফুটবলপ্রেমীদের সঙ্গে একাত্ত¡তা প্রকাশ ও তাদের সমর্থন দিতে হাজির ছিলেন দেশের প্রখ্যাত আইনজীবি-ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত ‘ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমিও (নিজ এলাকা হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবস্থিত) ইতোমধ্যে বেশ নাম কুড়িয়েছে। যেখানে বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে শতাধিক ফুটবলারকে। আইনজীবী হলেও ফেসবুক লাইভে এসে প্রায়ই সমাজের নানা অসঙ্গতি তুলে ধরে দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন।
সোমবারের এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বর্তমান সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ, গত এক যুগে তার আমলে দেশের ফুটবল তলানিতে যাওয়ার নানা চিত্র, সমালোচনা, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যর্থতার বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ, বাফুফের আসন্ন নির্বাচনে তাকে ভোট না দেয়ার জন্য ১৩৯ কাউন্সিলরদের প্রতি অনুরোধ, সালাউদ্দিন বয়কট আন্দোলন সফল করার জন্য সবাইকে আহবান করা এবং এর মাধ্যমে নতুন কাউকে সভাপতির আসনে অধিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশের ফুটবলের হারানো গৌরব আবারও ফিরিয়ে আনার আহবান জানানো হয়। তাদের পরবর্তী কর্মসূচির তারিখ আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর।
সালাউদ্দিন হটাতে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছেন সুমন, ‘আমরা সফল হবো কি না জানি না। একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই পারেন এদের সিন্ডিকেটটা ভাঙ্গতে। উনিই একমাত্র পারেন আমাদের মতো সাধারন ফুটবলপ্রেমীদের এই বড় সিন্ডিকেটের হাত থেকে বাঁচাতে।’
‘প্রজন্ম’ সংগঠন তাদের ১০ দফা দাবির কথাও প্রকাশ করে এই প্রতিবাদ সভায়। সেগুলো হলো : সালাউদ্দিন ও তার প্যানেলকে অতিসত্ত্বর পদত্যাগ করতে হবে, এতদিন যা যা দুর্নীতি করেছেন প্রতিটির হিসেব জনগণের কাছে দিয়ে যেতে হবে, বাফুফের সার্বিক নজরদারির জন্য আলাদা করে একটি ফুটবল নজরদারি কাউন্সিল গঠন করতে হবে, ফুটবল নজরদারি কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর/রাষ্ট্রের উচ্চপদের সৎ কর্মচারীকে নিয়োগ দিতে হবে, অতিসত্ত্বর ফুটবল মাঠ-রেফারি-খেলোয়াড়দের নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে হবে, বাফুফের জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে, ফেডারেশন কোথায় কত টাকা খরচ করে তার হিসেব জনগণের সামনে বাৎসরিক তুলে ধরতে হবে, পাতানো খেলা বন্ধ করতে হবে, প্রতিটি উপজেলা-জেলায় নিয়মিত লিগ চালু করতে হবে, বিদেশী খেলোয়াড়দের তুলনায় দেশীয় খেলোয়াড়দের বেশি মূল্যায়ন করতে হবে এবং বাফুফে ফেসবুক পেজের এডমিন আমাদের লাখো ফুটবলপ্রেমীকে শুধুমাত্র # সালাউদ্দিন_আউট (ইংরেজিতে) লেখার কারণে ব্যান করেছে। এজন্য তাদের ক্ষমা চাইতে হবে, নয়তো তাদের বহিস্কার করতে হবে।
