ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ থেকে ৩০ টাকায় টিসিবি বিক্রি করবে

তুরস্ক থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে

প্রকাশিত: ২২:৩০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

তুরস্ক থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমাতে জরুরী ভিত্তিতে তুরস্ক থেকে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া জি টু জি বৈঠকের পর মিয়ানমার থেকে ফের পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে এই পেঁয়াজ জাহাজে করে দেশে আনবেন বেসরকারী খাতের আমদানিকারকরা। করোনার কারণে দীর্ঘদিন মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্সিয়াল কাউন্সিলর ও দেশটির শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বড় পাঁচজন উদ্যোক্তা বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মূলত এদের কাছ থেকে আমদানিকারকরা জাহাজে করে পেঁয়াজ নিয়ে আসবেন। করোনার কারণে টেকনাফ বন্দর ব্যবহার করা হচ্ছে না। প্রতিদিন ১ থেকে দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আসবে মিয়ানমার থেকে। এর পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখা হবে। আশা করা হচ্ছে, এসব উদ্যোগের ফলে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আজ রবিবার থেকে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি খোলা ট্রাকে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু ঢাকায় ৪০টি ট্রাকে করে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। এতে বাজার মূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন সাধারণ ভোক্তারা। এর একটি ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে সব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টিসিবির ৩০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হলে বাজারে দাম বাড়ার আর কোন সুযোগ থাকছে না। এছাড়া ভারতের পাশাপাশি বিকল্প উৎস থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত টিসিবি টেন্ডারের মাধ্যমে তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করবে। এলক্ষ্যে তুরস্ক সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা করা হয়েছে। পাশাপাশি মিসর, থাইল্যান্ড এবং চীন থেকেও পেঁয়াজ আমদানি করা সম্ভব। প্রয়োজন হলে এসব দেশ থেকেও আমদানি করা হবে। জানা গেছে, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে এবার ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর পেঁয়াজ উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে দেশটির নাসিক ও সাউথে পেঁয়াজের উৎপাদন স্বাভাবিক রয়েছে। এ কারণে ভারত পেঁয়াজের রফতানি মূল্য এখনও সংশোধন করেনি। সাউথের পেঁয়াজ আসা শুরু হলে এমনিতেই দাম হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ দেশের আমদানির প্রায় ৯০ ভাগ পেঁয়াজ ভারত থেকে আসে। আর এ কারণে ভারতে দাম বাড়লে বাংলাদেশের বাজারে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ইতোমধ্যে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা। ওই বন্দরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ জাত ও মানভেদে ৩৭-৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও সর্বশেষ তা বেড়ে ৩৯-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ও দাম নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। আগে হিলি বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হলেও, বর্তমানে তা অর্ধেকে নেমেছে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসের মধ্যে দেশে এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে এই পণ্যটি। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৬৫-৭৫ এবং আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এতে করে পেঁয়াজের বাজারে অস্বস্তি বিরাজ করছে। করোনার কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের আয় উপার্জন কমে গেছে। এরমধ্যে শাক-সবজিসহ বেশিরভাগ ভোগ্যপণ্যের দাম কয়েকদফা বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন সঙ্কটে পড়েছে সাধারণ মানুষ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দ্রুত পেঁয়াজের দাম কমানোর উদ্যোগ না নেয়া হলে গত বছরের মতো পেঁয়াজ নিয়ে লঙ্কাকা- ঘটে যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা সঙ্কটের সুযোগ নিতে পারে। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে সেই পেঁয়াজ ভোক্তাকে ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে। যদিও এবার প্রথম থেকে সরকার পেঁয়াজ নিয়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত টাস্কফোর্স পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে। কোনদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি সস্তায় পেঁয়াজ আনা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ৩০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করবে টিসিবি ॥ সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি বাজার মূল্যের অর্ধেক দামে অর্থাৎ ৩০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি করবে আজ রবিবার থেকে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৭৫টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি করবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। এর পাশাপাশি সংস্থাটি পেঁয়াজের পাশাপাশি ৮০ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল, ৫০ টাকা কেজিতে মসুর ডাল ও চিনি বিক্রি করবে। ভোক্তারা টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ ২ কেজি করে পেঁয়াজ, চিনি ও মসুর ডাল কিনতে পারবেন। আর সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন ২-৫ লিটার পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে টিসিবির প্রধান তথ্যকর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জনকণ্ঠকে বলেন, টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম শুরু হলে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে। সরকার ভর্তুকি মূল্যে এসব পেঁয়াজ সাধারণ মানুষের জন্য বিক্রি করছে। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম না কমা পর্যন্ত টিসিবির মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে সরকার। এখন পর্যন্ত টিসিবির হাতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ রয়েছে। এছাড়া তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সরাসরি টিসিবি টেন্ডারের মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখবে। এদিকে, ২৭৫টি ট্রাকের প্রতিটিতে দৈনিক ৫০০-৭০০ কেজি চিনি, ৪০০-৬০০ কেজি মসুর ডাল, ২০০-৪০০ কেজি পেঁয়াজ এবং ৭০০ থেকে ১ হাজার লিটার সয়াবিন তেল বরাদ্দ দেবে টিসিবি করোনা ও বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত শুক্র ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। টিসিবি জানায়, ঢাকায় ৪০টি, চট্টগ্রামে ১০টি, রংপুরে ৭টি, ময়মনসিংহে ৫টি, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, বগুড়া ও কুমিল্লায় ৫টি করে এবং ঝিনাইদহ ও মাদারীপুরে ৩টি করে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি হবে। অন্যান্য জেলায় ২টি করে ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থাকবে। এ ছাড়া টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাভুক্ত উপজেলাগুলোর জন্য ৫টি অতিরিক্ত এবং বন্যাকবলিত জেলা ও উপজেলায় (ময়মনসিংহ, রংপুর, বগুড়া ও মাদারীপুর) অতিরিক্ত ১৩টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি হবে।
×