স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহামারীর অভিঘাতে নাট্যমঞ্চে নেমে এসেছিল নীরবতা। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকাসহ সারা দেশের নাট্যমঞ্চে বিরাজ করেছে স্থবিরতা। হতাশা পেরিয়ে আবার জেগেছে আশার আলো। অচলায়তন পেরিয়ে সচল হচ্ছে মঞ্চনাটকের পথচলা। আর নিউ নরমাল লাইফে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই শুরু হয়েছে নাট্য প্রদর্শনী। সেই স্রোতধারায় শুক্রবার ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হলো দুটি নাটকের প্রদর্শনী। বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো জাগরণী থিয়েটারের নাটক ‘রাজার চিঠি’। অন্যদিকে কাঁটাবনের নিজস্ব মহড়া কক্ষে মহলা লগন শীর্ষক মাসব্যাপী উঠান নাটক মেলায় মঞ্চস্থ হয়েছে প্রাচ্যনাটের নাটক ‘দ্য ডাম্ব ওয়েটার’। উভয় প্রদর্শনীতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নাটক উপভোগ করেছে দর্শক।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কাহিনী নিয়ে নির্মিত রাজার চিঠি নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন দেবাশীষ ঘোষ। এই প্রদর্শনী প্রসঙ্গে নির্দেশক জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে আমরা অপেক্ষা করেছি। কেটেছে পাঁচ মাসের অলস সময়। নাট্যচর্চা থেমে যাওয়ায় ভেতরে যন্ত্রণা কাজ করেছে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছি। সরকারী স্বাস্থ্যবিধি মেনে যদি সকল কর্মকান্ড চলে তাহলে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম কেন বন্ধ থাকবে? নিউ নরমাল লাইফে করোনাকে সঙ্গী করেই আমাদের বাঁচতে হবে। সেক্ষেত্রে সাংস্কৃতিকচর্চার ক্ষেত্রে সচেতনতা মেনেই আমরা কাজ করবো। ধীরে ধীরে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই বাস্তবতায় এ নাটকের প্রদর্শনী করছি।
রাজার চিঠি নাটকটি লিখেছেন মাহফুজা হিলালী। রামিজ রাজুর সঙ্গীতে নাটকটিতে কোরিওগ্রাফ করেছেন অনিকেত পাল বাবু। ঠান্ডু রায়হানের আলোক পরিকল্পনায় নাটকের পোশাক করেছেন এনাম তারা সাকী।
একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে আবির্ভূত হয়েছে নাটকের কাহিনী। ১৯৩৯ সালে শাহজাদপুরের শ্রী হরিদাস বসাকের একটি চিঠির উত্তরে চিঠি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই চিঠি এবং রবীন্দ্রসাহিত্যের প্রভাবে হরিদাস বসাকের জীবন রবীন্দ্রনাথের ‘ঠাকুরদা’ চরিত্রের মতো হয়ে ওঠে। ঘটনাপ্রবাহে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লেখায় পরিবার এবং বন্ধুদের কাছে হাসির পাত্র হয়ে ওঠেন যুবক হরিদাস। কিন্তু সবাইকে চমকে দেন রবীন্দ্রনাথ ঠিকই হরিদাসের চিঠির উত্তর দেন। এ সময় হরিদাস বসাককে সবাই সমীহ করতে শুরু করে। হরিদাস বসাকও সাহিত্য-সংস্কৃতির কাজে নিজেকে সঁপে দেন। এরপর দেশভাগের প্রেক্ষাপটে আসে ১৯৪৭ সাল। এ সময় অনেকেই দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যায়। কিন্তু যে ঠিকানায় রবীন্দ্রনাথ তাকে চিঠি লিখেছেন, সে ঠিকানা হরিদাস বসাক বদল করতে চান না। তাই মাতৃভূমি আঁকড়ে থাকেন হরিদাস বসাক। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতায় হরিদাস বসাকের স্বপ্নভঙ্গ হয়। পুড়িয়ে ফেলা হয় বাড়িঘর। দুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে হরিদাস সেদিন সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু চিঠিটির জন্য শিশুর মতো হাহাকার করেন। এ অবস্থায় পাকি সেনারা এসে দাঁড়ায় হরিদাস বসাকের সামনে। তার মুখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম শুনে বয়োনেট দিয়ে মারতে থাকে। এমন মর্মস্পর্শী গল্পে নির্মিত নাটক রাজার চিঠি।
নাটকটির ৩৩তম প্রদর্শনীর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন- স্মরণ সাহা, শাহানা জাহান সিদ্দিকা, বাহারুল ইসলাম, রুকুনুজ্জামান আপেল, জুলিয়েট সুপ্রিয়া সরকার, ইয়াসিন শামিম, রফিকুল ইসলাম, রিপা হালদার, পল্লব সরকার, মোঃ আকাশ মিয়া, আবেদা আক্তার তৃপ্তি, শ্রাবণ সূত্রধর, মীম, সাবেকুন নাহার মুন, বিধান বিশ্বাস, ইমন, আরিফ, ফিরোজ প্রমুখ। ।
গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ‘অবসাদ বিরুদ্ধে স্রোত’ স্লোগানে কাঁটাবনের মহড়া কক্ষে নাট্যমেলার আয়োজন করে নাট্যদল প্রাচ্যনাট। শুক্রবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় হ্যারল্ড পিন্টারের রচনা থেকে রবিউল আলম অনূদিত এবং শওকত হোসেন সজিব নির্দেশিত নাটক ‘দ্য ডাম্ব ওয়েটার’। আজ শনিবার সন্ধ্যায়ও একই স্থানে নাটকটির আরেকটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই নাট্যমেলার আগামী ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বর মঞ্চস্থ সাইফুল জার্নালের রচনা ও নির্দেশনায় ‘হানড্রেড বাই হানড্রেড’। প্রতি প্রদর্শনীতে ২০ জন দর্শকের নাটক দেখার সুযোগ থাকছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: