ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটবল ও ভাল ফল

প্রকাশিত: ২২:২২, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

ফুটবল ও ভাল ফল

শুভকে নিয়ে বেশ চিন্তা। ঘরে থাকতে চায় না। বাসার পাশের মাঠটাতে ওকে দেখা যায়। ফুটবল খেলায় পাগল। লেখাপড়া বাদ দিয়ে খেলা পছন্দ করেন না মা। লেখাপড়ার জন্য মায়ের কড়া শাসন। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে শুভ। সামনে বৃত্তি পরীক্ষা। মনোযোগ নেই। বাবা ফয়সাল হাসান ভাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ইপু, তনু ও শুভ। পরিবারে শুভ বড়। মা-বাবার বেশি চিন্তা ওকে ঘিরে। বোন ইপু বলল, ‘ভাইয়া তোমার না সামনে পরীক্ষা! আপাতত খেলাধুলাটা বাদ দাও না।’ কথাটা ঠিকমতো বলা হয়নি ওমনিতেই গালে এক চড় বসিয়ে দিল শুভ। কাঁদতে কাঁদতে ইপু যায় মায়ের কাছে। রান্না ও সংসারের সমস্ত দেখাশোনা করতে করতে হিমশিম খেয়ে যান তিনি। শুভর জ্বালাতন মায়ের ভাললাগে না! আম্মা ওকে মারতে পারেন না। আত্মরক্ষার কৌশল জানে শুভ। যখন বেত দিয়ে মারার জন্য তাড়া করেন তখনি সে পালিয়ে যায়। সাপ্তাহিক ছুটির সেদিনে শুভ বাসায় ছিল না। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। এমনটা প্রায়ই হয়। বৃষ্টিতে কাদার মধ্যে মাঠে ফুটবল খেলতেও শুভর ভাললাগে। কিন্তু আম্মার এ নিয়ে উৎকণ্ঠা। আম্মা ব্যঙ্গ করে বললেন ক্রীড়ামোদী ছেলেকে দিয়ে কিছুই হবে না? মূর্খ থেকে যাবে সারা জীবন। আব্বার সোজা উত্তর ‘না তা হবে না! রক্তের মধ্যে বইছে শিক্ষা। দেখ ও পরীক্ষায় খারাপ করবে না!’ আসবে ওর ভাল ফলাফল! বাসায় ক্রীড়াবিষয়ক ম্যাগাজিনও রাখা হয়। ফুটবলপাগল শুভ টিভি ও ইউটিউবে বিশে^র সেরা ক্লাবগুলোর খেলা দেখে। বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবের খেলা ওর ভাললাগে। ফিলিপে কৌতিনহো, লুইস ফিগো, ক্রিস্টিয়ানো রোলান্ডো, মেসি ও নেইমার শুভর প্রিয় খেলোয়াড়। এদের খেলার কৌশলগুলো সে অনুশীলন করে। বাসার পাশে কলাবাগান মাঠে সহপাঠী তাপস, মিঠু ও খোকারাও যোগ দেয়। দুপুরে খেয়ে আব্বা ঘরে পত্রিকা পড়ছিলেন শুয়ে শুয়ে। বিভিন্ন দেশের মুদ্রা নিয়ে বসেছিল বোন দুজন। শুভ ওর বল খুঁজে পাচ্ছে না। মেজাজ বিগড়ে যায় ওর। চেচিয়ে ওঠে সে। - দুষ্টামির আর জায়গা পাও না, আমার বল কই? ইপুর উত্তর - তোমার বল কোথায়, আমরা জানি কি করে? এ নিয়ে শুভর চেচামেচি। নানান জিজ্ঞাসা। বলের সন্ধান না পেয়ে ওদের বেশ ক’টি মুদ্রা কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয় সে। আব্বা হৈচৈ শুনে এগিয়ে এলেন। পিতার রুদ্রমূর্তি দেখতে পেয়ে ঘর থেকে সরে পড়ে শুভ। আম্মাও আসেন ড্রয়িং রুমে। -পড়াশোনার ক্ষতি হবে তাই বলটা লুকিয়ে রেখেছিলাম। পড়াশোনা নাই খালি ফুটবল আর ফুটবল! কোথায় দুষ্টটা? টিচার তো আর পড়ালেখা খাইয়ে দেবে না? বাসায় তিনজনের জন্য একজন গৃহশিক্ষক রয়েছে। সপ্তাহে মাত্র তিন দিন দেড় ঘণ্টা করে পড়ান। মাসে বারোদিন আসার কথা থাকলেও শিক্ষক তা করেন না। কিন্তু দশ হাজার টাকা পুরোই নেন। মা ভাবলেন গৃহশিক্ষকের ওপর নির্ভর করলে শুভর বৃত্তি পরীক্ষায় ফলাফল ভাল হবে না। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর টানা চার ঘণ্টা বিরতিহীন পড়াশোনা। রাতে বিষয় অনুযায়ী আম্মা রুটিন ঠিক করে দিলেন শুভকে। ওর পড়াশোনার ব্যাপারে বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক পাস মায়ের নিয়মিত তদারকি। শুভর আচরণে ও চলাফেরার একটা বিরাট পরিবর্তন দেখা গেল। দুষ্টুমি নেই। ফুটবল খেলাও বন্ধ। ওর প্রতি মা-বাবার আদর বাড়ে। প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার পর রোজ বিকেলে বল নিয়ে মাঠে আবার শুভর ছোটাছুটি। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। আব্বা আম্মা ইপু ও তনু বাসার ছাদে। সবাই দেখছে শুভদের কাদাসিক্ত মাঠের ফুটবল খেলা। আব্বা চায়ের পেয়ালায় মুখ রেখে বললেন- ছেলে তো ভালই খেলে! দেখ রেহানা, শুভকে কেউ আটকাতে পারছে না। ‘ওয়েলডান মাই সান। রিয়েলি ইউ আর লাইক ম্যারাডোনা।’ -বৃত্তির ফল বের হবে কালই। তখন দেখব ফয়সাল সাহেব, আপনার ফুটবলের হিরো ম্যারাডোনার আসল চেহারা! মা চায়ের কাপ ও গ্লাসগুলো নিয়ে নিচে নামার জন্য সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যান। ফয়সাল সাহেব ছেলের ফলাফল জানার জন্য তার টেলিটক সিমে নিবন্ধন করে রেখেছেন আগেই। দুপুরে অফিসে বসে কাজ করছিলেন। ধানম-িতে নামকরা আবাসন কোম্পানির স্থাপত্যকলার শৈল্পিক আসবাবপত্রে শোভিত বিশাল অফিস। অফিস থেকে পাওয়া আইফোনের সেটটি মিউট করা ছিল তার। গুলশান পঞ্চম প্রকল্পের সিভিল ড্রয়িং থেকে চোখ ফেরান তিনি। ফোনসেটে চোখ রাখতে গিয়ে লক্ষ্য করেন দুটি বার্তা। সর্বশেষ বার্তাটি এসেছে রেজাল্ট ২০১৯ থেকে। শুভ রহমান, পিএসসি, রোল ৪৩৩৭৯৩, বোর্ড ঢাকা, পাসের বছর ২০১৯, জিপিএ ৫। পিতা বুঝে গেলেন ছেলের উজ্জ্বল সাফল্যের খবর। মন তার আনন্দে নেচে ওঠে। ভাবলেন ম্যারাডোনা তাহলে সত্যি পরীক্ষার মাঠও মাতালো! এটা ভাবতে ভাবতে তিনি বস চেয়ারম্যান শফি সাহেবকে খবরটি দিতে তার রুমে ঢুকেন। শুভর কথা শুনে বসের চোখেও খুশির ঝিলিক! বললেন - বাসায় ভাবি সাহেবাকে জানিয়েছেন খুশির খবরটা? - ফোন ব্যস্ত পাচ্ছি স্যার। - তাহলে বাসায় চলে যান এখনই! আমি দেখছি এখানটা। গাড়িচালক আজাদকে বললেন ‘বাসায় চলো।’ ফয়সাল সাহেব ভাবলেন ছেলে খেলা ভাল এবং পড়াশোনায়ও সেরা। গাড়িতে আসন নিতেই বাসা থেকে শুভর মায়ের ফোন! - কি রেহানা! বলছিলাম না রক্তেই বইছে শিক্ষা। ম্যারাডোনা! ভাল ফলাফল! গোল্ডেন জিপিএ! হোয়াটসএ্যাপে ভিউিওকলে ছেলেকে বললেন, তোমার জন্য ভাল সারপ্রাইজ আছে বাবা! লেখাপড়ার সঙ্গে তুমি রোজ খেলাধুলাও করবে। তোমার ফুটবল আসলেই গুড বল! অলঙ্করণ : প্রসূন হালদার
×