ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাওড় উন্নয়নে চাই পৃথক মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ২১:১০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাওড় উন্নয়নে চাই পৃথক মন্ত্রণালয়

হাওড় বাংলাদেশের অফুরন্ত সম্ভাবনাময়, অথচ সমস্যা-জর্জরিত এক জনপদ। নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৫২টি উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিশাল এ ভূ-ভাগ গঠিত। উল্লিখিত ৫২টি উপজেলার মধ্যে ১৫টি উপজেলার সম্পূর্ণ, ১৩টি উপজেলার সিংহভাগ এবং বাকি ২৪টি উপজেলার আংশিক এলাকা হাওড়াঞ্চলের অন্তর্গত। হাওড়াঞ্চলে বসবাসরত অধিবাসীর সংখ্যা ৩০ লাখের বেশি। ধারণা করা হয়, উত্তরদিকে পাহাড়বেষ্টিত এ ভূ-ভাগটি একসময় সাগর-গর্ভে নিমজ্জিত ছিল। [কিছু প্রাচীন পুঁথিপত্রে ‘কালীদহ’ এবং ‘লৌহিত্য সাগরের’ উল্লেখ আছে]। বছরের প্রায় ছয়মাস সেখানে বিরাজ করে বর্ষা। তখন কূল-কিনারাহীন জলরাশির দিকে তাকালে এলাকাটিকে সাগরের মতো মনে হয়। আর হাওড়ের বুকে ভেসে থাকা গ্রামগুলোকে মনে হয় ছোট ছোট দ্বীপ। এ কথা অনস্বীকার্য যে, উন্নয়ন বিবেচনায় অন্য যে কোন এলাকার চেয়ে হাওড়াঞ্চল পিছিয়ে। সেই যে কবে ছড়া কেটে বলা হয়েছিল- ‘বর্ষায় নাও, হেমন্তে পাও’, হাওড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা আজও এ প্রবাদের মতোই সত্য। অনেক উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ নেই। উপজেলাগুলোর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও শোচনীয়। তবে ইদানীংকালে কিছু সাব-মার্জিবল (ডুবন্ত) সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, যা হাওড় উন্নয়নে একটি যুগোপযোগী পদক্ষেপ। প্রতিটি উপজেলা সদর থেকে ইউনিয়ন সদর পর্যন্ত এ ধরনের সড়ক নির্মাণ করা হলে হাওড়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে। হাওড়াঞ্চলের শিক্ষার চিত্রটিও নাজুক। নারী শিক্ষার কাক্সিক্ষত প্রসার ঘটেনি। প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। ২ হাজার ৩৯১টি গ্রামের মধ্যে সহস্রাধিক গ্রামে এখনও প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ফলাফলও সন্তোষজনক নয়। পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ-ফাইভের যে জয়জয়কার দেখি, হাওড়ে তার প্রতিফলন নেই। অনুন্নত যোগাযোগের কারণে বর্ষায় হাওড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতির হার অনেক কমে যায়। ২০১৭ সালের ১৮মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেত্রকোনার হাওড়াঞ্চল (খালিয়াজুরী) পরিদর্শনকালে হাওড়াঞ্চলে আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন। সে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উপস্থিতির হার বাড়বে বলে মনে করেন হাওড়ের বাসিন্দারা। তাছাড়াও হাওড়াঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের জন্য তৈরি করা শিক্ষা ক্যালেন্ডারের তারতম্য আছে। ধান রোপন এবং তোলার মৌসুমে এখানকার শিক্ষার্থীরা পারিবারিক কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে যায়। তখনও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নগণ্য পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। অন্যদিকে হাওড়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের অভাব প্রকট। হাওড়ের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র করুণ। চিকিৎসক-নার্স-কর্মচারীরা হাওড়ে থাকতে চান না। অগত্যা যাদের কিছুদিন থাকতে হয়, তাদের বেশিরভাগ পালাক্রমে ডিউটি করেন। আধুনিক চিকিৎসা সেবা তো দূরের কথা, হাওড়াঞ্চলের অনেক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সামান্য রক্ত পরীক্ষা বা ইসিজি-এক্সরের ব্যবস্থাও নেই। সড়ক যোগাযোগ না থাকায় নেই এ্যাম্বুলেন্স। সাধারণ রোগবালাইয়ের জন্যও হাওড়ের বাসিন্দাদের জেলা সদরে ছুটে যেতে হয়। গভীর রাতে কেউ অসুস্থ হলে স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না তাদের। চিকিৎসার অভাবে অনেকসময় পথেই মারা যায় জটিল রোগী ও প্রসূতি মা। হাওড়ের অর্থনীতি মূলত কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কৃষি বলতে শুধু বোরো ফসল। কিন্তু ফসল তুলতে গিয়ে দুর্ভোগের সীমা থাকে না কৃষকদের। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে প্রায়বছর ফসল তলিয়ে যায়। ফলে হুমকির মুখে পড়ে খাদ্যনিরাপত্তা। সর্বশেষ, ২০১৭ সালের বাঁধভাঙ্গা ঢলে হাওড়ের প্রায় শতভাগ ফসল নষ্ট হয়েছে। হওড়ে একবার ভাল ফলন হলে কৃষক পরিবারগুলোতে আনন্দের বন্যা দেখা দেয়। কিন্তু মার খেলে বেড়ে যায় দারিদ্র্য, অভাব-অনটন কাটিয়ে উঠতে লেগে যায় বহু বছর। হাওড়ের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। কিন্তু নির্মাণকাজে দুর্নীতি ও অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে এসব বাঁধ প্রায়ই ফসলের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়। ফসলের নিরাপত্তার জন্য হাওড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি অনেকদিনের। কিন্তু কৃষকদের সে স্বপ্ন আজও অধরা। পেশার দিক দিয়ে হাওড়াঞ্চলে দ্বিতীয় বৃহৎ অবস্থানে আছেন মৎস্যজীবীরা। মোট জনসংখ্যার প্রায় আটভাগ এই খাতের ওপর নির্ভরশীল। সাত জেলার হাওড়াঞ্চলে ২শ’ থেকে ১হাজার একর আয়তনের বেশি জলমহাল আছে প্রায় ১২০টি। এছাড়া ছোট জলমহাল আছে আরও কয়েক হাজার। কিন্তু এসব জলমহালে আজও মৎস্যজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মৎস্যজীবী সমিতির নামে ইজারা দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা প্রভাবশালীরা। প্রকৃত মৎস্যজীবীরা জলমহালগুলোর ধারে-কাছেও ভিড়তে পারেন না। এ কারণে পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এদিকে বর্ষার ভাসান পানিতে অবাধে কারেন্ট ও মশারি জালের ব্যবহারে বিপন্ন হচ্ছে মাছের বিভিন্ন প্রজাতি। দখল হয়ে যাচ্ছে খাল-বিল ও জলাশয়। শুষ্ক মৌসুমে সব শুকিয়ে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে মাছের নিরাপদ আবাসস্থল। পর্যাপ্ত অভয়াশ্রম না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে প্রজনন। উজাড় হচ্ছে অন্যান্য জলজপ্রাণীও। প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম করে বাঁচতে হয় হাওড়বাসীর। বর্ষার বিশাল জলরাশিকে হাওড়ের সম্পদ ভাবা হলেও মাঝেমধ্যে তা সমূহ বিপর্যয় ডেকে আনে। প্রায় বছরই বন্যা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ধন-সম্পদ ও ঘরবাড়ি। বর্ষাকালে সামান্য ঝড়-বাতাস দেখা দিলেই শুরু হয় ভাঙন। বিশাল বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে গ্রামগুলোতে। তখন বিপুল টাকা ব্যয়ে বাঁশ-কাঠের প্রাচীর দিয়ে ঘরবাড়ি রক্ষা করতে হয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত এক শতাব্দীতে প্রায় ৭০টি গ্রাম হাওড়গর্ভে বিলীন হয়েছে। হাওড়ের বাসিন্দারা গ্রামগুলো রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করার দাবি জানিয়ে আসছেন বহুদিন ধরে। কিন্তু বেশিরভাগ গ্রামে আজও তা করা হয়নি। হাওড়ের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে সুরমা, কুশিয়ারা, ধনু, মনু, ধলাই, সোমেশ্বরীসহ বেশকিছু নদ-নদী। এসব নদ-নদী এবং খাল-বিলকে বলা হয় হাওড়ের প্রাণ। কিন্তু নদী ব্যবস্থাপনায় সরকারী দফতরের উদাসীনতা সীমাহীন। পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে বয়ে আসা বালি আর পলির স্তর জমে অনেক নদী-খাল আজ বিলীন হওয়ার পথে। অন্যদিকে বেদখলে পড়ে চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে বহু বিল ও জলাশয়। এসব কারণে হাওড়ে পানির ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ-প্রতিবেশ, কৃষি ব্যবস্থা এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর। দেখা যাচ্ছে, পাহাড়ী ঢলের পানি ধারণ করতে না পারায় এপ্রিলেই অকাল বন্যায় ডুবছে হাওড়। আবার শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই খরায় খা খা বিরানভূমিতে পরিণত হচ্ছে বিস্তীর্ণ জমি। আগে জলাশয়ের জমা পানি দিয়েই হাওড়ের জমি চাষাবাদ হতো। অথচ এখন চাষীদের স্যালো ইঞ্জিনচালিত সেচ ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে হয়। একসময় হাওড়াঞ্চলে প্রচুর হিজল, করচ, মান্দার, বরুণ প্রভৃতি পানিবান্ধব উদ্ভিদ ছিল। কিন্তু দিনে দিনে উঁচু ভূমি কমে যাচ্ছে। জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঘরবাড়ি। এসব কারণে হাওড়ে এখন বনভূমি নেই বললেই চলে। অথচ হাওড়ের বাস্তুভিটা রক্ষায় বনভূমির প্রয়োজন অপরিসীম। হাওড়াঞ্চলের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন যেমন হয়নি, তেমনি অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিরূপ প্রভাবও কম পড়ছে না। পরিবেশ-প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র্যের কথা চিন্তা না করেই যত্রতত্র নির্মাণ করা হচ্ছে উঁচু সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট ও স্লুইসগেট। এসব স্থাপনার কারণে পানির অবাধ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে হাওড়ের চিরচেনা বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটছে, যা পরিবেশ-প্রতিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এদিকে পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে বয়ে আসা বালি ও পলির স্তর জমে অনাবাদী হচ্ছে বহু জমি। পানির স্বাভাবিক প্রবাহের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে মাছ এবং জলজ প্রাণীর প্রজনন। এছাড়াও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে হাওড়াঞ্চলের নৌপথগুলো দিনদিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। অপেক্ষাকৃত কম উচ্চতার সেতু বা কালভার্টের কারণে চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বহু নৌপথ। অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও হাওড় এলাকায় পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠেনি আজও। অথচ হাওড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সারাবছর সেখানে প্রচুর দর্শনার্থী আসা-যাওয়া করেন। হাওড়াঞ্চলের কিছু এলাকাকে সমুদ্র-সৈকতের বিকল্প হিসেবে গড়ে তোলার সমূহ সম্ভাবনা বিরাজমান। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিক দিয়েও হাওড়াঞ্চল বেশ সমৃদ্ধ। বাউল, ভাটিয়ালী, জারি-সারি, পালা-ঢপ, কিস্সা, ধামাইলসহ লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির নানা উপাদান ছড়িয়ে আছে হাওড়ের পরতে পরতে- যা সংরক্ষণ ও চর্চার অভাবে বিলুপ্তির পথে। এদিকে সরকারী চাকরিজীবীদের কাছে হাওড় এলাকাটি ‘পানিশম্যান্ট জোন’ হিসেবে বিবেচিত। কোন কোন উপজেলায় দেখা যায়, ইউএনও এবং ওসি ব্যতীত অন্যান্য দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মাসের বেশিরভাগ সময় গড়হাজির থাকেন। এ কারণেও বঞ্চনার শেষ নেই হাওড়বাসীর। শুরুতেই বলা হয়েছে, হাওড়াঞ্চল একটি অফুরন্ত সম্ভাবনাময় অথচ সমস্যা জর্জরিত এলাকা। কিন্তু সে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে অবহেলিত অঞ্চলটিকে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনার ছকে আনা দরকার। এ জন্য দরকার সমন্বিত উদ্যোগ। এখানে উল্লেখ করা দরকার, স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশ গঠনের কাজে হাত দেন, তখন তিনি হাওড়ের কথাও ভেবেছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৭ সালে ‘বাংলাদেশ হাওড় উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন করা হয়। কিন্তু ১৯৮২ সালে তৎকালীন সরকার এক আদেশে প্রতিষ্ঠানটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। এরপর ২০০০ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে আবার ‘বাংলাদেশ হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড’ গঠন করা হয়। ২০১৬ সাল থেকে এটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত একটি অধিদফতর হিসেবে কাজ করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, হাওড়ের বাসিন্দারা হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের কার্যক্রম সম্পর্কে খুব একটা ওয়াকিফহাল নন। হাওড়ের কাক্সিক্ষত উন্নয়নে দফতরটি খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। হাওড়ের বাসিন্দারা মনে করেন, একটি বিশেষ অধিদফতর বা এর আওতায় পরিচালিত সামান্য কিছু কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে হাওড়বাসীর উন্নয়ন-বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। তাছাড়া হাওড়াঞ্চলে কর্মরত সরকারী দফতরগুলোর উন্নয়ন কাজে সমন্বয়ের অভাব প্রকট। এসব কর্মকান্ডের সমন্বয় যেমন দরকার, তেমনি দরকার হাওড়াঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ কোন উদ্যোগ। আর সে উদ্যোগটি হতে পারে হাওড় বিষয়ক একটি মন্ত্রণালয় গঠন, যা হাওড়াঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে কার্যকর অবদান রাখতে পারবে। প্রসঙ্গক্রমে এখানে ১৯৯৮ সালে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মতো বৃহৎ হাওড়াঞ্চলও স্বতন্ত্র ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। হাওড়ের পরিবেশ-প্রতিবেশ বা জীবনধারাও ব্যতিক্রম। উল্লেখ করা দরকার, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সুবিধা পাচ্ছেন তিন পার্বত্য জেলার প্রায় ১৬ লাখ মানুষ। আর হাওড়বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হলে এর আওতায় আসবে সাত জেলার ৫২টি উপজেলার ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি হবে, তা হলো, এ মন্ত্রণালয় হাওড়াঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ, ঋতু বৈচিত্র্য, প্রাণবৈচিত্র্য এবং জীবনধারার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মহা-পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। হাওড়ের বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখে হাওড়বাসীর জীবনমানের সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে পারবে এ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে হাওড়ের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে এ দাবিটি উঠতে শুরু করেছে। হাওড়াঞ্চলের উন্নয়নবিষয়ক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে প্রায়ই বলা হচ্ছে হাওড়বিষয়ক একটি মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা। আমরা জানি না, রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণী মহল বিষয়টি নিয়ে আদৌ ভাবছেন কি-না। তবে আশা রাখি, অনগ্রসর হাওড়াঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে সরকারের নীতি নির্ধারকরা দাবিটির যথার্থতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। যদি তা হয়, তাহলে হাওড়ের বাসিন্দাদের স্বপ্ন-দুয়ার খুলে যাবে। ‘হাওড়বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ হবে হাওড়ের সামগ্রিক উন্নয়নের এক মহা-উদ্যোগ। লেখক : সাংবাদিক [email protected]
×