ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসব কৌশল কাজে লাগিয়ে জঙ্গীবাদ নির্মূলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল হালে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গীবাদ ও জঙ্গীদের বিষয়ে মিলছে সুনির্দিষ্ট তথ্য

নিশ্চিহ্ন হবে জঙ্গীবাদ ॥ তিন কৌশলের ওপরই প্রাধান্য

প্রকাশিত: ২২:২৮, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০

নিশ্চিহ্ন হবে জঙ্গীবাদ ॥ তিন কৌশলের ওপরই প্রাধান্য

গাফফার খান চৌধুরী ॥ জঙ্গীবাদ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে নতুন কৌশল ঠিক করা হয়েছে। এজন্য মূলত তিন কৌশলের ওপরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে সাফল্য এসেছে। কৌশলের মধ্যে রয়েছে, জঙ্গীবাদ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ। সংগৃহীত তথ্য মোতাবেক সাঁড়াশি অভিযান। অভিযানে গ্রেফতার জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদ। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য মোতাবেক মামলার তদন্ত করা। আর তদন্তের ধারাবাহিকতায় আর্থিকসহ জঙ্গীবাদের সব ধরনের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করে দেয়া। মামলার সার্বিক তদন্ত শেষে প্রাপ্ত ফলাফল মোতাবেক পদক্ষেপ নেয়া। এই তিন কৌশলকে কাজে লাগিয়ে সফলতাও পেয়েছে আইনশ্ঙ্খৃলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দারা। জঙ্গীবাদ বিস্তাররোধে সচেতনতা সৃষ্টিও খানিকটা কাজে এসেছে। এসব কৌশলকেই পুঁজি করে জঙ্গীবাদ নির্মূলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে রোল মডেল। হালে এমন কৌশলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জঙ্গীবাদ ও জঙ্গীদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলবে। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হয়। জঙ্গীবাদ, জঙ্গী দল, জঙ্গীবাদ ও দলকে আর্থিক এবং আদর্শিকভাবে সহায়তাকারী রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বিশ্বের অন্যকোন দেশ ছাড়াও সারাদেশে জঙ্গীবাদ সংক্রান্ত মামলা দায়েরের সংখ্যা, মামলার বিপরীতে গ্রেফতার ও পলাতক থাকা জঙ্গীদের সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পৃথক পৃথক ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। ইতোপূর্বে গ্রেফতার জঙ্গীদের মধ্যে যারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জঙ্গীবাদ সম্পর্কে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে এবং দিচ্ছে তাদের একটি পৃথক বিশেষ প্রোফাইল তৈরি হচ্ছে। এছাড়া ডি রেডিক্যালাইজেশন অর্থাৎ জঙ্গীবাদ যাতে বিস্তার করতে না পারে বা কেউ যাতে জঙ্গীবাদের প্রতি আকৃষ্ট না হয়, তার জন্য আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। কারাগারের জঙ্গী সেলগুলোতে নজরদারি বাড়ানো জরুরী। এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কাজ করা র্যা ব, পুলিশের এন্টি-টেররিজম ইউনিট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সংস্থা তিনটি বলছে, ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গীরা হামলা করে দুই পুলিশ কর্মকর্তা, ১৭ বিদেশী ও তিন বাংলাদেশীকে জবাই করে ও গুলি চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ওই বছরই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতে জঙ্গী হামলার চেষ্টাকালে গোলাগুলিতে ও গ্রেনেড হামলায় দুই পুলিশ, এক নারী ও এক জঙ্গীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সিলেটে আতিয়া মহলে অভিযানের সময় জঙ্গীদের হামলায় র্যা বের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ মৃত্যুর ঘটনার পর সারা পৃথিবীতে তোলপাড় শুরু হয়। এর আগে রংপুরে জাপানী নাগরিক হোসি কুনিও ঢাকার গুলশানে ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজারকে গুলশানে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার পর পরই আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের নামে হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি প্রকাশিত