ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ টাকা কেজিতে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

৩০ টাকা কেজিতে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গত কয়েক দিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। কিছুদিন আগেও খুচরা বাজারে যে পেঁয়াজ ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে। এই অবস্থায় বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রবিবার থেকে খোলা ট্রাকে প্রতিকেজি ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি। সারাদেশে ২৭৫টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি করে সংস্থটি। এরমধ্যে রাজধানীতে ৪০টি ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। এতে বাজার মূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে পেঁয়াজ কিনতে পেরে সন্তুষ্টি জানিয়েছেন ক্রেতারা। একজন ক্রেতা সর্বাধিক দুই কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। পেঁয়াজের সঙ্গে চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেলও ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। জানা গেছে, গত কয়েক মাসের মধ্যে দেশে এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এই পণ্যটি। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৬৫-৭৫ এবং আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এতে করে পেঁয়াজের বাজারে অস্বস্তি বিরাজ করছে। করোনার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের আয় উপার্জন কমে গেছে। এরমধ্যে শাক-সবজিসহ বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম কয়েক দফা বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় চলমান করোনা পরিস্থিতি ও বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রবিবার থেকে দেশজুড়ে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। টিসিবি জানিয়েছে, সারাদেশে ২৭৫টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় ৪০ ট্রাক, চট্টগ্রামে ১০, রংপুরে সাত, ময়মনসিংহে পাঁচ, রাজশাহীতে পাঁচ, খুলনায় পাঁচ, বরিশালে পাঁচ, সিলেটে পাঁচ, বগুড়ায় পাঁচ, কুমিল্লায় পাঁচ, ঝিনাইদহে তিন ও মাদারীপুরে তিনটি, অবশিষ্ট জেলা ও উপজেলায় প্রতিটিতে দুটি করে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাভুক্ত উপজেলায় অতিরিক্ত পাঁচটি ট্রাক ও বন্যাকবলিত জেলা-উপজেলায় পরিস্থিতি বিবেচনায় ১৩ ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম শুক্র ও শনিবার বাদে আগামী ১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে টিসিবি। প্রতিটি ট্রাকে চিনি বরাদ্দ থাকছে ৫০০-৭০০ কেজি। রবিবার সকালে রাজধানীর কচুক্ষেত বাজারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য টিসিবির ট্রাক হাজির হওয়া মাত্রই ক্রেতাদের ভিড় লাগতে শুরু করে। এ সময় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের টিসিবির পেঁয়াজ কিনতে দেখা গেছে। দুপুরে কচুক্ষেত এলাকায় ট্রাক থেকে পণ্য কিনে ফেরার পথে কথা হয় আব্দুল করিম নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, বাজার থেকে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় দেশী পেঁয়াজ কিনতে হয়। এখানে ৩০ টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে। এটি একটি ভাল উদ্যোগ।’ এদিকে প্রথম দিন টাকা জমা দিয়ে পণ্য পেতে ডিলারদের কিছুটা সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন ডিলাররা। তবে পণ্য পাওয়ার পর পরই শুরু হয় বিক্রি কার্যক্রম। টিসিবি সূত্রে আরও জানা যায়, একজন ক্রেতা সর্বাধিক দুই কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ কিনতে পারছেন। পেঁয়াজের সঙ্গে চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেলও ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি চিনি ও মসুর ডাল ৫০ টাকা কেজি দরে একজন ভোক্তা সর্বাধিক দুই কেজি করে কিনতে পারছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা দরে একজন ভোক্তা দুই লিটার থেকে শুরু করে সর্বাধিক পাঁচ লিটার পর্যন্ত কিনতে পারছেন। এ প্রসঙ্গে টিসিবির প্রধান তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের দাম না কমা পর্যন্ত টিসিবির মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে সরকার। এখন পর্যন্ত টিসিবির হাতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। এছাড়া তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি টিসিবি টেন্ডারের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখবে। জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ টাকা দরে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। এছাড়া ভারতের পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত টিসিবি টেন্ডারের মাধ্যমে তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এ লক্ষ্যে তুরস্ক সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা করা হয়েছে। পাশাপাশি মিসর, থাইল্যান্ড এবং চীন থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব। প্রয়োজন হলে এসব দেশ থেকেও আমদানি করা হবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দাম স্বাভাবিক রাখতে এ বছর রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এ জন্য এ বছর রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করছি, শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে।’ পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। বন্যার কারণে সরবরাহে সমস্যা হয়েছে। অন্যদিকে আমদানির উদ্যোগও নিয়েছি। এতে করে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।’ টিপু মুনশি বলেন, ‘গত বছর ভারত আমাদের দেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এতে আমাদের এখানকার ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়েছিল। ভারত গতবার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় আমরা বিকল্প বাজার থেকে আমাদানি করেছি। এটি আমাদের জন্য ছিল এক নতুন অভিজ্ঞতা। এতে আমরা বিকল্প বাজার পেয়েছি। তুরস্ক, মিসর, ইন্দোনেশিয়া থেকে গতবার পেঁয়াজ আসার কারণে এবারও আমাদের লোকজনের যোগাযোগ ভাল আছে। আমরা তুরস্ক থেকে আমদানির জন্য টেন্ডারও করেছি টিসিবির মাধ্যমে। পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি।’ খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমল, খুচরায় প্রভাব পড়েনি ॥ স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম থেকে জানান, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও কমেছে। কিন্তু খুচরা বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়ছে না। যে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪০/৪৫ টাকা বিক্রি হতো, এখন তা ৩৫/৩৬ টাকায় নেমে এসেছে। তবে খুচরা পর্যায়ে এখনও কেজিপ্রতি ৫০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রামে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে। ৩০ টাকা হারে একজনকে সর্বোচ্চ দুই কেজি পেঁয়াজ দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যায়। মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজারে অভিযান চালায়। অভিযানের পর পাইকারিতে পেঁয়াজের মূল্য হ্রাস পায়। তবে খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়তে আরও কদিন সময় নেবে বলে বাজার সূত্রে জানানো হয়েছে। অপরদিকে, হিলি বন্দরের পণ্যের আমদানিকারক ও খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে হঠাৎ করে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ রয়েছে। প্রশাসন বিষয়টি কঠোরভাবে গ্রহণ করার পর পেঁয়াজের মোকামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। এছাড়া পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি ঠেকাতে ভারত, তুরস্ক, মিসর ও ইন্দোনেশিয়া থেকে রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ অবস্থায় এ সপ্তাহের শেষদিকে আমদানির পেঁয়াজ দেশে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দাম আরও হ্রাস পেতে পারে বলে আমদানিকারকদের সূত্রে জানানো হয়েছে। এদিকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) রবিবার থেকে সারাদেশে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। ২৭৫টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির এ পেঁয়াজ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। টিসিবি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, পেঁয়াজের সঙ্গে চিনি, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেলও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে চিনি ৫০, মসুর ডাল ৫০ ও তেল ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। বগুড়ার ৭ পয়েন্টে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি শুরু ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে রবিবার দুপুর থেকে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের(টিসিবি) উদ্যোগে বগুড়ায় পেঁয়াজ ও তেলসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি শুরু হয়েছে। জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে টিসিবির এই ‘ভ্রাম্যমাণ ট্রাক সেল কার্যক্রমে’র প্রথম দিনেই সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশ সাড়া লক্ষ্য করা গেছে। জেলার ৭টি ভ্রাম্যমাণ পয়েন্টে টিসিবি নির্ধারিত ডিলারদের মাধ্যমে এই পণ্য বিক্রি করছে। শহরের সার্কিট হাউসের সামনের সড়ক টিসিবির পণ্য বিক্রির ভ্রাম্যমাণ অন্যতম সেলিং পয়েন্ট। ট্রাক থেকে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ট্রাকের সামনে পণ্য নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো বেসরকারী শিক্ষক (কিন্ডারগার্টেন স্কুল) মোঃ শহিদুল্লাহ ও চাকরিজীবী আবু সাঈদ ও নাজমা বেগমসহ অন্যরা জানালেন,বাজারের চেয়ে দাম সাশ্রয় হওয়ায় তারা টিসিবির পেঁয়াজ ও তেলসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য কিনতে এসেছেন। বাজারে এসব পণ্যের দাম চড়া। লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের মধ্যে পেঁয়াজ নিতে আসা লোকজনের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। দুপুর থেকে পণ্য বিক্রি শুরু কিছু সময়ের মধ্যেই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার সাধারণ মানুষ টিসিবির পণ্য নেয়ার জন্য ভিড় করলে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। টিসিবি বগুড়া অফিসের সহকারী পরিচালক মোঃ জামাল উদ্দিন জানালেন, শহরের সার্কিট হাউজ রোড, মাটিডালি ও ঠেঙ্গামারা এবং উপজেলা পর্যায়ে শিবগঞ্জ, আদমদিঘি,সারিয়াকান্দি ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও মসুর ডাল বিক্রি করা হচ্ছে।
×