ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাফর ওয়াজেদ

বিএনপির সন্ত্রাসের শ্বেতপত্র জরুরী

প্রকাশিত: ২২:১১, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

বিএনপির সন্ত্রাসের শ্বেতপত্র জরুরী

বছর কয়েক আগের কথা। কানাডার আদালত রায় দিয়েছিল বলেই বাংলাদেশবাসী সেই প্রথম জেনেছিল দলটি সন্ত্রাসী। বিশ্ববাসী হয়ত প্রথম জেনেছে। তবে জানাটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরও আগেই। তারা বিএনপিকে জঙ্গী দলগুলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল এরও বছর তিন আগেই। বিএনপি যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে তেমন আভাসও দিয়েছিল তারা। কিন্তু বিএনপির তাতে যায় আসেনি কিছুই। পঙ্কে ফুটে ওঠা পদ্মফুলও হতে পারেনি দলটি। অথচ দিন দিন পঙ্কেই নিমজ্জিত হয়েছে। কানাডার আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে এমন সংশয়ও প্রকাশ করেছে যে, দলটি আগামীতে আরও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে পারে। অর্থাৎ তার স্বভাব, আদর্শ ও কর্মকান্ড এমনভাবে গ্রথিত যে, সন্ত্রাস ছাড়া স্বাভাবিক কোন তৎপরতা চালানো তার পক্ষে দুরূহ। এই রায়ে দেশের রাজনীতি বদলাবে না বলে বিএনপির মহাসচিব যে কথা বলেছিলেন, তাতে তো স্পষ্ট যে, তারা সন্ত্রাস থেকে এক পা-ও নড়বে না। তার এ কথা ভেবেচিন্তেই বলা অবশ্য। অথচ এরাই পাশ্চাত্য রাষ্ট্রদূতদের কাছে দেশের রাজনীতি নিয়ে নালিশ জানাতে এক পায়ে খাড়া থাকে প্রায়শই। দেশের সব বিষয়ে বিদেশীদের টেনে আনার মধ্য দিয়ে তারা সার্বভৌম দেশের প্রতি অবজ্ঞাই প্রদর্শন শুধু নয়, আত্মস্বার্থে দেশের স্বার্থও বিসর্জন দিয়ে এসেছে। তাতে দেশের রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হচ্ছে না যদিও। কিন্তু বিএনপি এখনও তার নতজানু নীতি ও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশীদের কাছে নালিশ জানানোতে বেশ পটুত্বের পরিচয় দিয়ে আসছে। বিদেশীদের সঙ্গে যতবার সাক্ষাত করে ততবারই ফেটে পড়ে উল্লাসে। উল্লসিত হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রভুর মন জোগানোর মধ্যে এক ধরনের সুখানুভূতি কাজ করতেই পারে। সে কাজটার মধ্যেও তারা প্রাণ পায়। বেশিদিন আগের কথা নয়। তাদের নিত্যশুভার্থী শান্তিতে নোবেল জয়ী যেভাবে বিশ্বব্যাংককে প্রভাবিত করে পদ্মা সেতুতে কথিত দুর্নীতির কেচ্ছাকাহিনী ফেঁদে অর্থ বরাদ্দে বাধাদান শুধু নয়, ফলস্বরূপ কানাডার আদালতেই মামলা গড়াল। শান্তিবাদী তার ঘনিষ্ঠ স্বজন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারিকে ব্যবহার করেছিলেন বাংলাদেশ ও তার সরকারের বিরুদ্ধে। আর বিএনপি তার শরিক জামায়াতকে নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কত কি প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে পদত্যাগ, সচিবকে জেলে যেতে হয়েছিল সেদিন মিথ্যাচারের দাপটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এই মিথ্যাচারে জড়িয়েছিল। আর দেশের ডান-বাম সব পন্থী সুশীল নামধারীরা সরকারকে চোর, দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করার জন্য গলাবাজি চালিয়েছিল। সেই কানাডার আদালতই যখন রায় দিল যে, দুর্নীতির অভিযোগ অসত্য। চুপসে গিয়েছে বিশ্বব্যাংকের অবয়ব। হিলারির প্রতিক্রিয়া তখন জানা যায়নি। আর শান্তিবাদীর এসবে কোন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে জানা নেই। তবে সবচেয়ে হতাশ হয়েছে বিএনপি ও তার নেত্রী। দুর্নীতির মাতা-পুত্র পরিচালিত দলটি স্বস্তি পেয়েছিল যখন মামলাটি দায়ের হয়। সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখা তখনই শুরু। আর তা করতে গিয়ে সহিংসতা, নাশকতা, নৃশংসতার কোন কিছুই বাদ রাখেনি। তবে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালানোর যত ক্ষেত্রই তৈরি করা হয়, সেসব ক্রমান্বয়ে ধসে পড়ে, ভেঙ্গে চুরমার হয়। কানাডার যে ফেডারেল আদালত পদ্মা সেতুতে দুর্নীতিকে বায়বীয় বলে ঘোষণা দিয়ে মামলা খারিজ করে দিয়েছে, সেই একই আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে প্রমাণ করেছে ‘শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখা যায় না।’ তাই আদালত স্পষ্ট করেই বলেছে, বিএনপি সন্ত্রাসী কাজে লিপ্ত ছিল, লিপ্ত আছে বা লিপ্ত হবে। এটি বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ আছে। কানাডার আইনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের যে সংজ্ঞা দেয়া আছে, তার আলোকে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই আদালত এই উপসংহারে পৌঁছেছে। আদালত বিবেচনায় নেয়নি যে, ‘বিএনপি সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয় না, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সন্ত্রাস বা সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।’ কানাডার আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে সঠিক তথ্যই উপস্থাপন করেছে। তবে তারা ২০১৩ থেকে ২০১৫ সময়ের বিএনপির সন্ত্রাসকেই সামনে এনেছে। এর আগে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় বসে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি লুট, অগ্নিসংযোগ, গণধর্ষণ, হত্যাই শুধু করেনি, তাদের অনেককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল। আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, এই অভিযোগে সাধারণ নিরীহ মানুষদের ওপরও অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছিল। আর খোদ আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী নির্যাতনে পঙ্গুত্ববরণ করেছে, জেলে গিয়েছে। ২০০৭ সালে ক্ষমতা ছাড়ার প্রাক মুহূর্তে সহিংসতার অন্যরূপ তারা প্রদর্শন করেছিল। জামায়াত নামক বিশ্বস্বীকৃত সন্ত্রাসী সংগঠনকে বগলদাবা করে তারা হিংস্ররূপে আবির্ভূত হয়েছিল। গণরোষ থেকে নিষ্কৃতি পেতে সেদিন তথা এক-এগারোতে সেনা সমর্থিত সরকার গঠন হতে প্ররোচিত করেছিল। সেসব দেশবাসীর অজানা নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা বিচারক সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল। সেই কমিটির প্রতিবেদন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি। এমনকি সংসদে উপস্থাপিতও হয়নি। সরকার সহায়তা না করায় সংক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা মামলাও করতে পারেনি। সেসব নারকীয় ঘটনা কেন প্রকাশ্যে এলো না, তার মাজেজা বোঝা দায়। এমনকি ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত সময়ে নিরীহ জীবন্ত মানুষকে পেট্রোলবোমা মেরে হত্যা ঘটনার মামলাগুলোর ২০২০ সালে এসেও গতি শ্লথ। সরকারী দলের নেতারা বলেছেন বারবার, এসবের বিচার করা হবে। কিন্তু সরকারী দল থেকে এটাও বলা হয়েছে, গণআদালতে বিচার হবে। বিএনপি-জামায়াত ২০১৫ সালে খালেদার নেতৃত্বে সন্ত্রাস, নাশকতা, নৃশংসতা এবং বর্বরতা চালিয়েছিল। তার ওপর সরকার কোন শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি। দেশ ও জাতির স্বার্থে যা করা দরকার। অবশ্য সরকারী দলের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে পুস্তিকা বের করা হয়েছিল। যার প্রচার সীমিত পরিসরেই ছিল। খালেদার সরকার পতন ঘটানোর হরতাল-অবরোধের আন্দোলন ছিল একাত্তরের পাকিস্তানী হানাদারদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সাধারণ মানুষ হত্যা। সেই হত্যাযজ্ঞকালে পেট্রোলবোমায় দেড় শ’ মানুষ নিহত, ৪শ’ দগ্ধ ও