হয়। র ্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ বলতে গেলে প্রায় শতভাগের কাছাকাছি সফল। হলি আর্টিজানের পর শুধু র্যাতবই জঙ্গীবাদ বিরোধী পাঁচ শতাধিক অভিযান চালিয়েছে। যার মধ্যে ১৭টিই ছিল জঙ্গী আস্তানা। অভিযানে প্রায় আড়াই হাজার জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। ধারাবাহিক অভিযানে এখনও জঙ্গী গ্রেফতার হচ্ছে। র্যা বের চালানো অভিযানকালে মারা গেছে ২৫ জঙ্গী। আত্মসমর্পণ করেছে সাত জঙ্গী। উদ্ধার হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৫ কেজি উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক, নানা ধরনের বহু অস্ত্র, আত্মঘাতী হামলা চালানোর নানা সরঞ্জামাসহ নানা আলামত এবং জঙ্গীবাদে অর্থায়নের জন্য মজুদ করা কয়েক কোটি টাকা, যা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়েছে। সম্প্রতি নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর, আল্লাহর দল, আনসার আল ইসলাম, পুরনো জেএমবি ও নব্য জেএমবির কিছু কিছু তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর বাইরে তেমন কোন জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা নেই। এক কর্মকর্তা বলছেন, কারাবন্দী জঙ্গীদের যেখানে রাখা হচ্ছে সেখানে আরও নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। কারণ অনেক জঙ্গী গ্রেফতার হওয়ার পর তারা কারাগারে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে। পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়ে আত্মগোপনে গিয়ে নতুন নতুন এ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করে। যেটি খুবই ভয়ানক একটি ব্যাপার। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি স্তরে ডি রেডিক্যালাইজেশন অর্থাৎ জঙ্গী যাতে গড়ে উঠতে না পারে বা জঙ্গীবাদের প্রতি যাতে মানুষের মোহ কমে যায় তার আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় যুগের পর যুগ জঙ্গীবাদ থেকে যেতে পারে। জঙ্গীবাদ নিয়ে কাজ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি পুলিশের এ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে বলেন, একের পর এক জঙ্গী হামলার পর বাংলাদেশে আইএসের তৎপরতা আছে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মনে করতে থাকে। তারা তাদের নাগরিকদের নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে উৎসাহিত করে। অনেক বিদেশী নাগরিক ওই সময় চলেও যায়। এমন পরিস্থিতিতে সারাদেশে শুরু হয় জঙ্গীবাদ বিরোধী সাঁড়াশি অভিযান। কমপক্ষে ৫০টি জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। শতাধিক জঙ্গী নিহত হয়। বর্তমানে জাপান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, উগান্ডাসহ বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যেসব দেশে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা আছে বা তৎপরতা আছে সেসব দেশ নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জঙ্গীবাদকে সহনীয় পর্যায়ে আনার অভিজ্ঞতা পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে এবং মৌখিকভাবে শেয়ার করছেন। কারণ সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। হলি আর্টিজানের পর বাংলাদেশ জঙ্গীবাদ নির্মূলে সফলতা দেখাতে না পারলে দেশ অনেক পিছিয়ে যেত। বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী দেশ হয়ত সুযোগটি কাজে লাগানোর চেষ্টা করত। বিশ্বের প্রায় সকল দেশ জঙ্গীবাদ নির্মূলে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশকে রোল মডেল মনে করে। হলি আর্টিজানের পর বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের ভয়াবহ উত্থানের ধারণা থেকে বিশ্ব সরে এসেছে। তারা জঙ্গীবাদ বিরোধী ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি তাদের চালানো অভিযানে ৩০ জনের মতো গ্রেফতার হয়েছে। এ সংক্রান্ত ২২টি মামলা তারা তদন্ত করছে। এসব মামলায় আরও ৩০ জনের নাম এসেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে জঙ্গীদের এখন আর আগের মতো সক্ষমতা নেই। তারা