ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার এ্যাডওয়ার্ড পার্ক প্রায় ছ’মাস ধরে বন্ধ

প্রকাশিত: ২২:১৭, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

বগুড়ার এ্যাডওয়ার্ড পার্ক প্রায় ছ’মাস ধরে বন্ধ

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার প্রাচীন এ্যাডওয়ার্ড পার্কের তিনটি ফটক গত প্রায় দেড়শ’ বছরেও একদিনের জন্য বন্ধ হয়নি। এই প্রথম বিশ্বের প্যানডেমিক করোনাকালে প্রায় ছয় মাস ধরে বন্ধ। নগরীর গোহাইল রোডের ধারে ৯ দশমিক ৬৬ একর (২৯ বিঘা) ভূমির ওপর ব্রিটিশ সম্রাট সপ্তম এ্যাডওয়ার্ডের শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত। তারই নামনানুসারে পার্কের নামকরণ হয়। গত শতকের ষাটের দশকে এটি পরিচালনার দায়িত্ব পায় পৌরসভা। চলতি বছর করোনাকালে ২২ মার্চ পার্কটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে বন্ধ। এদিকে পার্ক বন্ধ থাকায় শহরের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়াম বন্ধ হয়েছে। বিশেষে করে ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীরা এখন আর নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পার্কে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন না। বিনোদন প্রিয় মানুষ পার্কে যেতে পারছে না। শিশুরা পার্কে গিয়ে ড্রাইভে যে বিনোদন পেত তাও রুদ্ধ। একদার এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পার্ক দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসত। ১৮৭৬ সালে পার্কের ভিতরে স্থাপিত হয় উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি। তারপর ঘূর্ণায়মান নাট্য মঞ্চ। পরে মঞ্চের সঙ্গে সিনেমা হল সংযুক্ত করা হয়। নাটক মঞ্চস্থের দিন সিনেমা বন্ধ থাকত। পরে সিনেমা হল সরিয়ে নিয়ে দেড় হাজার আসনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তন স্থাপিত হয়। যা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ টিটুর নামে নামকরণে হয় শহীদ টিটু মিলনায়তন। পার্কে কৃত্রিম পাহাড়, আনন্দ সরোবর (সান বাঁধানো), ফোয়ারা, শিশুদের নানা ধরনের ড্রাইভ, কৃত্রিম ঝর্না, আ¤্রকুঞ্জ, প্রকৃতির তোরণ, ফুলের বাগান, পাম ট্রি, বনায়নসহ পার্কটি সাজানো গোছানো। সম্রাট এ্যাডওয়ার্ডের পাথরের স্ট্যাচু স্থাপিত হয়। পুকুরের ধারে বসবার জায়গা, উন্মুক্ত মঞ্চ, কনস্ট্রাকশনের ছাতা অভ্যন্তরীণ পাকা রাস্তাসহ পূর্ণাঙ্গ একটি পার্ক। সকালে ও সন্ধ্যা রাতে পার্কে হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়ামের জন্য হাজারো নারী পুরুষের আগমন ঘটে। এছাড়াও নিত্যদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দর্শনার্থী ও সর্বস্তরের নারী পুরুষের আগমন ঘটে। অনেক অভিভাবক শিশুদের বিনোদনের জন্য নানা ধরনের ড্রাইভে নিয়ে যান। যাদের ডায়াবেটিস আছে, যাদের হার্টে রিং পরানো ও ওপেন জার্ট সার্জারি করা আছে তারা সকালে ও সন্ধ্যায় নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি করেন এই পার্কে। প্রায় ছয় মাস ধরে পার্ক বন্ধ থাকায় তাদের হাঁটাহাঁটি বন্ধ হয়ে আছে। ডায়াবেটিক সমিতির হাল নাগাদ তথ্য : বগুড়া জেলায় ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা লক্ষাধিক। যাদের বড় অংশ বাস করেন এই শহরে। ডায়াবেটিসের নারী পুরুষ প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে ও সন্ধ্যায় (কখনও রাত দশটা পর্যন্ত) হাঁটেন এই পার্কে। ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগী ছাড়াও স্বাস্থ্য সচেতন সকল বয়সী মানুষের পার্কে হাঁটাহাঁটি রুটিন। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিরা সকালে উঠেই পার্কে আসেন সমবয়সীদের সঙ্গে সাক্ষাতও হয় হাঁটাহাঁটি হয়। স্বাস্থ্য ও মন প্রফুল্ল থাকে। পার্কের ভিতরে ইয়োগা সেন্টার স্থাপিত হয়েছে। সুস্থ জীবন গড়ে তোলার সচেতনতায় কয়েকটি সংগঠন এই ইয়োগার সঙ্গে যুক্ত। শরীর চর্চার একটি সংগঠন পার্কের সঙ্গে যুক্ত। তাদের একজন জানালেন সংগঠনের সদস্যের প্রায় ৮০ শতাংশই ডায়াবেটিস রোগী। পার্ক বন্ধ থাকায় এসব মানুষের রুটকি করে হাঁটাহাঁটি বন্ধ হয়েছে। তাদের একটি অংশ বাড়ির সামনে খোলা স্থানে ও কোন রাস্তা ধরে বিচ্ছিন্নভাবে হাঁটাহাঁটি করেন। তাদের কথা : দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্ক খুলে দেয়া হচ্ছে। ব্যত্যয় শুধু বগুড়ায়। এ বিষয়ে পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান জানান, পার্কে খুলে দেয়ার বিষয়ে এখনও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কোন চিঠি পাননি। তবে তিনি মনে করেন পার্ক এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে উন্মুক্ত করা উচিত। একই মন্তব্য দিলেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল। স্বাস্থ্য সচেতন, ডায়াবেটিস ও হার্টের রোগীদের কথা : স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পার্কটি সাধারণের জন্য খুলে দেয়া দরকার।
×