দেড় সহস্রাধিক আহত হয়েছিল। পুলিশও হতাহতের তালিকায় ছিল। নাশকতার শিকার হয়েছিল ২ হাজার ১০০ যানবাহন। সড়ক পরিবহনে ক্ষতি হয়েছিল একত্রিশ হাজার কোটি টাকা। রেলপথ ও ট্রেনে নাশকতার ঘটনা ঘটেছিল ৮০টির মতো। দিনে দুই হাজার দুই শ’ সাতাত্তর কোটি ছিয়াশি লাখ টাকা হিসেবে নব্বই দিনে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। শিক্ষা ও অফিসপাড়া বেগম জিয়ার নাশকতার শিকার হয়েছিল। ২০১৫ সালের প্রথম আড়াই মাস বন্ধ ছিল অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঊনচল্লিশ দিনের এসএসসি পরীক্ষা হয়েছে সাতান্ন দিনে। তাদের অগ্নিসংযোগে তেইশটি ভূমি অফিসসহ পুড়েছে কমপক্ষে পঞ্চাশটি সরকারী প্রতিষ্ঠান। বার্ন ইউনিটে দগ্ধদের দেখে বিদেশী কূটনীতিকরাও চোখের জল চেপে রাখতে পারেননি। কিন্তু খালেদা তাদের দেখতেও যায়নি। বরং উচ্চকণ্ঠে বলে বেরিয়েছেন, পুলিশই পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে। যদি তাই হবে, তাহলে পুলিশ কেন পুলিশকে মারতে যাবে এমন নিষ্ঠুরভাবে, সে প্রশ্নের কোন জবাব নেই খালেদার। জনবিচ্ছিন্নতা এমনই অবস্থা তৈরি করেছে যে, বিএনপি-জামায়াত আর মাঠে নামতে পারছে না গণরোষের ভয়ে। জামায়াতের জঙ্গীবাদী রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতাদানে এবং হেফাজতকে দেশ ধ্বংসে উস্কে দিয়ে জ্বালাও-পোড়াওসহ ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে অবতীর্ণ হয়ে বিএনপি তার স্বরূপ সবসময়ই উন্মোচিত রেখেছে। সেই স্বরূপ জেনে গিয়েছিল কানাডার আদালতও। নিজের যুক্তিতে আস্থা থাকলে, নিজের নৈতিক অবস্থানে ভরসা থাকলে, বিএনপি নেত্রী ও তার পারিষদরা কানাডার আদালতের রায়ে অমন বিচলিত হতো না। সমালোচনাকে তারা ভীষণ ভয় পায় বলেই জনগণের সামনে এসে দাঁড়াতে পারে না। নানা অপরাধে দলের নেতাকর্মীরা এমনভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে যে, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে এদের আর দেখা মেলে না। এদেশের মানুষের জানার পরিধির মধ্যে রয়েছে যে, বিএনপির জন্ম স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। অস্ত্রের মুখে জোরজবরদস্তিতে অনেক লাশ মাড়িয়ে ক্ষমতায় আসীন হওয়া সামরিক জান্তা শাসকের হাত ধরে সেনা ছাউনিতে জন্ম নিয়েছে বিএনপি। শুরুতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত সব সুফল নস্যাতে লিপ্ত হয়। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নানা কসরতের মাধ্যমে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিল। আর ঘোষণা দিয়ে, ‘রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করে তোলার’ কাজটি সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে কার্যকর করা হয়েছিল। ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ বলে আর্থিক প্রলোভন দিয়ে বহু উচ্ছন্নে যাওয়া ব্যক্তিকে জড়ো করা হয়েছিল। সর্বাগ্রে ঠাঁই দেয়া হয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রদের অর্থ ও অস্ত্রে মোহগ্রস্ত করে ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলা হয়। যারা সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তান্ডব চালিয়েছিল। সন্ত্রাসকে মজ্জাগত করে ছাত্রদলকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যে, সন্ত্রাসই তাদের মুক্তির পথ বলে দীক্ষা দেয়া হয়। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আহমদ শরীফ মন্তব্য করেছিলেন সেকালে যে, ‘বিএনপি আওয়ামী লীগের ‘বাঙালী’ জাতীয়তার অভিসন্ধিমূলক প্রতিবাদে ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তা বলে প্রচার করে এবং রাজাকার ও ইসলামপন্থীদের নিয়ে সেনানি শাসক জিয়াউর রহমান সেক্যুলার রাষ্ট্রকে ইসলামী ও মুসলিম আবরণে ও আভরণে সজ্জিত করে বাঙালী সত্তার ও মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা করে বিজয়ের উল্লাস অনুভব করেন।’ সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে বিকশিত হওয়া দলটির প্রতিষ্ঠাতা ক্ষমতায় থাকাকালে আঠারোটির মতো সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা সামাল দিয়েছে। ক্ষমাহীন এবং নির্দয়ভাবে অভ্যুত্থান দমন শুধু নয়, হাজারো সেনা কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তথাকথিত নামমাত্র বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। নিজের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ পর্যন্ত সংশোধন করে। সেসব বিশদ কাহিনী। বিএনপির জন্মলগ্ন থেকে অদ্যাবধি সব কার্যক্রম পর্যালোচনায় স্পষ্ট হয়, দলটি সন্ত্রাসকেই প্রাধান্য দিয়ে ক্ষমতার দন্ডমুন্ড হয়ে মানুষকে শাসন-শোষণে রাখতে বদ্ধপরিকর। শুধু কানাডার আদালত নয়, স্মরণ করতে পারি ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের অধিবেশনে উপস্থাপিত প্রস্তাবগুলো। ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি গৃহীত প্রস্তাবে ইইউভুক্ত দেশগুলো জামায়াত, হেফাজত ও বিএনপি সম্পর্কে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধের প্রস্তাব করেছিল। একই সঙ্গে বিএনপিকে জামায়াত ও হেফাজতের মতো জঙ্গী সংগঠনগুলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দেয়া হয়েছিল। এমনও বলা হয় যে, যেসব দল সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে পড়েছে, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত। আরও স্মরণ করা যায়, ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত লন্ডনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘জেন’স টেররিজম এ্যান্ড ইমারজেন্সি সেন্টার (জেটিআইসি), ‘বিশ্ব সন্ত্রাস ও জঙ্গী হামলার তালিকা ২০১৩’-এর শীর্ষক প্রতিবেদন। যাতে বিশ্বের দশটি শীর্ষ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় তিন নম্বরে ইসলামী ছাত্র শিবিরের নাম। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দিয়ে প্রতিবেদনে এই সংগঠনটিও নিষিদ্ধের সুপারিশ করা হয়েছিল। বাংলায় প্রবাদ রয়েছে, ‘রতনে রতন চেনে!’ তাই সন্ত্রাসী চিনে সন্ত্রাসীকেই। জামায়াত, শিবির, হেফাজত নামক বিশ্ব স্বীকৃত সন্ত্রাসী দলগুলোর নেতৃত্বে রয়েছে বিএনপি। দলটি যদি গণতান্ত্রিক আচরণ সংবলিত কিংবা হতো ধোয়া তুলসীপাতা, তবে আর যাই হোক, সন্ত্রাসী দলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়াত না। জামায়াত-শিবিরকে পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দিত না বিএনপি। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিস্তারে বিএনপি চার দশক ধরেই কাজ করে আসছে। তাদের নৃশংসতার আরেক উদাহরণ ২১ আগস্ট ও ১৭ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য নানা অপতৎপরতা চালানোর নজির তারা রেখেছে। বাংলাদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের যেসব কর্মকান্ড চলে এসেছে, তাতে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিএনপি সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করে আসছে। সরকারী দলের ঔদাসীন্যের কারণেই হোক বা অন্য কোন কারণে, বিএনপিকে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য এখনও কোন সাজা ভোগ করতে হয়নি। দেশ ও জাতির স্বার্থে আজ বড়ই প্রয়োজন বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ওপর শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। লেখক : মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক
×