নিজেদের দলের সদস্যদের চাঙ্গা রাখতে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের জঙ্গী সংগঠনকে আকৃষ্ট করতে মাঝেমধ্যেই হামলা চালায়। আর হামলার পর তার সত্যতা প্রমাণ করতে আইএসের নামে দায় স্বীকার করে বিবৃতিও প্রকাশিত হয়। পুলিশের এ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোঃ কামরুল আহসান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছি। ভবিষ্যতে দেশে যাতে আর কোনদিন সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তারা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এটি তাদের কন্টিনিউয়াস প্রসেস। তিনি জানান, সারাদেশে কি পরিমাণ জঙ্গীবাদ বিষয়ে মামলা হয়েছে তার ফিরিস্তি সংগ্রহের কাজ চলছে। পাশাপাশি মামলার আসামি হিসেবে কি পরিমাণ জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে, কি পরিমাণ জঙ্গী গ্রেফতারের বাইরে রয়েছে এবং মামলার আসামির বাইরে কত জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে তার একটি পৃথক ডাটাবেজ তৈরি হচ্ছে। এছাড়া গ্রেফতারের পর কারাগার থেকে জামিন নেয়ার পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া জঙ্গীদেরও একটি বিশেষ পৃথক ডাটাবেজ তৈরির কাজ অব্যাহত আছে। তবে শতভাগ সুনির্দিষ্ট করে গ্রেফতারের বাইরে, গ্রেফতার হওয়া এবং পলাতক থাকা জঙ্গীদের পরিসংখ্যান বলাটা কঠিন। কারণ জঙ্গীবাদ নিয়ে র্যােব ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটও কাজ করে। আমরা জঙ্গীবাদ নিয়ে কাজ করা অপর দুটি সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান এবং পারস্পরিক যোগাযোগ রাখি। পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, ১৯৯৯ সাল থেকে চলতি বছরের হালনাগদ সারাদেশে জঙ্গী সংক্রান্ত এক হাজারের বেশি হামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয়েছে ৫ হাজারের বেশি জঙ্গী। যাদের মধ্যে অনেকেই জামিনের পর পলাতক রয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশই দায়ের হয়েছে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। কারণ তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে দেশে জঙ্গীবাদের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছিল। বিছিন্ন হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। দেশের পাঁচশটি স্থানে চালানো সেই হামলায় অন্তত ৫ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। হামলায় দু’জন নিহত হন। আহত হন দু’শতাধিক। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মোট ৯৮টি মারাত্মক বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয় পুলিশের তরফ থেকে। এরমধ্যে ১০টি মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। বাকি ১৪৯টি মামলায় চার্জশীট দেয়া হয়। এসব মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয়েছে একহাজারের বেশি জঙ্গী। আসামিদের মধ্যে ৩৩৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। আর ২৭ জনের মৃত্যুদন্ড হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশের একটি বিশেষ শাখা সূত্রে জানা গেছে, বহু বছর ধরেই জঙ্গীবাদ ও এ সংক্রান্ত ডাটাবেজ তৈরির কাজ অব্যাহত আছে। এসব ডাটাবেজে যুক্ত করা হয়েছে ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরে জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার ৩১ বাংলাদেশীর মধ্যে ১৯ জনকে। এদের সবাইকে সিঙ্গাপুর সরকার কালো তালিকাভুক্ত করে দেশে পাঠিয়েছে। ডাটাবেজে বাংলাদেশের প্রায় ৪০টি ইসলামী সংগঠনের নামও স্থান পেয়েছে। এসব সংগঠন ধর্র্মীয় উগ্র মতবাদ ও দেশে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পক্ষে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপাটন করতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আবারও জঙ্গীদের বিষয়ে কৌশলী অভিযান শুরু হবে। যারা জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে এবং জেলে আছে তাদের বিষয়ে নজরদারি অব্যাহত আছে। জামিনে থাকা জঙ্গীদের নতুন করে শনাক্ত করার কাজ চলছে। কারণ জঙ্গীরা সাধারণত জামিনের পর আবার জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। তার অন্যতম কারণ, কোন জঙ্গী দল থেকে বেরিয়ে গেলে, তাকে দলের সদস্যরাই হত্যা করে ফেলে। যার বহু নজির আছে। যার মধ্যে ২০১০ সালে উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে জেএমবি সদস্য রাশেদকে কুপিয়ে হত্যা করে জেএমবি সদস্যরা। গাইবান্ধার এক জেএমবি সদস্য বিয়ে করে বহু বছর কেরানীগঞ্জে আত্মগোপনে ছিল। ঈদের সময় বাড়ি গেলে তাকে জঙ্গীরা হত্যা করে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, তালিকাভুক্ত জঙ্গীদের সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পেতে পাসপোর্ট অফিসের সার্ভারের সঙ্গে লিংক করা হয়েছে। কারণ সন্ত্রাসী ও জঙ্গীরা নাম-ঠিকানা পরিবর্তন করে ভুয়া নামে পাসপোর্ট তৈরি করে। পরবর্তীতে তারা এসব পাসপোর্টের মাধ্যমে বৈধপথে দেশ ত্যাগ করে। তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিদেশে পলাতক থাকা বাংলাদেশী জঙ্গীরা বেনামে আত্মগোপনে থাকে। অনেকের কাছেই বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে। এদের প্রায় সবাই মোস্টওয়ান্টেড। পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদের বক্তব্য মোতাবেক, তাদের হাতে গ্রেফতার জঙ্গীদের মধ্যে অন্তত তিন শতাধিক জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। দেশ ও জাতির স্বার্থেই আইনজীবীদের জঙ্গীদের পক্ষে আইনী লড়াই করা উচিত নয়। এজন্য তিনি আইনজীবীদের অনুরোধ করেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সরকারী নথিপত্র অনুযায়ী ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকেই ছাত্র শিবির নেতাকর্মী পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ১২৭ এবং নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ১৬ জঙ্গী জামিনে ছাড়া পেয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। আর কারাগারটিতে বন্দী থাকা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ৩২ এবং ছাত্র শিবিরের ১৯ জন জামিনে ছাড়া পেতে নানাভাবে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ছাত্র শিবিরের পরিচয়ে ছাড়া পাওয়া ১২৭ জনের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সদস্য। অদ্যাবধি তাদের সম্পর্কে আর কোন তথ্য মেলেনি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরের চার এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রথম সারির পাঁচ নেতা বর্তমানে মালয়েশিয়ায়। বাংলাদেশের পাশাপাশি মালয়েশিয়া থেকেও তারা আনসার আল ইসলামের নামে প্রচার ও কার্যক্রম চালাচ্ছে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হয়ে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে অপতৎপরতা চালানোর দায়ে কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছে। তারা জঙ্গী সংগঠনটির আধ্যাত্মিক নেতা মুফতি জসীমুদ্দিন রাহমানিকে কারামুক্ত করতে দেশে অর্থ পাঠাত বলে স্বীকার করেছে। সিআইডি সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম থেকে একটি অত্যাধুনিক স্নাইপার রাইফেল উদ্ধার হয়েছে। যেটি বিশ্বের একটি বৃহৎ শক্তির দেশের প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিশেষ বাহিনীর সদস্যরাই শুধু ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়া পৃথিবীর কোন দেশেই ওই রাইফেলের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়নি। রাইফেল উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার দু’জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। তারা ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এমন একটি বাহিনীর অস্ত্র কিভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সে বিষয়ে বিস্তর অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনে থাকা জঙ্গীদের অধিকাংশই ছাত্র শিবির থেকে আসা। ওই অস্ত্র আসার সঙ্গে জামায়াত-শিবির বা রাষ্ট্রবিরোধী কোন যোগসূত্র আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×